ASANSOL

রানিগঞ্জে বেপরোয়া বালি তোলার অভিযোগ, দামোদর নদীর গতিপথ রুদ্ধ, শ্মশানেও সংকট, মাফিয়াদের হাত থেকে বাঁচানোর আর্জি.

বেঙ্গল মিরর, রানিগঞ্জ, রাজা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত : মাফিয়াদের বিরুদ্ধে বেপরোয়া ভাবে বালি তোলার অভিযোগ। এরফলে দামোদর নদীর গতিপথ রুদ্ধ ও পরিবর্তন হয়েছে। সংকটে পড়েছে শ্মশানও। এমনই ছবি দেখা মিলবে পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের রানিগঞ্জের বল্লভপুরে। এখানে দামোদর নদীর স্বাভাবিক কোন গতিপথ নেই। এখন একটি বাঁধ তৈরি করা হয়েছে, যাতে নদীর গতিপথ রুদ্ধ ও পরিবর্তন হয়ে গেছে। সেখানে আসা মানুষদেরকে দামোদরে পুকুরের মতো হওয়া গর্তে স্নান করতে বাধ্য হতে হচ্ছে। হিন্দুদের বিশ্বাসের সাথে ছিনিমিনি করা হচ্ছে। এমনকি শবদাহ করার পরে সেই অস্থি বা ছাইও এখন গর্তে ডুবিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

প্রসঙ্গতঃ, এই জেলার রানিগঞ্জ শহর দামোদর নদীর তীরে অবস্থিত। সেখানকার প্রধান ঘাটটি হল বল্লভপুর ঘাট । রানিগঞ্জ এবং আশেপাশের এলাকার মানুষেরা বিভিন্ন উৎসবে দামোদর নদীতে স্নান করেন। যার জন্য তাদের রানিগঞ্জের বল্লভপুর ঘাটে যেতে হয় । কারণ এটি এই এলাকার সবচেয়ে বড় নদী ঘাট। যা মেজিয়া ঘাট নামে পরিচিত। জানুয়ারি মাস পর্যন্ত এখানে নদীর নিরবচ্ছিন্ন গতিপথ অব্যাহত ছিল। কিন্তু এখন বালি মাফিয়ারা নদীর উপর বাঁধ তৈরি করার কারণে নদীর সেই গতিপথ বা প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। নদী এখন ওপারে বাঁকুড়া জেলার মেজিয়ায় প্রবাহিত হচ্ছে।

এই বল্লভপুর এলাকায় বড় শ্মশান হওয়ায়, দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এখানে মৃতদেহ দাহ করার জন্য আসেন। পরিস্থিতি এমন জায়গায় গেছে বালি মাফিয়ারা এখানে হিন্দুদের বিশ্বাস নিয়ে খেলছে। ঐতিহ্য অনুসারে, হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নদীর তীরে শ্মশানে মৃতদেহ দাহ করেন। মৃতদেহ দাহ করার পরে, তার অস্থি বা ছাই নদীর স্রোতে ফেলা হয়। এরপর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় আসা সকলেই নদীতে স্নান করেন । এখন যদি রানিগঞ্জ এলাকার বাসিন্দারা দামোদর নদীতে স্নান করতে চান অথবা বল্লভপুর শ্মশানে দাহের পর ছাই বিসর্জন দিতে চান, তাহলে তাদেরকে নদী পার হয়ে বাঁকুড়া জেলার মেজিয়ায় যেতে হবে।

কারণ, অভিযোগ বালি মাফিয়ারা রানিগঞ্জ এলাকার দামোদর নদীকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিয়েছে। রানিগঞ্জের বল্লভপুর শ্মশানে নদীর স্রোত আর নেই। পরিস্থিতি এতোটাই খারাপ যে শবদাহ করার পরে মানুষদেরকে অস্থি বা ছাই দামোদরের বুকে গর্তের মতো পুকুরে ডুবিয়ে দিতে বাধ্য হতে হচ্ছে । একইভাবে গর্তের মতো পুকুরে স্নানও করতে হচ্ছে।

এছাড়াও, বল্লভপুর ঘাটে একটি শ্মশান কালী মন্দির রয়েছে । কাছাকাছি একটি মথুরা চণ্ডী মন্দির রয়েছে। যেখানে এলাকার মানুষ প্রায়শই পূজার জন্য আসেন । যদি ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে এই মন্দিরে পৌঁছাতে হয়, তাহলে ভক্তদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে । কারণ এই রাস্তাটি সম্পূর্ণ জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে । এই রাস্তাটি এখন আর হাঁটাচলার জন্য উপযুক্ত নয়। প্রতিদিন ১৮টি চাকা পর্যন্ত শয়ে শয়ে ট্রাককে বালি অতিরিক্ত বা ওভারলোড বালি বোঝাই করে এই রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ট্রাক বালিতে অতিরিক্ত বোঝাই করা থাকলেও, পুলিশ প্রশাসন তা লক্ষ্য করলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। যেখানে রানিগঞ্জ থানার বল্লভপুর ফাঁড়ি কাছাকাছি রয়েছে। অভিযোগ, বালি মাফিয়ারা টাকা দিয়ে এই কারবার চালাচ্ছে। সব স্তরে টাকা দেওয়া হচ্ছে । এতটাই অপব্যবহার হচ্ছে যে সবাই নদী ধ্বংস হতে দেখছেন, কিন্তু কেউ মুখ খুলছে না । সবার কাছে মাসে মাসে টাকা চলে যাচ্ছে।

রানিগঞ্জের ঐ এলাকার বাসিন্দারা বলেন, এইভাবে বালি তোলার জন্য আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা রক্ষা করা মুশকিল হয়ে পড়েছে। মাফিয়াদের দৌরাত্বে আমাদের অবস্থা বেহাল। প্রশাসনের কাছে আমাদের আর্জি, এই পরিস্থিতি থেকে আমাদেরকে বাঁচান।এই বিষয়ে বল্লভপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান সিদান মণ্ডল বলেন, বল্লভপুর ঘাটের কাছে বালি উত্তোলনের জন্য একটি কোম্পানি সরকারি টেন্ডার পেয়েছে। নদী থেকে বালি উত্তোলনে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু যেভাবে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে, তাতে ওই এলাকার মানুষ অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এখানে নদীর গতিপথ অদৃশ্য হয়ে গেছে। রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানে একটি মন্দির আছে, মানুষ প্রতিদিন আসা-যাওয়া করেন।

পানীয়জলের সমস্যা হয়েছে। মানুষ নদীতে স্নান করতে পারছেন না। এলাকায় শ্মশান রয়েছে। সেখানে শবদাহ করা হয়। দেহের অস্থি নদীতে ভাসানো যাচ্ছে না।তিনি আরো বলেন, আমরা এই সমস্ত বিষয়গুলি ব্লক আধিকারিক বা বিডিও ও উচ্চপদস্থ পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিকদেরকেও জানিয়েছি। তাদের কাছে একটি চিঠি লিখেছি। কিন্তু তারা কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ঠিক করেছি, এবার গোটা বিষয়টি নিয়ে আরো উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সাথে কথা বলবো এবং এই বিষয়ে প্রতিবাদ করবো। এদিকে এই বিষয়ে আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভার বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, তিরাট থেকে বল্লভপুর পর্যন্ত দামোদর নদী থেকে বালি চুরি করা হচ্ছে। নদীর মাঝখানে বড় বড় মেশিন নামানো হয়েছে। গর্ত খুঁড়ে বালি তোলা হচ্ছে। নদীর উপর বাঁধ নির্মাণের ফলে রানিগঞ্জ এলাকায় নদীর গতিপথ বন্ধ হয়ে গেছে। যা এলাকায় তীব্র জলের সমস্যা তৈরি করেছে। মানুষ পানীয়জলের জন্য হাহাকার করছেন। অতিরিক্ত বালি বোঝাই ট্রাক চলাচল করছে। যার ফলে গ্রামের রাস্তাঘাট ধ্বংস হয়ে গেছে। এই বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এখন আমরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবো ও রাস্তায় নামবো । আমি আমার এলাকায় কোনও অবৈধ কার্যকলাপ হতে দেব না। বৃহত্তর আন্দোলন করারও হুঁশিয়ারি বিজেপি বিধায়ক দিয়েছেন। তবে পুলিশ প্রশাসনের তরফে এই বিষয়ে কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় নি।

News Editor

Mr. Chandan | Senior News Editor Profile Mr. Chandan is a highly respected and seasoned Senior News Editor who brings over two decades (20+ years) of distinguished experience in the print media industry to the Bengal Mirror team. His extensive expertise is instrumental in upholding our commitment to quality, accuracy, and the #ThinkPositive journalistic standard.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *