বিস্ফোরক বংশগোপাল চৌধুরী, আক্রমণে তৃণমূল ও বিজেপি
বেঙ্গল মিরর, রানিগঞ্জ ও আসানসোল, চরণ মুখার্জি ও রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়ঃ আসানসোলের প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরীকে সিপিএম বা ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) বহিষ্কার করেছে। তার বিরুদ্ধে অন্য জেলার দলের মহিলা সংগঠনের কর্মীকে অশ্লীল বার্তা পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে। সেই অশ্লীল বার্তাগুলির স্ক্রিনশট ও অডিও ভাইরাল হয়। তার পরে দলের আইসিসি প্রাথমিক তদন্তে সেই সত্যতা খুঁজে পায়। এরপরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। শনিবার রাতে সেই সিদ্ধান্তের কথা দলের রাজ্য কমিটির সম্পাদকের নামে বিঞ্জপ্তি আকারে জানানো হয়।




রবিবার রানিগঞ্জে সাংবাদিকদের বংশগোপাল চৌধুরী বলেন, দলের একটি অংশ বিজেপির সাথে যোগসাজশে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে। ফলস্বরূপ, তাকে দল থেকে বহিষ্কার করতে হয়েছে। তিনি দাবি করে বলেন যে তার বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এর আগেও, একবার কলকাতার আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে একজন মহিলাকে পাঠানো হয়েছিল এবং অভিযোগ করা হয়েছিল যে তিনি তার সাথে দুর্ব্যবহার করেছেন। কিন্তু তারপরে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব নিজেরাই সেই অভিযোগগুলি খারিজ করেছিলেন। বংশগোপাল চৌধুরী প্রশ্ন তোলেন যে তিনি যদি মিথ্যা কথা বলছিলেন, তাহলে মিথ্যা অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? তিনি এদিন স্পষ্ট করে বলেন, দলের কিছু লোক বিজেপির সাথে যোগসাজশ করছে এবং দলকে ভেতর থেকে দুর্বল করার জন্য কাজ করছে। আমি ১৯ বছর বয়স থেকেই দলের সাথে যুক্ত। একটি আদর্শ নিয়ে দলে ছিলাম। দলের নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলতাম। কিন্তু দলের কিছু লোকের অসামাজিক ও অপরাধমূলক কার্যকলাপের বিরোধিতা করার কারণে আমাকে ষড়যন্ত্র করে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই মুহুর্তে অন্য কোনও দলে যোগদানের প্রশ্নই উঠে না। পঙ্কজ রায় সরকার ( দুর্গাপুরের নেতা) যখন দল ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন, তখন থেকেই আমার সম্পর্কে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে আমি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিতে চলেছি। কিন্তু এটা হয়নি। অন্য কোনও দলে যোগদানে মোটেও আগ্রহী নই ।
তিনি বলেন, আমি যখন মন্ত্রী ছিলাম, তখন আমার সম্পর্কে বলা হয়েছিল যে তিনি অবৈধভাবে টাকা উপার্জন করেছি। ২০১১ সালে যখন বাম সরকারের অবসান হয়, তখন আমার সম্পর্কে বলা হয়েছিল যে আমার বাড়ির বাথরুমে ৫০ কোটি টাকা ছিল। কিন্তু আজ বামপন্থীদের শাসন শেষ হওয়ার ১৪ বছর হয়ে গেছে, কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। তিনি বলেন, আসানসোলের সাংসদ এবং রাজ্যের মন্ত্রী ছিলাম। তাই প্রতিটি দলের নেতা এবং বিভিন্ন কর্মীদের সাথে তার ভালো পরিচয় রয়েছে। আমি বেঙ্গল পেপার মিল এবং অন্যান্য কারখানা নিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটকের সাথেও বৈঠক করেছি। কিন্তু এর মানে এটা নয় যে আমি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিতে যাচ্ছি। এর সঙ্গে তার বিস্ফোরক মন্তব্য, এখন সিপিএম আগের মতো নেই।যা দেখে আমি দলে যোগ দিয়েছিলাম ।
তিনি অভিযোগ করেন যে দলের কিছু নেতা এখন অবৈধ কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়েছেন এবং গোপনে বিজেপির সাথে কাজ করছেন। আমি সেই নেতাদের কাজে বাধা সৃষ্টি করেছিলাম। তাই আমাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি বলেন, কলকাতার এক দলের নেতা এই জেলায় এসে ব্যবসা করছেন। সে মহিলাদের সাথে হোটেলে যান। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে গত ৬ মাস ধরে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই বিষয়গুলি প্রচার করা হয়েছে। আমাকে অপমান করার জন্য, তা করা হয়েছে। আজ সেই কারণেই আমাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন যে, আমি ল জনগণের জন্য কাজ করে যাবো। কারণ রাজনীতি আমার কাছে অর্থ উপার্জনের মাধ্যম নয়। বরং তা জনসেবার মাধ্যম।
এদিকে, বংশগোপাল চৌধুরীকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত জানার পরে স্বাভাবিক ভাবেই সিপিএমকে একযোগে আক্রমণ করেছে রাজ্য ও কেন্দ্রের দুই শাসক দল।
আসানসোল পুরনিগমের তৃণমূল কংগ্রেসের কাউন্সিলর অশোক রুদ্র বলেন, বামপন্থীদের আসল চেহারা ধীরে ধীরে সামনে আসছে। সঠিকভাবে অনুসন্ধান করলে কেবল বংশগোপাল চৌধুরীই নয়, এমন আরও অনেক ব্যক্তিকে ঐ দলে পাওয়া যাবে যারা বড় বড় কথা বলে। কিন্তু তাদের আসল চরিত্র ঠিক এইরকম। বিজেপি তৃণমূল কংগ্রেসের উপর এই ধরণের অভিযোগ করার প্রশ্নে তিনি বলেন, বিজেপি এই বিষয়ে যত কম কথা বলবে, ততই ভালো। কারণ কেবল বাংলায় নয়, সারা দেশের মানুষ বিজেপি নেতাদের চরিত্র সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত। অশোক রুদ্র বলেন, একজন নেতা যে দলেরই হোন না কেন, তার বোঝা উচিত যে তিনি সমাজে আছেন এবং তাকে দেখে অনেকেই অনুপ্রাণিত হন। এমন পরিস্থিতিতে, যদি তিনি এমন কাজ করেন, তাহলে তাকে দেখার পর যারা রাজনীতিতে আসবেন তাদের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, বিশেষ করে মহিলারা রাজনীতিতে আসার আগে নিরাপত্তাহীন বোধ করবেন, তাই নেতাদের তাদের প্রতিটি কাজের উপর অনেক নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত।
অন্যদিকে, এই প্রসঙ্গে, বিজেপির রাজ্য নেতা কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বংশ গোপাল চৌধুরী এবং সিপিএম সম্পর্কে আলোকপাত করতে গিয়ে বলেন, এই দলটা ৩৪ বছর ধরে বাংলা শাসন করেছে। কিন্তু সেই সময়ে কোনও সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না বা ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়া আজকের মতো প্রভাবশালী ছিল না। যে কারণে তারা তাদের অনেক অপকর্ম লুকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু এখন এটা হতে পারে না। আজ সবকিছুই মুহুর্তের মধ্যে প্রকাশ্যে চলে আসে। আর এই কারণেই বংশগোপাল চৌধুরী যা করেছেন তা সকলের সামনে চলে এসেছে। ৩৪ বছরে বামপন্থীদের সমস্ত অপকর্ম যদি প্রকাশ্যে আসত, তাহলে বামপন্থী নেতারা কাউকে তাদের মুখ দেখাতে পারতেন না।
এই বিজেপি নেতার দাবি , ভবিষ্যতে বংশ গোপাল চৌধুরীর মতো নেতারা তৃণমূলে যোগ দেবেন। কারণ সমস্ত চোর এবং এই ধরনের লোকেরা তৃণমূলে যোগ দেয়। তাদের একটাই জায়গা, আর তা হল তৃণমূল।