ASANSOL

আসানসোল সিবিআই আদালতে সাক্ষ্য দান কোল ইন্ডিয়ার সিএমডির

কয়লা পাচার মামলা : পরবর্তী শুনানি ২৯ আগষ্ট

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে মঙ্গলবার কয়লা পাচার মামলায় সাক্ষ্য দিলেন কোল ইন্ডিয়ার সিএমডি বা চেয়ারম্যান কাম ম্যানেজিং ডিরেক্টর পিএম প্রসাদ। আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে এদিন কয়লা পাচার মামলায় প্রধান অভিযুক্ত অনুপ মাজি ওরফে লালা, জয়দেব মণ্ডল ছাড়াও অন্যান্য সকল অভিযুক্ত উপস্থিত ছিলেন। এদিন সাক্ষ্য দান শেষে এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ২৯ আগস্ট হবে বলে বিচারক অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় নির্দেশ দেন। সেদিন ২৮ নং সাক্ষী তার সাক্ষ্য দান করবেন বলে সিবিআই আদালত সূত্রে জানা গেছে।

এদিন সাক্ষ্য দান শেষ হওয়ার পরে অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী শেখর কুণ্ডু বলেন, এদিন কোল ইন্ডিয়ার সিএমডি সাক্ষ্য দিতে এসেছিলেন। যখনই কোন সরকারি কর্মচারী বা পাবলিক সারভেন্টের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দায়ের করা হয়, তখন সেই মামলা চালানোর জন্য ১৯ নং ধারায় উর্ধতন আধিকারিকের অনুমতির প্রয়োজন হয়। এই কয়লা পাচার মামলায় ইসিএলের বেশ কয়েকজন কর্মীর নামে অভিযোগ হয়েছিলো। তাদের নামে চার্জ গঠনও হয়েছে। এক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে মামলার চালানোর জন্য কোল ইন্ডিয়ার সিএমডি অনুমতি দিয়েছিলেন। তাই এদিন তিনি তার সাক্ষ্য দান করেন।

সিএমডি আদালতে বিচারকের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন যে, প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছিলো যে, এই মামলায় ইস্টার্ন কোলফিল্ডস লিমিটেড বা ইসিএলের কর্মচারী ও আধিকারিকদের বিরুদ্ধে আনা সিবিআইয়ের অভিযোগগুলি সঠিক। তাই তিনি তা দিয়েছেন। সেই বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে এখানে এসেছেন। এ বিষয়ে শেখর কুণ্ডু আরো বলেন, সিবিআইয়ের দেওয়া প্রদত্ত নথিপত্র যাচাই না করে সিএমডি কিভাবে বলতে পারেন সেগুলো সঠিক? তাদের উচিত ছিল প্রথমে সিবিআইয়ের দেওয়া নথি তাদের নিজস্ব স্তরে তদন্ত করে খতিয়ে দেখা ও তার অনুমতি দেওয়া। আমার মনে হয়েছে, সিএমডি এই ক্ষেত্রে নিজের মাইন্ড বা মনকে এ্যাপ্লাই করেননি। যা, অবশ্যই সঠিক হয়নি। এদিনে পুরো বিষয়টি উঠে এসেছে।

যদিও, সিবিআইয়ের আইনজীবী রাকেশ কুমার পাল্টা এজলাসে বলেন, পুরোটাই সঠিকভাবে করা হয়েছে। তাই কোল ইন্ডিয়ার সিএমডির অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন ভুল নেই। এরপরই, এদিনের মতো সাক্ষ্য দান পর্ব শেষ হয়। মামলার পরবর্তী শুনানি ২৯ আগস্ট হবে। এর আগে ট্রায়ালে সিবিআই আদালত থেকে নোটিশ পেয়ে কোল ইন্ডিয়ার তরফে ” স্যাংকশনিং অথরিটি বা অনুমোদনকারী ব্যক্তি ” হিসেবে ডেপুটি ডিরেক্টর ও চীফ জেনারেল ম্যানেজার বা সিজিএম ( পার্সোনাল) পদমর্যাদার আধিকারিকরা সাক্ষ্য দান করেছেন।

এই কয়লা পাচার মামলায় সিবিআই ১০ জন পাবলিক সারভেন্ট বা সরকারি অফিসারের চার্জ গঠন করেছে। এরা কোন না সময় ইসিএলের সদর দপ্তর, এরিয়া ও সিআইএসএফ ও নিরাপত্তা বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন বা আছেন।

প্রসঙ্গতঃ বেশ কয়েকবার নানা কারণে পিছিয়ে যাওয়ার পরে, শেষ পর্যন্ত ২০২৪ সালের ১০ ডিসেম্বর আসানসোল সিবিআই আদালতে কয়লা পাচার মামলার চার্জ গঠন করা হয়েছিলো।উল্লেখ্য, কয়লা পাচার মামলায় সিবিআই মোট তিনটি চার্জশিট আসানসোল সিবিআই আদালতে জমা দিয়েছে। তাতে ৫০ জনের নাম আছে। তার মধ্যে অন্যতম অভিযুক্ত বিনয় মিশ্র এখনো ফেরার। তাকে সিবিআই ধরতে না পারায়, চার্জশিটে পলাতক বা এ্যাবসকন্ড দেখানো হয়েছে। চলতি বছরের জুন মাসে তার খোঁজ করতে সিবিআই আদালত থেকে ” রেড কর্ণার ” জারি করা হয়েছে। ভানুয়া দ্বীপ সহ যে সব দেশে বিনয় আত্মগোপন করে থাকতে পারে বলে, মনে করা হয়েছে, সেখানে তার নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

এই মামলার শুনানি চলাকালীন একজন মারা গেছেন। যে কারণে সিবিআইয়ের মোট ৪৮ জনের নামে চার্জ গঠন করে। সেই ৪৮ জনের মধ্যে ব্যক্তিগত বা ইনডিভিজুয়াল তিনজনের নামে চার্জ গঠনের করা হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো বিকাশ মিশ্র। বাকি দুজন হলো অনুপ মাজি ওরফে লালা ও রত্নেশ্বর ভার্মা ওরফে রত্নেশ। এর পাশাপাশি আরো ২৩ জনের নামে একসঙ্গে, ১০ সরকারি কর্মী বা পাবলিক সারভেন্ট ও ১২ টি কোম্পানির নামে এই মামলায় চার্জ গঠন করা হয়েছে।
সিবিআই কয়লা চুরির অভিযোগের ভিত্তিতে ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর এফআইআর করেছিলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *