ASANSOL

২৪ ঘন্টার মধ্যেই মত বদল, দলের জেলা সভাপতির কাজে আস্থা দাসুর

নেই কোন গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব, আক্রমণ বিজেপিকে

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ* তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সম্পাদক তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম বিশ্বস্ত ভি শিবদাসন ওরফে দাসু তার ফেসবুক পেজে লাইভে এসে সোমবার পশ্চিম বর্ধমান জেলায় দলের এক নেতার কাজ নিয়ে বেশ কিছু মন্তব্য করেছিলেন। সরাসরি কারোর নাম না করলেও, তার বক্তব্যে বোঝা যাচ্ছিলো যে তিনি পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর উপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন। দাসু হয়তো কারোর নাম নেননি। কিন্তু তার ঐসব কথায় রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছিলো যে পশ্চিম বর্ধমান জেলায় তৃণমূল কংগ্রেসের ভেতরে সবকিছু ঠিকঠাক নেই। রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায় শাসক দলের অন্দরে। সোশাল মিডিয়ায় দাসুর বিরুদ্ধে একাধিক তৃনমুল কংগ্রেসের কর্মীরা বিরুপ মন্তব্য করতে শুরু করেন।

মঙ্গলবার দুপুরে ভি শিবদাসন ওরফে দাসু জিটি রোডের আসানসোল বাজারে তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় কার্যালয়ে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি সোমবারে তার ফেসবুক লাইভ করা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের ভেতরে যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের খবর বেরিয়ে আসছে তা স্পষ্ট করেন। তিনি বলেন, যখন কোনও মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন না, তখন থেকেই আমি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে ছিলাম। বামপন্থীরা বাংলা যখন শাসনে ছিলো ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বামপন্থীদের অত্যাচারের মুখোমুখি হচ্ছিলেন, সেই সময় থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে ছিলাম। ভবিষ্যতেও তিনি আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেসের সাথে থাকবো।

তিনি বলেন, সোমবার সোশ্যাল মিডিয়ায় আমি যাই বলেছিলাম না কেন, তা আমার উদ্দেশ্য ছিল না যে জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর করা। তিনি বলেন, নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বয়স এবং রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় আমার চেয়ে ছোট। কিন্তু যেহেতু তিনি জেলা সভাপতি, তাই দল তার নেতৃত্বেই চলবে। দাসু বলেন, নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী দলের জেলা সভাপতি হতে সক্ষম। তার সেই ক্ষমতা আছে। তিনি তৃণমূল স্তরেও অনেক রাজনীতি করেছেন। বামপন্থীরা যখন এখানে শাসন করত, তখন থেকেই তিনি দলের সাথে আছেন। বামপন্থীদের শাসনকালে যখন নরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তীর উপর আক্রমণ করা হয়েছিল, তখন আমি খবর পেয়ে রাত দুটোতেও তাঁকে সাহায্য করতে যেতাম। কারণ নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তৃণমূলের একজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নেতা।

তিনি দলের জন্য অনেক সংগ্রামও করেছেন। দাসু বলেন, যখন আমি দলের জেলা সভাপতি ছিলাম , তখন নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীকে ব্লক সভাপতি হিসেবে নিয়োগপত্র দিয়েছিলাম। তাই আমি কখনও এমন কিছু করবো না যাতে নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কোনও সমস্যা হয়। তবে তৃণমূলের একজন সিনিয়র নেতা হিসেবে, যদি আমি মনে করি যে কোথাও উন্নতির সুযোগ আছে বা কিছু ঠিক মতো হচ্ছে না, তাহলে অবশ্যই দল এবং দলের সভাপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করবো। তাই আমরা বক্তব্যকে দলের অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয়। তিনি সংবাদমাধ্যমের একাংশকে পরামর্শ দেন যে, এখানে কোনও অভ্যন্তরীণ দলাদলি নেই। তাই অপ্রয়োজনীয় উত্তেজনা তৈরির জন্য এই ধরনের খবর প্রচার না করার জন্য।

তার দাবি, জেলায় দল ঐক্যবদ্ধ এবং ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই জেলায় ৯টি আসনই তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে যাবে। তিনি এদিন বিরোধী দল বিজেপির সমালোচনা করে বলেন, পশ্চিম বর্ধমান জেলায় তৃণমূল কংগ্রেস ঐক্যবদ্ধ নয়, এই ভেবে বিজেপি নেতাদের খুশি হওয়ার কোনও কারণ নেই। তিনি বলেন, এই জেলায় দল সম্পূর্ণ ঐক্যবদ্ধ এবং ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দল ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন লড়বে এবং ৯টি আসনেই দলের জয় নিশ্চিত হবে। তার আরো দাবি, সব দলেই মতপার্থক্য আছে। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসে কোনও মতপার্থক্য নেই। গোটা রাজ্যের পাশাপাশি এই জেলায়ও বিজেপিতে এমন অনেক নেতা আছেন যারা কেবল কিছু পাওয়ার জন্য বিজেপির সাথে যুক্ত। বিজেপির আদর্শের প্রতি তাদের কোনও আকর্ষণ নেই। তারা ভুয়ো বিজেপি সদস্য। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো ক্ষমতার আশেপাশে থাকা। ঐসব নেতারা মনে করে যে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে, বিজেপি বাংলায় নির্বাচন জিততে চলেছে। তাই তারা প্রচুর হৈচৈ শুরু করছে। কিন্তু এগুলো সবই মুঙ্গেরিলালের হাসিন স্বপ্ন। যা কখনই পূরণ হবে না।

এই প্রসঙ্গে দাসু আসানসোল দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল ও আসানসোল পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র জিতেন্দ্র তেওয়ারি সহ একাধিক বিজেপি নেতাকে আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বা বিভাজনের রাজনীতি বাংলায় কখনও সফল হয় না। এখানে মানুষ অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। তারা কখনও বিজেপির উদ্দেশ্য পূরণ হতে দেবে না। তিনি স্পষ্টভাবে আবারও বলেন যে পশ্চিম বর্ধমান জেলায় দলে কোনও দলাদলি নেই। দল ঐক্যবদ্ধ এবং আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে, দল ৯টি আসনই জিতবে।তবে, সোমবারের ফেসবুক লাইভ করা, পরে তা ডিলিট করা ও এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে করা কি, দলের রাজ্য নেতৃত্বর চাপে? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তর তিনি দেননি। তিনি বলেন, আমার মন্তব্য করা নিয়ে যদি, রাজ্য নেতৃত্ব জবাবদিহি চায়, তাহলে তাদেরকে দেবো। রাজ্য নেতৃত্ব কি তার কাছ থেকে কোন জবাব চেয়েছে? এনিয়েও, তিনি কিছু বলেন নি। প্রসঙ্গতঃ, সোমবার দাসুর ফেসবুক লাইভের বক্তব্যকে সমর্থন করেছিলেন আসানসোল পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তেওয়ারি। পাশাপাশি, তিনি দাসুর সমালোচনাও করছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *