আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের ভুয়ো ভোটার নিয়ে সরব তৃনমুল কাউন্সিলার
বেঙ্গল মিরর, বার্নপুর, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ সম্প্রতি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের ভুয়ো ভোটারদের প্রসঙ্গ টেনে, নির্বাচন কমিশনকে কাঠগড়ায় তুলে অভিযোগ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, হরিয়ানা, দিল্লি ও মহারাষ্ট্রে বিধান সভা নির্বাচনে ভুয়ো ভোটারদের মাধ্যমে যেভাবে ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি জয়লাভ করেছে, এখানেও একই রকম কিছু করতে চায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার প্রতিটি ব্লক স্তরে ভুয়ো ভোটারদের খুঁজে বার করে ভোটার তালিকা থেকে তাদের নাম বাদ দেওয়ার জন্য সক্রিয় হওয়ার জন্য তৃণমূল নেতাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর সেই নির্দেশের পরে, তৃনমুল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি সহ সর্বস্তরের তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা তাদের নিজ নিজ এলাকার ভুয়ো ভোটারদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেছেন।




এই বিষয়ে রবিবার সকালে আসানসোল পুরনিগমের ৭৮ নং তৃণমূল কংগ্রেস কাউন্সিলর অশোক রুদ্র বার্নপুরে তার দলীয় কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলন করেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন যে, বিজেপি যেসব জায়গায় বহু ভাষাভাষী মানুষ একসাথে বাস করে সেখানে ভোটার তালিকায় কারচুপি করছে। অশোক রুদ্রর দাবি, শুধুমাত্র আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রেই এখন পর্যন্ত ৫ থেকে ৭ হাজারের মতো ভুয়ো ভোটার খুঁজে পাওয়া গেছে। এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। তিনি বলেন, যদি কেবল মাত্র আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের অবস্থা এমন হয়, তাহলে বোঝা যাবে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি কত জাল ভোটার তৈরি করেছে।
আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি সংখ্যালঘু মোর্চা নং ২ র সভানেত্রী নাজনিন শবনমের দুটি ভোটার আইডি কার্ড আছে। তিনি বলেন, নাজনিন শবনমের একটি ভোটার কার্ড নম্বর ৭৬ পার্ট ২৭৫ এবং অন্যটি ভোটার কার্ড নম্বর ৭৮, ওয়ার্ড নম্বর ২২৫-এ। অশোক রুদ্র বলেন, এর থেকে বোঝা যায় যে বিজেপি কিভাবে ভোটার তালিকায় কারচুপি করে আসন্ন বাংলা বিধানসভা নির্বাচনে জিততে চায়। নির্বাচন কমিশনের উচিত এই বিষয়টি বিবেচনা করা। তিনি বলেন, আমরা আরো অবাক হয়েছি যে নির্বাচন কমিশন বলেছে ভুয়ো ভোটারদের নাম কিভাবে তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে তা তারা জানে না। কিন্তু যখন এই বিষয়টি তৃণমূল কংগ্রেস জাতীয় নির্বাচন কমিশনের নজরে আনা হয়, তখন তারা বলেছে যে তারা ৩ মাসের মধ্যে এটি ঠিক করে দেবে। তিনি বলেন, যদি জাতীয় নির্বাচন কমিশন এই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত না থাকে, তাহলে ৩ মাসের মধ্যে পরিস্থিতি কি ভাবে তা ঠিক করবে? ভোটার তালিকা তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত কিছু ব্লক স্তরের অফিসার বিজেপির দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছেন ও তারা এইভাবে ভোটার তালিকায় কারচুপি করছেন। শাসক দলের কাউন্সিলর আরো বলেন , আমি সংবাদ মাধ্যমের সামনে যে ভোটার তালিকার যে রেকর্ডটি তুলে ধরলাম তা হল গত জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রকাশিত শেষ ভোটার তালিকা। তিনি বলেন, আমি পশ্চিম বর্ধমান জেলার দলের সভাপতিকে এই অসঙ্গতি সম্পর্কে অবহিত করবো এবং এই বিষয়ে দলের তরফে অবশ্যই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শাসক দলের কাউন্সিলারের অভিযোগ প্রসঙ্গে বিজেপির সংখ্যালঘু সেলের সভানেত্রী নাজনিন শবনম বলেন, ভোটার তালিকায় আমার নাম কোথায় আছে তা দেখা আমার কাজ নয়। এটি নির্বাচন কমিশনের কাজ পরীক্ষা করা। আমি কিভাবে জানবো যে ভোটার তালিকায় আমার নাম এখনও কোথায় রয়েছে ? তার দবি, বিয়ের পরে জায়গা পরিবর্তনের কারণে তিনি ভোটার তালিকায় তার নাম অনুসারে সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছিলেন। এরপর, তার নাম এখনও কোন জায়গায় রয়ে গেছে সে সম্পর্কে তার কোনও খবর নেই। তিনি অভিযোগ করেন যে, আমি সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে এসেছি।,
তাই তাকে ইচ্ছাকৃতভাবে টার্গেট করা হচ্ছে। নাজনীন বলেন, এখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেরা বুঝতে পেরেছে যে কাকে ভোট দিতে হবে। এই কারণেই আমাকে টার্গেট করা হচ্ছে। কারণ আমি আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্র সংখ্যালঘু মোর্চার ২ র সভানেত্রী। তিনি বলেন, এইসব করে কোন লাভ হবে না। ২০২৬ সালে তৃনমুল কংগ্রেসের পতন নিশ্চিত।
উল্লেখ্য, আসানসোল দক্ষিণ বিধান সভার বিধায়ক হলেন, বিজেপির অগ্নিমিত্রা পাল। শাসক দলের কাউন্সিলারের অভিযোগ নিয়ে, বিজেপির কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় নি।