ASANSOL

জামুড়িয়ায় বেসরকারি কারখানার অবৈধ নির্মাণ ভাঙা , জরিমানা আদায় করা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে প্রশ্নের মুখে আসানসোল পুরনিগম

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ* গত এক বছরের বেশি সময় ধরে আসানসোল পুরনিগমের জামুরিয়া এবং রানিগঞ্জ শিল্প তালুকে একাধিক বেসরকারি কারখানার বিরুদ্ধে অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। আসানসোল পুরনিগম কতৃপক্ষ এই ব্যাপারে সতর্ক করেছিলো। এই কারখানাগুলি কিন্তু এই ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। পরবর্তী সময়ে আসানসোল পুরনিগম বেআইনি নির্মাণের জন্য কারখানাগুলির বিরুদ্ধে জরিমানা করে। কিন্তু এক বছর কেটে গেলেও জরিমানাও পরিশোধ করা হয়নি বা অবৈধ নির্মাণ ভেঙে ফেলা হয়নি।বেশ কয়েকদিন আগে, জামুরিয়া শিল্পতালুকে একটি বেসরকারি ইস্পাত কারখানার অবৈধ নির্মাণ ভেঙে ফেলার জন্য আসানসোল পুরনিগম বুলডোজার নিয়ে অভিযান যায়। এই কারখানাকে কোটি টাকারও বেশি জরিমানা করা হয়েছিলো। সেই সময় জরিমানার একটা অংশ হিসেবে ২০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। পাশাপাশি তারা লিখিত ভাবে জানায় যে, পরের সাতদিনের মধ্যে বাকি টাকা দিয়ে দেবে। কিন্তু এরপর সেই কারখানার মালিক টাকা না দিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন।

জানা গেছে, শুক্রবার সেই মামলার প্রেক্ষিতে, কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারক গৌরাঙ্গ কান্ত আসানসোল পুরনিগমের বিরুদ্ধে কড়া মন্তব্য ও ভৎসনা করেন। আসানসোল পুরনিগম কতৃপক্ষ জামুরিয়া এবং রানিগঞ্জ শিল্প তালুক এলাকার বেসরকারি কারখানাগুলিকে অবৈধ নির্মাণের অভিযোগে ৫০০ কোটি টাকারও বেশি জরিমানা করেছে। কিন্তু আজ হাইকোর্টের বিচারক প্রশ্ন তোলেন যে নির্মাণ যদি সত্যিই অবৈধ হয়, তাহলে জরিমানা পরিশোধ করলে কি নির্মাণ বৈধ হবে? আসানসোল পুরনিগমের তরফে জরিমানা আদায় করা নিয়ে দেরী প্রসঙ্গে তীব্র সমালোচনা করেছে বিরোধী দল।শুক্রবার মেয়র বিধান উপাধ্যায় গোটা বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেন পুর কমিশনার অদিতি চৌধুরীর। ছিলেন পুরনিগমের আইনী উপদেষ্টা আইনজীবী সুদীপ্ত ঘটক। তাদের মধ্যে দীর্ঘক্ষন আলোচনা হয়েছে। হাইকোর্টে হওয়া মামলা নি কি করা হবে তা আলোচনা করা হয়।

জানা যাবে, আগামী সোমবার আসানসোল পুরনিগমের আইনজীবী ঐ কারখানা সংক্রান্ত সব কাগজ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে যাবেন ও শুনানিতে অংশ নেবেন। এদিকে, এদিন পরে জামুড়িয়ার ঐ কারখানার কতৃপক্ষের তরফে আধিকারিকরা আসানসোল পুরনিগমে আসেন ও মেয়রের সঙ্গে দেখা করেন। এই প্রসঙ্গে মেয়র বিধান উপাধ্যায় বলেন, সংবাদ মাধ্যমে হাইকোর্টের বিচারকের নির্দেশের কথা শুনেছি। আমরা হাইকোর্টের কোন নির্দেশের অর্ডার এদিন পর্যন্ত পাইনি। তাই হাইকোর্টের ঐ নির্দেশ সম্পর্কে কোন কিছু বলতে পারবো না। তিনি আরো বলেন, ১ বছর আগেই, জামুরিয়া এবং রানিগঞ্জের বেসরকারি কারখানাগুলির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ ছিল।

আসানসোল পুরনিগম এবং এই কারখানাগুলির মালিকদের উপস্থিতিতে পরিমাপ করা হয়েছিল। তখন দেখা গিয়েছিল যে অবৈধ নির্মাণ করা হয়েছে। তখন তারা সময় চেয়েছিল। আসানসোল পুরনিগম তাদেরকে সেই সময় দিয়েছিল ও জরিমানা করেছিলো। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের পরেও যখন কারখানা কর্তৃপক্ষ জরিমানা পরিশোধ করেনি, তখন আসানসোল পুরনিগম অবৈধ নির্মাণ ভেঙে ফেলার প্রক্রিয়া শুরু করে। কিন্তু তারপরেও কারখানা কর্তৃপক্ষ সময় চেয়েছিল এবং বলেছিল যে তারা আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কারখানা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এমন কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আসানসোল পুরনিগম টাকা নিয়ে অবৈধ নির্মাণকে বৈধ করছে বলে হাইকোর্টের মন্তব্য প্রসঙ্গে বিধান উপাধ্যায় বলেন, এটা মোটেও সত্য নয়। আসানসোল পুরনিগম কখনোই কোনও অবৈধ কাজ করে না। তিনি বলেন, যে কারখানার কথা বলা হচ্ছে, তারা আদালতে আসানসোল পুরনিগমের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। তাদের প্রতিনিধি কিছুদিন আগে আসানসোল পুরনিগমে এসেছিলেন।

তারা একদিকে আসানসোল পুরনিগমের সাথে কথা বলছেন এবং অন্যদিকে আদালতে মামলা করছেন। তাহলে তা ভুল। দুটো তো একসঙ্গে হতে পারে না। এক বছর আগে যদি অবৈধ নির্মাণ ভেঙে ফেলা হতো, তাহলে বলা হতো যে সেই কারখানাগুলিতে কর্মরত শ্রমিকদের কথা ভাবেনি আসানসোল পুরনিগম। ঠিক যেমন সমাজের একটি অংশ ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদের বিরোধিতা করে ও এই বিষয়ে দোকানদারদের সমর্থন করেন। বিধান উপাধ্যায় বলেন, যদি পুর এলাকার সব দিক থেকে উন্নয়ন করতে হয়, তাহলে সকলকে একসাথে সহযোগিতা করতে হবে।তবে আসানসোল পুরনিগমের আইনি উপদেষ্টা বলেন, অবৈধ নির্মাণের অভিযোগে অভিযুক্ত কারখানাগুলিতে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করেন। এখন যদি কারখানার মালিকদের সময় না দিয়ে নির্মাণ ভেঙে ফেলা হয়, তাহলে সেই শ্রমিকদের জীবিকার উপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। তা তাদেরকে সময় দেওয়া হয়েছিলো। আর বেআইনি নির্মাণ ভাঙা ও জরিমানা আদায় করা সহ গোটা প্রক্রিয়াটি আইন মতো করা হচ্ছে। পুর কাউন্সিলারদের বোর্ড বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি রাজ্য সরকারের নির্দিষ্ট গাইডলাইন আছে। তিনি বলেন, ঐ মামলার নির্দেশ নিয়ে কিছু পাইনি। আমরা মৌখিক ভাবে শুনেছি। তবে সোমবার আসানসোল পুরনিগমের তরফে আমরা কলকাতা হাইকোর্টে যাবো। এই বিষয়ে আসানসোল পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, যে এটি আসানসোল পুরনিগম ও ঐ কারখানার কতৃপক্ষের মধ্যে একটি যোগসাজশ। আসানসোল পুরনিগম কোনও অবৈধ নির্মাণ ভেঙে ফেলবে না এবং এই কারখানার মালিকরাও জানেন যে তাদের জরিমানাও দিতে হবে না। তাদের অবৈধ নির্মাণ ভেঙে ফেলা হবে না। তিনি আরো বলেন, বিজেপি একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে ও তখনই এই বিষয়টি সামনে আসে। অন্যথায় আসানসোল পুরনিগম এটা চাপা দেওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন যে বিজেপি এটি হতে দেবে না ও জনসাধারণের সাথে সম্পর্কিত প্রতিটি সমস্যা সমাধানের জন্য শেষ পর্যন্ত লড়াই করবে।এদিকে, এদিন এই বিষয়ে জামুড়িয়া ঐ বেসরকারি কারখানার এক আধিকারিক আশুতোষ চৌধুরীর সাথে কথা বলে, তার কাছে জানতে চাওয়া হয় যে, তারা কলকাতা হাইকোর্টে আসানসোল পুরনিগমের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন? তখন তিনি বলেন, পুরো বিষয়টি কিছু ভুল বোঝাবুঝির কারণে ঘটেছে। তিনি দাবি করেন যে, আসানসোল পুরনিগমের সাথে কারখানা কতৃপক্ষের খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে তারা পারস্পরিক সহযোগিতার সাথে প্রতিটি কাজ করে থাকেন। যদি কোথাও কোনও ভুল বোঝাবুঝি থাকে, তবে তাও সমাধান করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *