আসানসোল দোলে মাতোয়ারা, শোভাযাত্রা, রঙ খেলায় জমজমাট সারাদিন
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ সারা দেশের সাথে পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল শহর তথা গোটা শিল্পাঞ্চল শুক্রবার দোলের দিন রঙ খেলায় মাতলে। দোল উৎসবে মাতলে বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল, মন্ত্রী পত্নী সুদেষ্ণা ঘটক, শিল্পপতি সমাজসেবী শচীন রায় থেকে সববয়সী মানুষেরা।




অন্যদিকে, এদিন দোলের সকালে আসানসোল গ্রামের বসন্ত উৎসবে শান্তিনিকেতনের ছোঁয়া পাওয়া গেলো। দোলযাত্রা উপলক্ষে হওয়া বসন্ত উৎসবে আসানসোল গ্রামের বসন্ত উৎসব কমিটির শোভাযাত্রা আসানসোল গ্রামের বিভিন্ন রাস্তা নাচ ও গানের মাধ্যমে পরিক্রমা করে এসবি গরাই রোডের রামসায়ের ময়দানে এসে শেষ হয়।

আসানসোল গ্রামের বাসিন্দা বিশিষ্ট শিল্পপতি শচীন রায় বলেন, ১৯ বছর আগে আসানসোলে গ্রামে বসন্ত উৎসবের সূচনা হয়েছিল। এখন তা ধীরে ধীরে আরো জনপ্রিয়তা পেয়েছে । বসন্ত উৎসব কমিটির সভাপতি মিতা রায় ও সম্পাদিকা ঝুম্পা রায় বলেন, আসানসোল গ্রামের বাসিন্দাদের সহযোগিতায় হওয়া এই বসন্ত উৎসবে শান্তিনিকেতনের ছোঁয়া আনা হয়েছে। গ্রামের বিভিন্ন রাস্তায় নাচ ও গানের মাধ্যমে বসন্ত উৎসব পালন করা হয়। রামসায়ের ময়দানের মুল অনুষ্ঠানে সবাই অংশ নেন। ছিলেন কাউন্সিলার উদয় রায়।
দোল দিন আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজনেরা বাহাবাসকী উৎসব পালন করে থাকেন। আসানসোলের হিরাপুর থানার রাঙ্গাপাড়ার আদিবাসী গ্রামের বাসিন্দা নিখিল সোরেন বলেন, দোলের দিন সবাই রং খেলেন। কিন্তু বাজারে যেসব রং পাওয়া যায় তাতে কেমিক্যাল মিশিয়ে দেওয়া হয়। তাই আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজনেরা বৃহস্পতিবার পলাশ ফুল এনে সারা রাত ভিজিয়ে রাখার পর সেই জল দিয়ে রং খেলা হয়। সেই জন্য তাকে বাহাবাসকী বলা হয়। ঘটিতে করে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে জল দিয়ে রং খেলা হয়। পুরাতন যুগে এইদিন আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষেরা জঙ্গলে গাছের শেকড়, লতাপাতা সংগ্রহ করতে যেতেন।
এদিন রং খেলার পাশে নাচগান ও খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা থাকে বলে জানান নিখিল সোরেন।
দোলের সকালে আসানসোলের মহিলা উদ্যোগের তরফে হলো বসন্ত উৎসব। সকালে আসানসোল রবীন্দ্রভবন প্রাঙ্গণে আসানসোল মহিলা উদ্যোগে ব্যাবস্থাপনায় বসন্ত উৎসব পালনের সূচনা হয়। ছিলেন রাজ্যের আইন ও শ্রম মন্ত্রী মলয় ঘটকের স্ত্রী সুদেষ্ণা ঘটক। মহিলা উদ্যোগের সদস্যদের নিয়ে রবীন্দ্র ভবন থেকে প্রভাতফেরী বেরোয়। তা আপকার গার্ডেন সহ বিভিন্ন রাস্তা পরিক্রমা করে নাচ ও গানের মাধ্যমে।
এদিকে, ক্লাসিকাল ডান্সএ্যাকাডেমির পক্ষ থেকে নাচের মাধ্যমে দোল উৎসব পালন করা হয়। দোল পূর্ণিমার দিন আসানসোলের ডান্স এ্যাকাডেমির পক্ষ থেকে এ্যাকাডেমির কর্ণধার সাধনা রায়ের নেতৃত্বে এ্যাকাডেমির শিক্ষার্থীরা নাচের মাধ্যমে প্রভাতফেরী বার করেন আসানসোল রবীন্দ্র ভবন প্রাঙ্গণ থেকে। রবীন্দ্র ভবনের সামনে নৃত্য পরিবেশন করা হয়। পিয়ালী মুখোপাধ্যায় নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রত্যেক বছর বসন্ত কালের সূচনায় শ্রীকৃষ্ণর দোলযাত্রা উপলক্ষে নাচ ও গাণের মাধ্যমে এই উৎসব পালন করা হয়।
এর পাশাপাশি, জামুড়িয়া মোনালিসা ডান্স অ্যাকাডেমির পক্ষ থেকে কচিকাঁচাদের নিয়ে দোল উৎসব আয়োজন করা হয়েছিল বৃহস্পতিবার । প্রথমে জামুড়িয়া কুয়ো মোড় থেকে একটি বার্নাঢ্য শোভাযাত্রা বেরিয়ে জামুড়িয়া সিনেমা মোড় হয়ে জামুড়িয়া বাজার পরিক্রমা করে থানা মোড় গিয়ে শেষ হয়। সেখানে কচিকাঁচাদের নিয়ে অগ্নি উৎসরের আয়োজন করা হয়।
ডান্স অ্যাকাডেমির কর্ণধার মোনালিসা দত্ত বলেন, প্রতি বছরের মতো এই বছরও দোল উৎসব পালন করা হয়েছে।
আসানসোলের জিটি রোডের শতাব্দী পার্কে শুক্রবার সকালে দোল উপলক্ষে বসন্ত উৎসব হয়।
দোলযাত্রার দিন রং খেলতে এসে সুকৌশলে নির্বাচনী প্রচার করলেন আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভার বিজেপি বিধায়িকা অগ্নিমিত্রা পাল। আসানসোলের কল্যানপুরে দোলের দিন এক শোভাযাত্রায় অংশ নেন বিজেপি বিধায়ক। তিনি বলেন, ভারতীয় সনাতনী ধর্মের দোলযাত্রা খেলতে পথে নামলেও মানুষের মনে দোল খেলার আনন্দ নেই। পশ্চিম বাংলার বিভিন্ন জায়গায় মহিলাদের ধর্ষণ করা হচ্ছে। নারীদের নিরাপত্তা নেই। ছোটরা স্কুলে যায় দুমুঠো খাবারের জন্য। কিন্তু সেখানে ভাতের সঙ্গে টিকটিকি, আরশোলা পাওয়া যায়। শিক্ষিত ভাইবোনেরা চাকরি পেয়েও, রাস্তায় বসে। সেই চাকরি তাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে। শিক্ষিত যুবক যুবতীরা পশ্চিম বাংলা থেকে বাইরের রাজ্যে কাজের জন্য চলে যাচ্ছে। তাদের পরিবারের মনের মধ্যে আনন্দটা শেষ হয়ে গেছে। ২০২৬ সালের বিধান সভা নির্বাচনে বিজেপি পশ্চিম বাংলায় সরকার গঠন করে মহিলাদের সুরক্ষা দেবে। মিড ডে মিলে ছোট ছেলেমেয়েরা প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার পাবে। পশ্চিম বাংলায় বন্ধ সব কলকারখানা খুলে যাবে। এই রাজ্য ছেড়ে কাজের জন্য তাদেরকে অন্য রাজ্যে যেতে হবে না।