DURGAPUR

দুর্গাপুরের সভায় নরেন্দ্র মোদির মুখে ” জয় মা কালি, জয় মা দুর্গা ” দুর্নীতি থেকে নারী নিরাপত্তা, রাজ্যের শাসক দলকে লাগামহীন আক্রমণ

বেঙ্গল মিরর, দুর্গাপুর, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ বঙ্গে দলের রাজ্য সভাপতি পরিবর্তন হওয়ার পরে শুক্রবারে দুর্গাপুরে ছিলো পদ্ম শিবিরের কান্ডারি হিসেবে প্রথম বড় রাজনৈতিক সভা ছিলো দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ২০২৬ কে সামনে রেখে শমীক ভট্টাচার্য সভাপতি হওয়ার পরই বাংলায় দলের লাইন পরিবর্তনের একটা ইঙ্গিত পাওয়া গেছিল গত কয়েক দিন ধরেই। এদিনের দুর্গাপুরের সভা থেকে বঙ্গ বিজেপির বাংলা দখলের নতুন রণকৌশলে কার্যত সিলমোহর দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।


দুর্গাপুরের সভায় বক্তব্য রাখার একেবারে শুরুতে প্রধানমন্ত্রী মুখে শোনা গেল না” রামনাম” র কোন স্লোগান । বলতে গেলে, একবারে ‘বাঙালিয়ানার ’ ধাঁচে বাংলায় ভাষণ শুরু করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
ভাষণের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী ভাঙা ভাঙা বাংলায় বললেন, বড়রা আমার প্রণাম নেবেন। ছোটরা ভালোবাসা। ” জয় মা কালী জয় মা দুর্গা “। এমনিতে বাংলায় এসে প্রধানমন্ত্রী কোন সভায় বিশেষ করে রাজনৈতিক ভাষণের শুরুটা বাংলাতেই করার চেষ্টা করেন। তবে বাংলার বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী যেভাবে বাংলায় মা কালী এবং মা দুর্গার নাম নিলেন, তা অবশ্যই বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ার মতো। ৩৫ মিনিটের বক্তব্যের মাঝেও তাকে বেশ কয়েকবার বাংলায় কথা বলতে শোনা গেছে এদিন। কখনও তিনি বলেছেন, বিকশিত বাংলা মোদির গ্যারান্টি।

তাকে এদিন এমনও বলতে শোনা গেল, বাংলা থেকে তৃণমূল যাবে, তবেই আসল পরিবর্তন আসবে। একইসাথে তিনি বললেন, টিএমসিকে হঠাও, বাংলা বাঁচাও। এখানেই শেষ নয়, বিজেপি সরকারের আমলেই যে বাংলা ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা পেয়েছে, সেটাও এদিনের সভা থেকে মনে করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিজেপির জন্য বাংলার অস্মিতা আছে। বাংলাকে আমরা সব প্রেরণার উৎস মনে করি। তিনি তার বক্তব্যে বাংলার উন্নয়ন থেকে সংস্কৃতির কথা বলতে গিয়ে, কাদম্বিনি গঙ্গোপাধ্যায়, ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের মতো বাঙালিদের খ্যাতির প্রসঙ্গ টানেন ।
রাজ্যের সাম্প্রতিক কালে আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে আর জি কর থেকে কসবা আইন কলেজের ঘটনার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই ইস্যুতে তার আক্রমণ, বাংলায় হাসপাতালও নারীদের জন্য সুরক্ষিত নয়। এইসব ঘটনায় দেখা গেছে, ক ভাবে অপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ও মন্ত্রীরা। এরপর আরো একটি কলেজেও একটি মেয়ের উপর কি ভাবে অত্যাচার করা হল। তাতেও দেখা গেল তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা জড়িত। তার দাবি, বলতে গেলে সব রাজ্যের মানুষ আয়ুষ্মান প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন। তৃণমূলের জন্য একমাত্র এই রাজ্যে আয়ুষ্মান প্রকল্প চালু হচ্ছে না।


বাংলা ভাষায় কথা বলার কারণে গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে হেনস্তার শিকার হয়েছেন বহু বাঙালি। তা নিয়ে ইতিমধ্যে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতার রাজপথে নেমে প্রতিবাদ করেছেন তিনি। সারা বাংলায় শাসক দলের পাশাপাশি বিরোধী দুই দল সিপিএম ও কংগ্রেস রাস্তায় নেমেছে। গোটা বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কলকাতা হাইকোর্টও। তবে এইসব কিছুর মাঝে এদিন দুর্গাপুরের সভা থেকে অনুপ্রবেশ ইস্যুতে কড়া বার্তা দিলেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, তৃণমূল কংগ্রেস নিজের স্বার্থে বাংলার সম্মানকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে। ভোটের জন্য অনুপ্রবেশকারীদের বাঁচাতে মাঠে নেমেছে। অনুপ্রবেশকারীদের এই দেশে কোন জায়গা নেই। যে বা যারা ভারতের নাগরিক নন, বেআইনি ভাবে অনুপ্রবেশ করে দেশে এসেছেন, তাদের বিরুদ্ধে সংবিধান মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটা মোদির গ্যারান্টি। এই অনুপ্রবেশ বাংলার পাশাপাশি গোটা দেশের জন্য বিপজ্জনক। তাই এইসব আটকাতে হলে বাংলায় ডবল ইঞ্জিন সরকার আসা দরকার।
এদিনের সভার শুরুতে প্রধানমন্ত্রীকে উত্তরীয় পরিয়ে ও স্মারক দিয়ে সম্মানিত করেন রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক থেকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও রাজ্যের নেতারা।
উল্লেখ্য, ২০২৬ র বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করেছে বঙ্গ বিজেপি। তাই সেই প্রায় ১ বছর আগে থেকেই বাংলায় আসা শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
তবে, প্রধানমন্ত্রী এই সফর, কতটা বিজেপির বঙ্গ জয়ে টোটকা হিসেবে কাজ করে, তা সময়ই বলবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *