বিদেশী মদের বোতলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা, নববর্ষেই বিতর্ক, আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারী বাংলা পক্ষের
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ বাংলার নতুন বছর ১৪৩২ শুরু হলো মঙ্গলবার থেকে। এই নববর্ষ বা পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য জায়গায় সঙ্গে সকাল থেকেই আসানসোলে উৎসবের একটা আমেজ ছিল। মানুষেরা সোশ্যাল মিডিয়া মতো ডিজিটাল ব্যবস্থা ও বিভিন্ন মাধ্যমের পাশাপাশি এবং ব্যক্তিগতভাবে একে অপরকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। দোকানে হালখাতা করতে যাওয়ার একটা পুরনো রীতি এই নববর্ষের দিন হয়। বাঙালিরা এদিন নানা ধরনের ও মিষ্টি খান এবং খাইয়ে এই নতুন বছর শুরুর এই উৎসবকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলেন ।




তবে, এই বাংলা বছর শুরুর এই উৎসবের মাঝে একটি বিতর্ক তৈরি হয়েছে। যা, বলতে গেলে বাঙালি সমাজকে নাড়িয়ে দিয়েছে।একটি নামী কোম্পানির মদের বোতলে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত কবিতা ” দুই পাখি” র কিছু পঙক্তি ছাপা হয়েছে। এই বোতল কেবল মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এমনটা নয়। গোটা বিষয়টি আলোচনার একটা কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। কেউ কেউ কবিতার এই লাইন পড়ে কবিতার দর্শন ও এবং আবেগের অর্থকে নিজের জীবনের সঙ্গে যুক্ত করছেন। আবার কেউ কেউ এটাকে বাঙালি সংস্কৃতিকে দেওয়া একটি অনন্য উপহার বলে দাবি করেছেন।
তাদের কথায় , এই কবিতা বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি এবং সাহিত্যের সঙ্গে নতুন করে সংযোগ তৈরি করেছে। যা আমাদের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যস্ত জীবনযাত্রার কারণে কোথাও হারিয়ে গিয়েছিল। তবে, যাই হোক না কেন, এইভাবে মদের বোতলের গায়ে বিশ্ব কবির কবিতার লাইন ছাপা নিয়ে তীব্র সমালোচনাও শুরু হয়েছে।বাংলা ভাষা নিয়ে নানা স্তরে আন্দোলন করা অন্যতম সংগঠন ” বাংলা পক্ষ ” র পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদক অক্ষয় বন্দোপাধ্যায় এটাকে বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতি এবং বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাবমূর্তিকে কলঙ্কিত করার মতো কাজ বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমরা মনে করি ও দাবি করি বাংলায় প্রতিটি দেয়াল, দোকান এবং গাড়িতে বাংলা ভাষার ব্যবহার বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। কিন্তু এর মানে এই নয় যে মদের কোম্পানিগুলি বাংলা ও বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অপব্যবহার করবে। কবি ও তার সৃষ্টি কবিতার লাইনকে এই ভাবে ব্যবহার করবে। তিনি এই মদ প্রস্তুতকারী কোম্পানিকে সতর্ক করে বলেন, যদি বোতল থেকে কবিতার পঙক্তি সরাতে হবে। আর তা যদি সরানো না হয়, তাহলে সংগঠন রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করবে। প্রয়োজন হলে কোম্পানির সদর দপ্তরে গিয়ে বিক্ষোভ দেখানো ও ডেপুটেশন দেওয়া হবে ।
প্রসঙ্গতঃ, বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি মর্মস্পর্শী কবিতা হলো “দুই পাখি’। এখানে দুটি পাখির গল্প – একটি খাঁচায় বন্দী এবং অপরটি জঙ্গলে মুক্ত। কবিতায় এই দুই পাখির কথোপকথন স্বাধীনতা, বন্ধন এবং জীবনের দার্শনিক অর্থ প্রকাশ করে। সেই কবিতার লাইন এইভাবে মদের বোতলে ছাপা নিয়ে কেউ কেউ খুশি । তবে বেশিরভাগ মানুষেরা এই কাজকে অনুচিত এবং অপমানজনক বলে মনে করেছেন। তাদের মতে, বাংলা নববর্ষের মতো একটা দিনে এই ধরনের কাজ কবির সম্মানের সঙ্গে বাঙালি সমাজ ভাবনাকে হেয় করার একটা চেষ্টা। তবে এই বিতর্কের সঙ্গে একটা প্রশ্ন উঠছে যে এই ভাবনা কি কোম্পানির বিপণনের নতুন কৌশল? নাকি বাংলার সাহিত্য ও সংস্কৃতির ব্যাপারে অঞ্জতা ও সংবেদনশীলতার অভাব। যদিও, এই বিতর্ক নিয়ে ঐ মদ কোম্পানির কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় নি।