আসানসোলের ব্যস্ততম রাস্তাকে দখলদার মুক্ত করতে উদ্যোগী আসানসোল পুরনিগম, পরিকল্পনা ও সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন কংগ্রেসের
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ আসানসোল পুরনিগমের পক্ষ থেকে আসানসোল শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম রাস্তা হটন রোডকে যানজটমুক্ত করার জন্য একটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গোটা পরিকল্পনাটি দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়িত করার জন্য সোমবার আসানসোল পুরনিগমের চেয়ারম্যান অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় , ডেপুটি মেয়র অভিজিৎ ঘটক, বোরো চেয়ারম্যান রাজেশ তিওয়ারি ও পুরনিগমের আধিকারিকরা হটন রোডে আসেন।




এই প্রসঙ্গে অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়, হটন রোড শহরের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই রাস্তা দিয়ে আসানসোল জেলা হাসপাতালে যাওয়া যায়। এই রাস্তা দিয়ে রহমতনগর, বার্নপুর, মহিশীলা কলোনি, বিসি কলেজ ইত্যাদি এলাকায় যাওয়া যায়। এমন পরিস্থিতিতে, যদি এই রাস্তায় যানজট থাকে, তাহলে মানুষকে চরম অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। এই কারণে, আসানসোল পুরনিগম সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে এই রাস্তার দুপাশের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করা হবে। তিনি আরো বলেন, বর্ষাকালে এই এলাকায় যাতে জল জমে না থাকে তার জন্য একটি ড্রেন তৈরি করা হচ্ছে। তবে অবৈধ দখলের কারণে সেই ড্রেন নির্মাণও সম্ভব হচ্ছে না। এই সমস্ত বিষয় মাথায় রেখে, পুরনিগম কতৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে মঙ্গলবার মেয়র বিধান উপাধ্যায়, ডেপুটি মেয়র অভিজিৎ ঘটক ও ওয়াসিম উল হক, বোরো চেয়ারম্যান রাজেশ তিওয়ারি এবং এই এলাকার কাউন্সিলররা হটন রোড পরিদর্শনে যাবেন। তারা অবৈধভাবে দোকান করা দোকানদারদের বৃহস্পতিবারের মধ্যে তাদের দোকান সরিয়ে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করবেন। তিনি বলেন, পুর কতৃপক্ষ এখানে ব্যবসা করা দোকানদারদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করবে। এর জন্য আসানসোল পুরনিগমে একটি বৈঠকও করা হবে। তিনি বলেন, হটন রোড মোড় সংলগ্ন গীর্জার কাছে একটি টোটো স্ট্যান্ড তৈরি করা হবে। যেখানে টোটো থাকবে, হটন রোডের মোড়ে দাঁড়িয়ে না থেকে।
এই বিষয়ে ডেপুটি মেয়র অভিজিৎ ঘটক বলেন, কাউকে কোনও ক্ষতির মুখে পড়তে দেওয়া হবে না। তবে আসানসোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা হলো হটন রোড। এই রাস্তা যানজট মুক্ত করাও জরুরি। এই রাস্তায় অবৈধ দখলের কারণে যানজট তৈরি হয়। যার ফলে মানুষকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাই এই উদ্যোগ নিতে হচ্ছে যাতে এই এলাকা যানজট থেকে মুক্তি পায়। তিনি আরো বলেন, জল নিকাশি ব্যবস্থা আরও উন্নত করার জন্য একটি ড্রেনও তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু অবৈধ দখলের কারণে সেই ড্রেনটির নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই এখন আসানসোল পুরনিগম রাস্তার দুপাশে অবৈধভাবে বসে থাকা দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলবে। তাদেরকে সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হবে। ডেপুটি মেয়র বলেন, তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থাও করবে যাতে কারও কর্মসংস্থানের উপর কোনও বিরূপ প্রভাব না পড়ে।
বোরো চেয়ারম্যান রাজেশ তিওয়ারি এই প্রসঙ্গে বলেন, হটন রোড এই শহরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। এটি জিটি রোড থেকে এসবি গড়াই রোড পর্যন্ত একটি সংযোগকারী রাস্তা। তবে এই রাস্তায় সবসময় এত বেশি যানজট থাকে যে মানুষদেরকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। অবৈধ দখলদার এবং বিপুল সংখ্যায় টোটোর কারণে এই সমস্যা হয়। এই কারণেই আসানসোল পুরনিগম কতৃপক্ষকে এই উদ্যোগ নিতে হচ্ছে।
তবে, আসানসোল পুরনিগমের এই পরিকল্পনা ও উদ্যোগকে কটাক্ষ করেছে বিরোধী দল কংগ্রেস। এই বিষয়ে কংগ্রেস নেতা শাহ আলম বলেন, পুরনিগম এর আগেও এই ধরণের কথা বলেছিল। দাবি করা হয়েছিল যে শহরের বিভিন্ন রাস্তা যানজট মুক্ত করা হবে। কিন্তু কোন কিছুই করা হয়নি। তিনি আরো বলেন, পুরনিগমের মেয়র ও চেয়ারম্যানেরা হটন রোড থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদের কথা বলেন। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় কার্যালয় এই হটন রোডে রাস্তার পাশে অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। যদি সত্যি অবৈধ দখলদার অপসারণ করতে হয়, তাহলে তা তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় কার্যালয় থেকে শুরু করা উচিত। তিনি বলেন, আসানসোলের উন্নয়নের জন্য কংগ্রেস সর্বদা পুরনিগমের সাথে রয়েছে। তবে তিনি এই প্রশ্নও তোলেন যে, এর আগে জিটি রোডের ভগৎ সিং মোড থেকে গীর্জা মোড পর্যন্ত দোকানগুলি সরিয়ে নেওয়া হয়েছিলো। তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তাদের জন্য কিছুই করা হয়নি। শাহ আলম স্পষ্টভাবে বলেন যে, কংগ্রেস উন্নয়নের বিরুদ্ধে নয়। তবে তিনি চান দরিদ্রদের প্রতি কোনও অবিচার না করা হোক। একই সাথে শাহ আলম প্রশ্নও তোলেন যে, যেসব দোকানদার ফুটপাতে দোকান করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তাদের অপসারণের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু যারা নিজেদের দোকানের সীমানা ছাড়িয়ে স্থায়ীভাবে রাস্ত দখল করছেন তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না?