ASANSOL

আসানসোল সিবিআই আদালতে অনুব্রত মণ্ডলের সম্পত্তির নথি জমা

দেহরক্ষী সায়গল হোসেনের জামিন নাকচ, আরো ১৪ দিনের জেল হেফাজতের মেয়াদ বাড়লো, পরবর্তী শুনানি ২২ জুলাই

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়, দেব ভট্টাচার্য ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ দেশ জুড়ে শোরগোল ফেলে দেওয়া গরু পাচার মামলায় ( Cattle Smuggling Case ) এই প্রথম কোন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা হিসেবে বীরভূমের জেলা তৃনমুল কংগ্রেসের সভাপতি অনুব্রত মন্ডলের ( Anubrata Mondal ) সম্পত্তির নথি জমা পড়লো আসানসোল সিবিআই আদালতে ( Asansol CBI Court ) । মোট ৪৫ টি সম্পত্তির দলিল শুক্রবার আদালতে জমা দিয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে। এদিন একইসঙ্গে এই মামলায় ধৃত সায়গল হোসেনের প্রচুর পরিমাণ সম্পত্তির নথিও আসানসোল আদালতে জমা দিয়েছে সিবিআই। একইসঙ্গে এদিন সায়গল হোসেনের একটি মোবাইল ফোন আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।


মোট তিনদফায় সাতদিন করে মোট ১৪ দিন সিবিআই হেফাজতে ও ১৪ দিন জেল হেফাজতের পরে শুক্রবার আসানসোলে বিশেষ সিবিআই আদালতে তোলা হল অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সায়গল হোসেনকে। সায়গলের আইনজীবী অনির্বাণ গুহ ঠাকুরতা এদিন এজলাসে সওয়াল করে বলেন, ১৪ দিন হেফাজতে নিয়ে জেরা করে সিবিআই কি পেয়েছে, তা তারা স্পষ্ট করে জানায়নি। এছাড়াও এই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত হিসাবে ধৃত বিএসএফের কম্যান্ড্যান্ট সতীশ কুমার ৩২ দিনের মাথায় জামিন পেলে, তার মক্কেল পাবেন না কেন? সিবিআইয়ের আইনজীবী রাকেশ কুমার আবারও এদিন সায়গলের প্রভাবশালী তত্ত্ব তুলে তার জামিনের বিরোধিতা করেন। শেষ পর্যন্ত দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে প্রায় ঘন্টা দেড়েক সওয়াল-জবাব শেষে বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী সায়গলের জামিন নাকচ করে ১৪ দিনের জেল হেফাজতর নির্দেশ দেন। এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে আগামী ২২ জুলাই।


প্রসঙ্গতঃ গত ১০ জুন সায়গলকে প্রথম আসানসোল বিশেষ সিবিআই আদালতে তোলা হয় । সেদিন সিবিআই সাতদিনের হেপাজতে পায় তাকে। এরপর আবার তাকে গত ১৭ জুন আসানসোল সিবিআই আদালতে তোলা হয়েছিলো । সেদিনও বিচারক জামিন নাকচ করে সাতদিনের সিবিআইয়ের হেপাজত নির্দেশ দিয়েছিলেন । সেই মতো ২৪ জুন সায়গল হোসেনকে কলকাতার নিজাম প্যালেস থেকে সিবিআই আধিকারিকরা আসানসোল সিবিআই আদালতে নিয়ে আসেন। সেদিন বিচারক তার জামিন নাকচ করে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছিলেন।


ঐদিন আদালতে সেহগাল হোসেনের হয়ে আদালতে সওয়াল করার সময় আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী সঞ্জীব দাঁ ও অয়নজিৎ ব্যানার্জি । এদিনও আবারও সায়গলের আইনজীবী অনির্বাণ গুহ ঠাকুরতা তাকে গ্রেফতার করা সহ বেশ কিছু বিষয়ে সওয়াল করেন। আইনজীবী সিবিআই তদন্তের প্রশ্ন তুলে বলেন, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা গরু স্মাগলিং বা পাচারের কথা এফআইআরে বলেছে। বলা হয়েছে উত্তরপ্রদেশ থেকে গরু বিহার, ঝাড়খণ্ড, বিহার ও বাংলা হয়ে বাংলাদেশ গেছে। বাংলাদেশ সরকার কিন্তু এই পাচার নিয়ে কি বলেছে, তার কোন কিছু তথ্য এফআইআরে নেই। আর একটা রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে গরু যাওয়া কোন পাচার নয়। একটা দেশ থেকে অন্য দেশে সীমাম্ত পার করে যাওয়া পাচার। তা হওয়ায় জন্য কাস্টমস ও বিএসএফ দায়ী। এই মামলায় এই দুটি দপ্তরের আধিকারিকদের নাম থাকলেও, একজন মাত্র গ্রেফতার করা হয়েছে। যে সব রাজ্য পার করে গরু এসেছে, সেখানকার কোন অফিসারের নাম এফআইআরে নেই। কাউকে তদন্তে ডাকা হয়নি। এই মামলায় কাকে গ্রেফতার করা হলো, বাংলার বীরভূমের এক পুলিশ কর্মীকে। সে রাজ্য সরকারের কর্মী। এক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের অনুমতি লাগে লাগে। এখানে তা নেওয়া হয়নি। এদিন সায়গলের আইনজীবী এজলাসে প্রশ্ন তুলে বলেন, সব কিছু দেখে মনে হচ্ছে, তদন্তকে অন্য দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কেন্দ্রের দুই সংস্থা ও অন্য রাজ্যকে বাঁচানোর পাশাপাশি, বাংলার সরকারকে অন্য ভাবে দেখানো হচ্ছে। হতে পারে এর পেছনে অন্য কিছু আছে।


এছাড়াও তার প্রচুর আয় বহির্ভূত সম্পত্তি আছে বলে দাবি করা হলেও, আগের শুনানির দিন পর্যন্ত সিবিআই বাড়ির একটা ইলেকট্রিক বিল ছাড়া কিছুই দেয়নি। তিনি বলেন, এদিন তার মক্কলের কাছ থেকে পাওয়া একটি ফোন ও সম্পত্তির নথি জমা দেওয়া হয়েছে বলে বলা হচ্ছে। ফোন একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস। তা বাজেয়াপ্ত করার সময় কি সব কিছু মানা হয়েছে? হয়ে থাকলে তা কোথায়? এছাড়া যে সম্পত্তির কথা বলা হচ্ছে, তার সব তথ্য, কোথা থেকে কেনা হয়েছে, আয়কর রিটার্ন সব আছে। আদালত চাইলে, তা সব দেওয়া হবে। পরবর্তী শুনানির দিন সিবিআইয়ের আইনজীবী ও তদন্তকারী অফিসারকে এইসব প্রশ্নের উত্তর বিচারক দিতে বলেছেন বলে আদালত সূত্রে জানা যায়।
সায়গল হোসেনের সঙ্গে এনামুল হকের মোবাইলে কথা বলার সিডিআর বা কল ডিটেইলস রেকর্ড পেয়েছে বলে আগেই সিবিআই আদালতে জানিয়েছে। এছাড়াও সায়গল হোসেন ও তার পরিবারের সদস্য এবং নিকটাত্মীয়দের জমি সহ কি সম্পত্তি আছে তার তথ্য সিবিআই ভূমি রাজস্ব দপ্তর থেকে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা নিয়েছে। ইতিমধ্যেই সিবিআইয়ের তরফে সিডিআরের রিপোর্ট আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে । আপাততঃ সায়গল আসানসোল বিশেষ সংশোধনাগার বা জেলে থাকবে।


এদিকে, ইডি এবার এই মামলায় ঠিক কি ভূমিকা অনুব্রত মন্ডল ও সায়গল হোসেনের আছে, তা তথ্য সিবিআইয়ের কাছ থেকে চেয়েছে শুক্রবার জানা গেছে। সবকিছু তাদেরকে দিতে বলা হয়েছে সিবিআইকে।
উল্লেখ্য, গরু পাচার মামলায় ধৃত তৃণমূল কংগ্রেসের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সায়গল হোসেনের কাছে গরু পাচার মামলার অনেক তথ্য রয়েছে, এমনটাই দাবি সিবিআইয়ের আধিকারিকদের।
সিবিআই তাকে একাধিকবার নিজামের প্যালেসে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সায়গলের বক্তব্যে বেশ কিছু অসঙ্গতি থাকায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।


প্রসঙ্গতঃ গরু পাচার মামলায় বীরভূম জেলার তৃনমুল কংগ্রেসের সভাপতি অনুব্রত মন্ডলের ঘনিষ্ঠদের একের পর এক ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। মামলার প্রধান অভিযুক্ত বিনয় মিশ্র বর্তমানে পলাতক। এই মামলার অন্যতম এনামুল হক ও বিএসএফের কম্যান্ডান্ট সতীশ কুমারকে সিবিআই গ্রেফতার করলেও তারা এই মুহুর্তে শর্তসাপেক্ষে জামিনে রয়েছে। একই সঙ্গে বিনয়ের ভাই বিকাশ মিশ্রকেও গ্রেফতার করেছিলো সিবিআই। বিকাশ কিছুদিন আগে আসানসোলের সিবিআই আদালত থেকে গরু পাচার মামলায় জামিন পেয়েছে। চলতি মাসেই দুটি আলাদা আলাদা দিনে আসানসোল সিবিআই আদালতে বিকাশ মিশ্রর গরু ও কয়লা পাচার মামলায় শুনানি রয়েছে। বর্তমানে কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে রয়েছে বিকাশ মিশ্র।

Leave a Reply