ASANSOL

আসানসোলের ফুটপাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি, সাহায্যের আশ্বাস মন্ত্রীর

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ সপ্তাহ শুরুর একবারে প্রথম দিন সাতসকালে আসানসোল শহরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো। আসানসোল দক্ষিন থানার ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে জিটি রোডের রাহা লেন সংলগ্ন ফুটপাতের দোকানে সোমবার সকাল ছটা নাগাদ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের লেলিহান শিখা ছয়টিরও বেশি ফুটপাথের দোকানকে গ্রাস করে। এর ফলে লক্ষাধিক টাকার সম্পত্তি ছাই হয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা আসানসোল দমকল বিভাগ এবং আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে দমকলের একটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। দুঘণ্টার চেষ্টার পরে দমকলকর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
প্রত্যক্ষদর্শী এবং ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদারদের তরফে বলা হয়েছে , এই আগুন লাগার কারণ হলো কাছাকাছি থাকা একটি ট্রান্সফরমার। ঐ ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণ হয় এদিন সকাল ছটা নাগাদ।

দোকানদাররা জানান, এই ট্রান্সফরমারে প্রায়ই বিস্ফোরণ ঘটে ও তা থেকে আগুনের স্ফুলিঙ্গ বেরোয়। যা আশপাশের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সোমবার সকালেও ট্রান্সফরমারে বিস্ফোরণের পরে স্ফুলিঙ্গ বের হয়। যা পাশের ফুটপাথের দোকানগুলিকে গ্রাস করে। এই দোকানগুলির মধ্যে কয়েকটিতে কাপড় এবং বাকিগুলোতে মোবাইল ফোনের পণ্য ছিল। মুহূর্তের মধ্যে আগুন আশপাশের অন্যান্য দোকানেও ছড়িয়ে পড়ে। এরফলে দোকানদারদের সমস্ত পণ্য এবং সঞ্চিত মূলধন ছাই হয়ে যায়।


ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদাররা বলেন, আমরা ঋণ নিয়ে ও টাকা ধার করে ফুটপাথে দোকান চালাতাম। আর তা থেকেই পরিবারের ভরণপোষণ করতাম। অজয় পাসোয়ান নামে এক দোকানদার বলেন, আমাদের সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ট্রান্সফরমারের স্ফুলিঙ্গ আমাদের জীবিকা কেড়ে নিয়েছে। আমরা একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছি। বিদ্যুৎ বিভাগের অবহেলার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। দোকানদাররা আরো জানান, ট্রান্সফরমারের খারাপ অবস্থা নিয়ে বারবার অভিযোগ করা হয়েছিলো। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।


আসানসোল দমকল বিভাগের একজন আধিকারিক বলেন, সকাল ৬:১৫ মিনিটে আমরা আগুন লাগার খবর পাই। সেই মতো একটি দমকল ইঞ্জিন তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় দুঘণ্টার চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রাথমিক তদন্তে ট্রান্সফরমার থেকে নির্গত স্ফুলিঙ্গকে আগুনের কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশ ঘটনাস্থল আসে। পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
এই অগ্নিকাণ্ড ফুটপাথের ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদাররা জেলা প্রশাসন, আসানসোল পুরনিগম এবং রাজ্য সরকারের কাছে আর্থিক সাহায্য এবং ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন। আরেক দোকানদার সন্তোষ যাদব বলেন, আমরা বাধ্য হয়ে ফুটপাথে দোকান চালাই। আগুনে সবকিছু পুড়ে গেছে। সরকার আমাদের সাহায্য করুক।


স্থানীয় বাসিন্দারাও বিদ্যুৎ বিভাগের অবহেলার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা দাবি করেছেন যে ট্রান্সফরমারের নিয়মিত পরিদর্শন এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা হোক। যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা না ঘটে। প্রশাসনের তরফে, ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদারদের সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের তরফে।
তবে, রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন নিগমের আসানসোল ডিভিশনের তরফে দোকানদার ও এলাকার বাসিন্দাদের তরফে অভিযোগ নিয়ে কোন মন্তব্য করা হয় নি। তবে জানা গেছে, বিদ্যুৎ বন্টন নিগমের তরফে আসানসোল বাজার নিয়ে আসানসোল পুরনিগমকে বেশ কয়েকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে।


অন্যদিকে, এদিন পরে ঐ এলাকা পরিদর্শনে আসেন রাজ্যের আইন ও শ্রম মন্ত্রী মলয় ঘটক। তার সঙ্গে ছিলেন আসানসোল পুরনিগমের ডেপুটি মেয়র অভিজিৎ ঘটক। মন্ত্রী আগুনে পুড়ে যাওয়া দোকান মালিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের কি ক্ষতি হয়েছে, সেই ব্যাপারে খোঁজ খবর নেন। তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন মন্ত্রী বলে জানা গেছে।
এদিকে, এদিন দুপুর আসানসোল পুরনিগমের ৪৩ নং ওয়ার্ডের সিপিএমের কাউন্সিলর আমনা খাতুন ক্ষতিগ্রস্থ দোকানদারদের নিয়ে পুরভবনে মেয়র বিধান উপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন। কাউন্সিলার মেয়রকে গোটা বিষয়টি জানান। পরে, মেয়র বলেন, গরীব মানুষেরা ওখানে দোকান করতেন। আসানসোল পুরনিগমের তরফে কি করা যায়, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিনের, এই আগুন লাগার ঘটনার পরে আসানসোলের ব্যস্ততম বাজার ও বাণিজ্যিক এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো একবার সামনে চলে এলো।
প্রসঙ্গতঃ, শুধুমাত্র রাহালেন মোড় সংলগ্ন এলাকা নয়, জিটি রোডের গোটা বাজার জতুগৃহ হয়ে আছে। বেআইনি ভাবে ফুটপাত দখল করা হয়েছে। বাজার এলাকার সব রাস্তা প্রায় বন্ধ। চওড়া রাস্তা এখন সরু গলিতে পরিনত হয়েছে। দুচাকা বা চারচাকা গাড়ি চলাচল করা তো দূরঅস্ত, পথচারীদের হাঁটাচলা করতে কষ্ট হয়। প্লাস্টিক জাতীয় অতি দাহ্য পদার্থ দিয়ে দোকান তৈরি করা হয়েছে। তার সঙ্গে রয়েছে মাকড়সার জালের মতো ইলেকট্রিক তার। এমন ছবির মধ্যে সোমবার সকালের আগুন লাগার ঘটনা একটা উদাহরণ মাত্র। যেকোন সময় আরো বড় আগুন লাগার ঘটনা ঘটতে পারে। অতীতে তা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *