দুর্গাপুরে গরু বোঝাই গাড়ি আটকে মারধরের অভিযোগে গ্রেফতার বিজেপির দুই কর্মী
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল ও দুর্গাপুর, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ* দুর্গাপুরের বিপিএল কলোনির গ্যামন ব্রিজের কাছে গরু নিয়ে আসা একটি গাড়ি থামিয়ে চালক সহ বেশ কয়েকজনকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। এর পাশাপাশি তাদের টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয় এবং তাদের দড়ি দিয়ে বেঁধে রাস্তায় হাঁটানো হয়। দুর্গাপুরের স্থানীয় বিজেপি যুব নেতা পারিজাত গাঙ্গুলি এবং তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে। এই বিষয়ে শুক্রবার রাতে আসানসোলে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের কমিশনার সুনীল কুমার চৌধুরী এক সাংবাদিক সম্মেলন করেন।




তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে একটি গাড়িতে বেশ কয়েকজন লোক কিছু গরু নিয়ে বাঁকুড়া থেকে আসছিলেন। দুর্গাপুরের গ্যামন ব্রিজের কাছে পারিজাত গাঙ্গুলি, দীপক দাস এবং তার কয়েকজন সঙ্গীর বিরুদ্ধে সেই গাড়ি থামিয়ে গাড়ি বহনকারী লোকদের মারধর, তাদের কাছ থেকে টাকা এবং গরু ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ দায়ের হয় কোকওভেন থানায়। এই খবর পাওয়ার সাথে সাথেই পুলিশ তদন্ত শুরু করে। পুলিশ এই ঘটনার সাথে জড়িতদের খোঁজে নামে। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দীপক দাস এবং অনিশ ভট্টাচার্য নামে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মুল অভিযুক্ত পারিজাত গাঙ্গুলির খোঁজ চলছে।
তিনি বলেন, এই ঘটনায় জড়িত সকলকে গ্রেফতার করা হবে। এমন কোনও ঘটনা সহ্য করা হবে না। পুলিশ কাউকে আইন নিজের হাতে তুলে নিতে দেবে না। যদি কোনও অভিযোগ থাকে, তাহলে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করতে হবে। পুলিশ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। পুলিশ কমিশনারকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে যারা গরু নিয়ে যাচ্ছিল তাদের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজ না থাকার অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ কমিশনার বলেন, তা একেবারেই ঠিক নয়। তাদের কাছে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র ছিল। যারা এই গরু নিয়ে আসছিলেন তারা দুর্গাপুরের এনটিএস থানার অন্তর্গত জামুয়া গ্রামের বাসিন্দা। তারা কৃষিকাজের জন্য গরু নিয়ে যাচ্ছিলেন।
সুনীল কুমার চৌধুরী বলেন, পারিজাত গাঙ্গুলিকে খোঁজে তল্লাশি করা হচ্ছে। তার বাড়িতেও অভিযান চালানো হয়েছিলো। কিন্তু তাকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। আশা করা হচ্ছে যে খুব শীঘ্রই পারিজাত গাঙ্গুলিকেও গ্রেফতার করা হবে ।তবে তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ সম্পর্কে পারিজাত গাঙ্গুল বলেন, আমরা খবর পেয়ে গরু নিয়ে আসা একটি গাড়িটি থামিয়েছিলাম। ভবিষ্যতেও তা করবো। যারা গরু নিয়ে যাচ্ছিলেন তাদের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিল না। তাই তাদেরকে আটকানো হয়েছিলো। তার বিরুদ্ধে ঐ গাড়িতে থাকা লোকদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। পারিজাত গাঙ্গুলি তা অস্বীকার করে বলেন, এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা সম্পর্কে, পারিজাত গাঙ্গুলি বলেন, আমার বিরুদ্ধে একটি নয়, এক হাজার মামলা দায়ের করা হতে পারে। তবে আমি যে কোনও মূল্যে গরু পাচার বন্ধ করবো।
তিনি তৃণমূলের নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যে, তারা কয়লা এবং বালির সাথে গরু পাচার করে অর্থ উপার্জন করেন। তাই তৃণমূল নেতাদের নির্দেশে তার বিরুদ্ধে এই মামলাগুলি দায়ের করা হয়েছে।অন্যদিকে, শেখ আমির হুসেন বলেন, আমি জামুয়া গ্রামের বাসিন্দা। যখন এই ঘটনাটি ঘটে, তখন আমি গ্রামে ছিলাম। সেই সময় আমি ফোন পাই যে দুর্গাপুরের গ্যামন ব্রিজের কাছে আমার গরু নিয়ে আসা গাড়িটি পারিজাত গাঙ্গুলি এবং আরও কিছু ছেলে থামিয়েছে। তারা সকলেই বিজেপির স্থানীয় পর্যায়ের নেতা। গাড়িতে লোকেদের মারধর করা হচ্ছে এবং তাদের টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। শেখ আমির হুসেন আরো বলেন, পারিজাত গাঙ্গুলি আগেও এই ধরনের কাজ করেছেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে এনটিএস থানায় ঘটনাটি সম্পর্কে অবহিত করেছেন। কিন্তু সেখান থেকে আমাকে বলা হয়েছে যে বিষয়টি কোক ওভেন থানার। এরপর শেখর আমির হুসেন এনটিএস থানার অফিসারকে অনুরোধ করেন কোক ওভেন থানার অফিসারদের জানাতে।
শেখ আমির হুসেন বলেন, যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের সকলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছি। একই সাথে, পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক তথা পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বলেন, কিছু কৃষক তাদের কৃষি কাজের জন্য গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কেউ কেউ তাদের প্রয়োজনে গরু বিক্রি করেন। কিন্তু বিজেপির কিছু স্থানীয় নেতা এই ধরনের কাজ করছেন। যার কারণে আইনশৃঙ্খলার উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। তিনি এর জন্য সরাসরি বিজেপিকে দায়ী করে বলেন যে আমি এই বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেছি।অন্যদিকে, এই ঘটনায় আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তিরা অভিযোগ করেছেন যে পুলিশের কাছে আবেদন করার পরেও পুলিশ সক্রিয় হতে সময় নিয়েছে।দীপক দাসকে দুর্গাপুরের মহানন্দা পল্লী ও অনিস ভট্টাচার্যকে আড়া বিধান পার্ক থেকে কোকওভেন থানার পুলিশ গ্রেফতার করে। ধৃতদেরকে কোকওভেন থানার পুলিশ শনিবার দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে পেশ করে।