অবৈধভাবে কয়লা কাটতে গিয়ে বিষাক্ত গ্যাসের শিকার হয়ে মৃত দুই
বেঙ্গল মিরর, চরণ মুখার্জী, রানীগঞ্জ : মাত্র চারশ টাকার মজুরি পাওয়ার বিনিময়ে, অবৈধভাবে কয়লা কাটতে গিয়ে বিষ গ্যাসের শিকার হয়ে অবৈধ কয়লা খনির ভেতর দুই ব্যক্তি কয়লা খনিতে গভীর গহবরে মারা যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তে চাঞ্চল্য ছড়ালো জামুড়িয়ার নর্থ সিয়ারসোল কোলিয়ারী সংলগ্ন আমবাগান এলাকায়। ঘটনা প্রসঙ্গে পরিবার সূত্রে জানা যায় জামুড়িয়ার হিজলগোড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বারুল গ্রামের বাসিন্দা চার ব্যক্তি এই আমবাগান এলাকায় শুক্রবার বিকেলে ঠিকা শ্রমিক হিসেবে অবৈধভাবে কয়লা কাটতে আসে।




পরে রাত্রি বারোটা নাগাদ 4 শ্রমিকের দুই জন কয়লা খনির গভীর গহবরে প্রায় পঞ্চাশ ফুট নিচে নেমে পড়ে বছর ৪২ এর রবি কর্মকার ও বছর ত্রিশের ওই একই এলাকারই বাসিন্দা সঞ্জিত বাউরী। আর সে সময় উপরে থাকা তার দুই সহযোগী লক্ষ্য করে ওই দুই ব্যক্তি মারণ গ্যাসের শিকার হয়েছে। বিষয়টি লক্ষ্য করে তারা ঘটনাস্থল থেকে কোনক্রমে দ্রুত এলাকা ছেড়ে নিজেদের গ্রামের বাসিন্দাদের ও আক্রান্তদের পরিবারের সদস্যদের এ বিষয়ে খবর দিলে তারা রাতে থেকেই ঘটনাস্থলে এসে ওই দুই ব্যক্তিকে উদ্ধারের দাবিতে কয়লা খনি মুখেই দাঁড়িয়ে থেকে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে।
এই ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে হাজির হয় জামুড়িয়া থানার পুলিশ। ঘটনার খবর দেওয়া হয় দমকল বিভাগকে রানীগঞ্জের দমকল বিভাগের বিশেষ দল এসে পৌঁছয় ঘটনাস্থলে, একইভাবে ইসিএলের আধিকারিকেরাও এসে পৌঁছেছে ঘটনাস্থলে। এরপরই শনিবার সকালে প্রশাসনিক স্তরে ওই অবৈধ খনি মুখের ভেতরে একটি জ্যান্ত মুরগি দড়ির মধ্যে ঝুলিয়ে ভেতরে ঢুকানো হয়, তবে দড়ি ধরে তাকে ওপরে তুললে দেখা যায় ওই মুরগি মারা গিয়েছে। এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করে সকলেই নিশ্চিত হয় যে ওই অবৈধ খনি মুখের মধ্যে রয়েছে মারন গ্যাস। এই বিষয় লক্ষ্য করেই স্থানীয় এলাকার বাসিন্দারা ওই দুই ব্যক্তিকে উদ্ধারের জন্য বিশেষ উদ্ধারকারী দল আনার দাবি করতে থাকে, এই মুহূর্তে ঘটনাস্থলে বারংবার পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে বচসায় জড়ায় মৃতের পরিবার-পরিজন ও এলাকাবাসী তারা দ্রুত তাদের উদ্ধারের দাবি জানাই। পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে এ বিষয়ে ইসিএল এর বিশেষ উদ্ধারকারী দলের কাছে উদ্ধারের জন্য আবেদন জানানো
হয়েছে, তবে সেই উদ্ধারকারী দলের এখনো কোন দেখা মেলেনি। মৃতের পরিবার-পরিজনদের দাবি এখানে ঠিকা কর্মীর কাছে ৪০০ টাকার বিনিময়ে ওই খনি মুখে কয়লা কাটার জন্য তারা এসেছিল তারপর তারা এই মারন গ্যাসের শিকার হয়েছে। তারাই দিন দাবি করেছেন এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে ও উদ্ধার করতে হবে দেহ দুটি। এখন দেখার কত দ্রুত প্রশাসন এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করে উদ্ধার করে ওই দুই ব্যক্তিকে।
উল্লেখ্য জামুড়িয়ার কয়লা খনি এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে কয়লা কাটার কাজ বন্ধ হয়েছিল তবে ইদানিং কয়লা মাফিয়ার চক্র সক্রিয় হয়ে গোপন এলাকায় ঘন জঙ্গলের মাঝে অবৈধভাবে কয়লা পাচারের জন্য কয়লা খনি মুখ তৈরি করার কাজে জুটে ছিল তবে তার আগেই এ ধরনের ঘটনা ঘটায় ক্রমশই অবৈধ কারবারের বিষয়টি আরো একবার প্রকাশ্যে এলো। এখন দেখার এই অবৈধ কারবার রুখতে কিরূপ পদক্ষেপ গ্রহণ করে প্রশাসন।
এই মুহূর্তে উদ্ধার হল সনজিত বাউরির দেহ। জানা গেছে এক ব্যক্তি নিজের জীবনের পরোয়া না করে ওই খনি মুখের ভেতরে ঢুকে গিয়ে ওই সঞ্জিত বাউরির দেহ দড়িতে পেঁচিয়ে দেয়। তবে মারণ গ্যাস অনেক টাই বেশি মাত্রায় থাকায় সে সময় সেই দেহ উদ্ধার করা যায়নি তবে ১১ টা নাগাদ সেই বেঁধে রাখা দড়িতে পেঁচিয়ে থাকা দেহটিকে পুলিশ প্রশাসনের সামনেই স্থানীয়রা তুলে ফেলল।