PANDESWAR-ANDAL

বিতর্কে বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, প্রকাশ্যে ডিএফওকে ধমক, পরে ক্ষমাপ্রার্থী

বেঙ্গল মিরর, পান্ডবেশ্বর, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ* প্রায় ২১ হেক্টর জমিতে ৩৩ হাজার বৃক্ষরোপনের পরিকল্পনা নিয়েছিলো বন দপ্তরের পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুর অফিস। দুর্গাপুর ফরিদপুর ব্লকের হেতেডোবা শিল্পতালুকের পাশে বাঁশগোড়া এলাকায় এই বৃক্ষরোপনের সূচনা হয়েছে গত ১৫ অগাস্ট। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক এস পোন্নামবালম , পঞ্চায়েত গ্রামোন্নয়ন ও সমবায় দফতরের মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার, পান্ডবেশ্বরের বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, দুর্গাপুরের মহকুমা শাসক, আসানসোল দুর্গাপুরে উন্নয়ন পর্ষদ বা আড্ডার চেয়ারম্যান কবি দত্ত ও দুর্গাপুর ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার বা ডিএফও অনুপম খাঁ।

ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, সেই অনুষ্ঠানের মধ্যেই হটাৎ উত্তেজিত হয়ে যান নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। তিনি বন দপ্তরের ডিএফও অনুপম খাঁকে ধমকাতে শুরু করেন। নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীকে বলতে শোনা যায় তাকে না জানিয়ে কেন এখানে গাছ লাগানোর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আমি এই এলাকার বিধায়ক। উচিত ছিল, আগে আমার সঙ্গে আলোচনা করা। পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসকের সামনেই তিনি চিৎকার করে বন আধিকারিক অনুপম খাঁকে এই ব্যাপারে আপত্তি জানান। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে আসেন মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার ও কবি দত্ত। তারা নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীকে শান্ত করেন।

গোটা বিষয়টি নিয়ে, সেই ভিডিও নিজের সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এই নিয়ে নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ও জেলাশাসকের ভূমিকার সমালোচনা করেন পান্ডবেশ্বরের প্রাক্তন বিধায়ক বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি। তিনি বলেন, একজন সরকারি আধিকারিককে অন্য এক সরকারি আধিকারিকের সামনে ধমকাচ্ছেন বিধায়ক। সেখানে সবাই রয়েছেন। ভাবা যায়। এর থেকে বোঝা যায়, শাসক দলের বিধায়কেরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করেন। অন্যদিকে এই প্রসঙ্গে বিতর্ক তৈরি হতেই রবিবার নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভার এ এলাকায় প্রায় বারো হাজার মানুষের বসবাস। তাদের অভিযোগের গুরুত্ব না দিয়ে কোন আলোচনা ছাড়াই এমনকি আমার সাথে আলোচনা না করেই বিজ্ঞাপন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে কোন অদৃশ্য কারণে। শতাধিক মহিলা গ্রামবাসী আমার কাছে এই ব্যাপারে অভিযোগ করেন। তাদের এই সমস্যার কথা আমাকে জানান। তাই তাদের জন্য আমার এই লড়াই। আমি তাদের কাছে দায়বদ্ধ। আমি তাদের যেকোনো বিপদে পাশে থাকবো।

আমার কথার জন্য কেউ দুঃখ পেলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।অন্যদিকে, ডিএফও বলেন, একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। মনে হচ্ছে আমরা ঠিক সময়ে গোটা বিষয়টি বিধায়ককে জানাতে পারিনি। তা উচিত ছিলো। প্রসঙ্গতঃ, প্রতাপপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাঁশগড়া, বাঁশিয়া, প্রতাপপুর গ্রামসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম মিলিয়ে বারো হাজার আদিবাসী জনজাতির বসবাস। তাদের এই জল জঙ্গল থেকেই রুটি রুজির সন্ধান চলে। তাদের কয়েকটি জায়গা নিয়ে বন বিভাগের সাথে বেশ কয়েকটি মতবিরোধ ও বিবাদ রয়েছে কয়েক বছর ধরেই। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ , বন দপ্তর তাদের জায়গা মাপযোগ না করেই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি নিয়েছে। তাই তারা তাদের সমস্যার কথা বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী জানিয়েছিলেন।বিধায়ক ঘনিষ্ঠদের দাবি, এরপরই আদিবাসীদের জল জঙ্গলের অধিকার লড়াইয়ে গর্জে উঠেন বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। আদিবাসী সম্প্রদায়ের জমি এবং বন দপ্তর জমি মাপযোগ না করেই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি নেওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিধায়ক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *