ASANSOL-BURNPUR

বার্নপুরে দামোদরে ভেঙে পড়লো পিএইচইর পাইনলাইনের ব্রিজ, বিস্তীর্ণ এলাকায় সরবরাহে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা

বেঙ্গল মিরর, বার্নপুর, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ* পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের আসানসোলের বার্নপুরের কালাঝাড়িয়ায় দামোদর নদীর উপরে ভেঙে পড়লো পানীয়জল সরবরাহের জন্য পাইপলাইন নিয়ে যাওয়ার লোহার সেতু বা স্ট্রাকচারাল ব্রিজ। দামোদর নদীতে ঠিক মাঝখান থেকে এই ব্রিজ ভেঙে পড়েছে বলে জানা গেছে। এই পাইপলাইন রাজ্যের পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং বা জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের (পিএইচই) প্রধান বা মেন রাইজিং। এই ঘটনায় জল সরবরাহ পাইপলাইনেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এর ফলে আসানসোল, রানিগঞ্জ ও জামুড়িয়ার যে সমস্ত এলাকায় পিএইচই বিভাগের মাধ্যমে জল সরবরাহ করা হয়, সেখানে আগামী কয়েকদিন সেই সরবরাহে বিঘ্ন ঘটবে। দুপুর দুটো নাগাদ এই ঘটনাটি ঘটেছে।

ঠিক কি করে এই ঘটনাটি ঘটেছে, তা এখনো পরিষ্কার করা হয়নি। তবে, অভিযোগ করা হয়েছে, বেআইনি বালি কারবারিদের দৌরাত্মে এই ব্রিজ ভেঙে পড়ার ঘটনাটি ঘটেছে। তার সঙ্গে রয়েছে, লাগাতার ডিভিসির জল ছাড়ার বিষয়টিও। এই ঘটনায় কোন প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। তবে দামোদর নদীর ঠিক মাঝখানে যে জায়গা থেকে এই পাইপলাইন শুরু হয়েছে, ঘটনা ঘটার সময় সেখানে এক কর্মী আটকে ছিলেন। পিএইচইর ইঞ্জিনিয়ারদের কাছ থেকে এই ঘটনাটি জানতে পারেন পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক এস পোন্নাবলম।

তিনি আসানসোলের মহকুমাশাসক (সদর) বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য্যকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেন। এরপর সেখানে জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর বা ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের একটি দল সেখানে পৌঁছায়। তারা স্পিডবোট নিয়ে পাইপলাইন শুরু হওয়ার অংশে যান। সেখান থেকে আটকে পড়া কর্মীকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। জানা গেছে, বার্নপুরের কালাঝড়িয়ায় পিএইচইর পাম্প হাউসটি বেশ পুরনো। ৪০ বছর আগে ১৯৮৫ সালে বিবিজে বা বার্ণ বেফোড জেশোফ ( যে সংস্থা হাওড়া ব্রিজ তৈরি করে) পাইপলাইন নিয়ে যাওয়ার জন্য এই লোহার স্ট্রাকচারাল ব্রিজ নির্মাণ করে।

দামোদর নদীতে সিমেন্টের বিম বা পিলারের উপরে রয়েছে লোহার ব্রিজটি। দামোদর নদীতে রয়েছে জল তোলার জন্য কালেকটার ওয়েল। সেখানে স্ট্রেনার লাগিয়ে দামোদর নদী থেকে জল তুলে পাম্প হাউস থেকে রাইজিং মেন পাইপলাইন নদীর ওপারে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি লোহার ব্রিজ ব্যবহার করা হয়। তারপর তা রানিগঞ্জের সিয়ারশোল এলাকায় যায়। সেখানে থেকে পরিশ্রুত করে সেই জল বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়। এদিন দুপুরে হঠাৎ সেই ব্রিজ মাঝখান থেকে ভেঙে পড়ে।

ঘটনার খবর পেয়ে রাজ্য বিজেপি নেতা কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় ঘটনাস্থলে পৌঁছান ও গোটা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। পরে সেখানে আসেন আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভার বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল।পরে সাংবাদিকদের সামনে কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পিএইচই বিভাগের রক্ষণাবেক্ষণের অভাবের কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। নদী থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের ফলে সেতুর পিলার দুর্বল হয়ে পড়েছিলো। যার ফলেই এদিন এই ঘটনা ঘটল। তিনি আরো বলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ও মন্ত্রীরা কেবল টাকা কামানোর ধান্ধায় ব্যস্ত। তাদের কাছে জনগণের জীবনের কোনও মূল্য নেই। রক্ষণাবেক্ষণের দিকে তাদের কোনও নজর নেই। যার ফলে আজ এই সেতু ভেঙে পড়েছে। এখন আসানসোলের যে এলাকাগুলিতে এখান থেকে জল সরবরাহ হয়, সেখানকার মানুষদেরকে ভয়াবহ সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। কিন্তু তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীদের এতে কিছু যায়-আসে না।তিনি আরো বলেন, আজ মানুষকে প্রাণ হাতে নিয়ে নদীর ঘাটে যাতায়াত করতে হচ্ছে। তৃণমূল নেতাদের তাতে কিছু যায় আসেনা। এদিকে, বিজেপির অন্যান্য নেতারা অভিযোগ করেছেন যে ঘটনার খবর পেয়ে যখন স্থানীয় মানুষ ঘটনাস্থলে আসতে চাইছিলেন। তখন পুলিশ তাদের বাধা দেয়। তাদের দাবি, প্রশাসন এই ঘটনার সত্যতা লুকিয়ে রাখতে চায় ও মানুষের কাছে এর আসল তথ্য পৌঁছুক, তা তারা চায় না।এই ঘটনা আসানসোল, রানিগঞ্জ সহ বিস্তীর্ণ এলাকার জন্য গুরুতর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জল সরবরাহে বিঘ্নিত হওয়ার ফলে বিভিন্ন এলাকার মানুষকে চরম অসুবিধার সম্মুখীন হবেন ।

যদিও, পিএইচইর তরফে বলা হয়েছে, এই পাইপলাইনের সাহায্যে যেসব জায়গায় পানীয়জল সরবরাহ করা হতো, সেখানে সমস্যা হবে। তবে জরুরি ভিত্তিতে ট্যাঙ্কার করে ঐসব এলাকায় পানীয়জল সরবরাহ করা হবে, যতদিন না এই ব্রিজ ও পাইপলাইন মেরামত করা হচ্ছে। তারজন্য বেশকিছু দিন সময় লাগবে। আসানসোলের মহকুমাশাসক (সদর) বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, এই পাইপলাইন পিএইচইর। তাদেরকে মেরামতের কাজ দ্রুত করতে বলা হয়েছে। ঘটনার সময় একজন আটকে ছিলেন। তাকে উদ্ধার করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *