বারাবনিতে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জের যুবককে কুড়ুল মেরে খুনের অভিযোগে ধৃত দম্পতি
বেঙ্গল মিরর, বারাবনি ও আসানসোল, মনোজ শর্মা ও রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ* বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে এবার পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের বারাবনি থানা এলাকায় যুবককে খুনের অভিযোগ উঠলো। পেশায় দিনমজুর বাপি রুইদাসকে (২৯) কুড়ুল দিয়ে কুপিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠল ঐ গ্রামেরই বাসিন্দা মন্টু দাস ও তার স্ত্রী লক্ষী দাসের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পরে এই ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার বারাবনি থানার জামগ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কাপিষ্ঠা গ্রামে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।জানা গেছে, কুড়ুল দিয়ে মারার পরে মঙ্গলবার সন্ধ্যে নাগাদ মন্টু দাস ও তার স্ত্রী লক্ষী দাস বারাবনি থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। তারা থানায় পুলিশকে গোটা ঘটনার কথা জানায়। সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে আটক করে পুলিশ। গোটা বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত হওয়ার পরে মঙ্গলবার সন্ধ্যে সাড়ে ছটার পরে রক্তাক্ত অবস্থায় দাস দম্পতির বাড়িতে যায়। বাড়ির দরজার তালা খুলে পুলিশ দেখে বাপি ঘরের মধ্যে রক্তাক্ত হয়ে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে আছে। সঙ্গে সঙ্গে বাপিকে উদ্ধার করে আসানসোল জেলা হাসপাতালে পাঠায় বারাবনি থানার পুলিশ। হাসপাতালের চিকিৎসক পরীক্ষা করে বাপি রুইদাসকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপর বাপির মারা যাওয়ার খবর এসে পৌঁছায় কাপিষ্ঠ গ্রামের বাউরি পাড়ার বাপির বাড়িতে। স্বাভাবিক ভাবেই পরিবার নেমে আসে শোকের ছায়া।




বাপির পরিবারের সদস্য ও এলাকার বাসিন্দারা পাশের শিবমন্দির পাড়ায় দাস দম্পতির বাড়ির সামনে আসেন। ততক্ষণে পুলিশ দাস দম্পতির বাড়ি সিল করে দিয়েছে। বাড়ি থেকে যে কুড়ুল দিয়ে যুবককে মারা হয়েছে, পুলিশ তা বাজেয়াপ্ত করেছে। জানা গেছে, বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হবে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য। বুধবার দুপুরে আসানসোল জেলা হাসপাতালে যুবকের মৃতদেহর ময়নাতদন্ত হয়। জানা গেছে, যুবকের মাথায় গভীর ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। যা কুড়ুলের মতো ভারী কিন্তু জিনিস দিয়ে মারার জন্য হয়েছে। সেইজন্যই ঐ যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে ময়নাতদন্তের প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টের পরে পুলিশ জানতে পেরেছে। জামগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য সুভাষ কুমার মাঝি বলেন, এইভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করাটা ঠিক হয়নি। যদি কোন সমস্যা হচ্ছিলো, তাহলে ওরা পুলিশ প্রশাসনের কাছে অথবা পঞ্চায়েতের কাছে আসতে পারতো। কোন সমস্যা থাকলে সবার সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের পথ খুঁজে বার করা যেতো। কিন্তু এখন তো আর কিছু করার নেই। পুলিশ স্বামী ও স্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে।
মৃত যুবকের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়রা বলেন কি কারনে খুন করা হয়েছে আমরা তা জানি না। বাপি দিন মজুরের কাজ করতো। দুপুরে একবার তার সঙ্গে স্ত্রীর কথা হয়েছিলো। তখন ও বলেছিলো, একটু পরে আসছি। তারপরে আর তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যায় নি। তারা আরো বলেন, সন্ধ্যের পরে ঘটনার কথা জানতে পারি। বাপি যে ওদের বাড়িতে যেতো, তা আমরা জানতাম না। এখন ওদের পরিবারের কি হবে? তার স্ত্রী ছাড়াও দুই সন্তান আছে। অন্যদিকে, এই ঘটনার মুল অভিযুক্ত দাস দম্পতিরও তিন ছেলেমেয়ে আছে। এদিকে এই প্রসঙ্গে পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, মন্টু দাস ও তার স্ত্রী লক্ষী দাস ঐ যুবককে কুড়ুল দিয়ে মারার কথা স্বীকার করেছে। লক্ষী দাসের সঙ্গে তিন থেকে চার বছর ধরে বাপির বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিলো। পরে লক্ষীর স্বামী তা জানতে পারে। বাপিকে বাড়িতে আসতে মানা করা হয়েছিলো। কিন্তু বাপি তা না শুনে লক্ষীকে উত্যক্ত করতো। সেই কারণে বিরক্ত হয়েই মঙ্গলবার দুপুরে বাপি আবার বাড়িতে এলে, তারা এই ঘটনা ঘটায়।
দুপুর দুটো থেকে আড়াইটের মধ্যে এই ঘটনা ঘটায় তারা। এরপর তারা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। পরে সন্ধ্যে ছটা নাগাদ থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করে। তিনি আরো বলেন, বুধবার সকালে জেরা করার পরে দুজনকে গ্রেফতার করা হয় । এই ঘটনায় একটি খুনের মামলা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার তাদেরকে আসানসোল আদালতে পেশ করা হবে।