ASANSOL-BURNPUR

বার্ণপুরে গলায় সেলোটেপ পেঁচিয়ে খুনের অভিযোগ বন্ধু সহ ধৃত ২

বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায়, দেব ভট্টাচার্য ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ আসানসোল, ২৯ মার্চঃ আসানসোলের হিরাপুর থানার বার্ণপুরের রামবাঁধের বার্নপুর বয়েজ হাইস্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র শুভম আগরওয়ালের (১৪) নিখোঁজ হওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পরে তার দেহ মৃতদেহ উদ্ধার হলো। এই ঘটনায় ইস্পাত নগরী বার্ণপুরে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। বার্ণপুরের দামোদর নদী লাগোয়া ভূতনাথ মন্দিরের অদূরে একটি জঙ্গলের পাশে জলের পাইপলাইনের ঝোপঝাড়ের মধ্যে থেকে শুভমের দেহ মেলে মঙ্গলবার বিকেলের পরে। দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন থাকার পাশাপাশি ও পচন ধরে ছিলো।


বুধবার সকালে আসানসোল জেলা হাসপাতালে শুভমের মৃতদেহর ময়নাতদন্ত হয়। তার প্রাথমিক যে রিপোর্ট পুলিশকে দেওয়া হয়েছে, তার থেকে জানা গেছে, শুভমের হাত পেছন করে দড়ি দিয়ে দুষ্কৃতিরা বাঁধে। তারপর তাকে মারধর করা হয়। শেষে ব্রাউন রংয়ের বড় মাপের সেলোটেপ ১০/১২ বার পেঁচিয়ে দেওয়া হয়। তাতে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়। তখন দেহ দূষ্কৃতিরা ফেলে চম্পট দেয়।
এই ঘটনায় পুলিশ দুজনকে গ্রেফতার করে মঙ্গলবার রাতে। তারা হলো সুরজ মন্ডল ও বিট্টু মন্ডল। সুরজ শুভমের বন্ধু। বিট্টু সুরজের সম্পর্কিত দাদা। সুরজের এক মামাকে পুলিশ খুঁজছে। সে ফেরার রয়েছে। তিনজনই রামবাঁধ এলাকার বাসিন্দা। ধৃতদের বিরুদ্ধে পুলিশ খুন সহ একাধিক ধারায় মামলা করেছে। বুধবার ধৃতদেরকে ১৪ দিনের হেফাজত চেয়ে পুলিশ আসানসোল আদালতে পাঠায়। বিচারক তাদের জামিন নাকচ করে ৭ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
শুভমের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোনটি পাওয়া যায় আসানসোল রেল স্টেশনের কাছে রেলপারের রেললাইনের কাছ থেকে।


জানা গেছে, রবিবার দুপুর ১টা নাগাদ বাড়ি থেকে শুভম আগরওয়াল বেরিয়েছিল। কেউ তাকে ফোন করে ডেকেছিলো। সে তখন, তার মাকে বলেছিল দ্রুত বাড়ি ফিরে এসে দুপুরের খাবার খাবে। সঙ্গে ছিল তার মোবাইল ফোন। তারপর সে আর বাড়িতে ফেরেনি। নিখোঁজ হয়ে যায়। পরিবারের লোকেরা তাকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে সোমবার হিরাপুর থানায় একটি মিসিং ডায়েরি করেন।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, বন্ধু সুরজ মন্ডলই শুভমকে ফোন করে ডেকেছিলো। বাড়ির কেউ না দেখলেও, পুলিশ জানতে পারে, মোটরসাইকেলে করে শুভম এলাকা থেকে বেরিয়েছিলো। আরো অনুমান, তাকে অপহরণ করে বাড়ি থেকে মুক্তিপন আদায় করার পরিকল্পনা ছিলো। কিন্তু পরে, তার পরিবারের আর্থিক অবস্থার কথা বুঝতে পারে তারা। তখন, তারা মারধর করে। আর প্রমাণ লোপাটের জন্য তাকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়।


শুভমের কাকা সঞ্জীব আগরওয়াল বলেন, বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় সে তার মাকে বলেছিল আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরব। তারপর না ফেরায় তাকে মোবাইলে বারবার ফোন করা হলেও দেখা যায় তার মোবাইল সুইচ অফ। তার আত্মীয়-স্বজন ,পরিজনদের বাড়ি খুঁজেও তার খোঁজ মেলেনি। এরপর থানায় জানানো হয়েছিলো।
শুভমের বাবা মনোজ আগরওয়াল জানিয়েছেন, মঙ্গলবার বিকেলের পুলিশ তাদের খবর দেয়। সেই মতো তারা গিয়ে দেখেন ধেনুয়া গ্রামে দামোদর নদীর কাছে ভূতনাথ মন্দিরের অদূরে একটি জঙ্গল সংলগ্ন পাইপলাইনে ঝোপঝাড়ের মধ্যে হাত বাঁধা ও গলায় কোন কিছু বাঁধা অবস্থায় আমার ছেলের দেহ পড়ে আছে। এরপর পরিবারের তরফে দেহটি সনাক্ত করা হলে, পুলিশ সেই দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। রাতেই শুভমের পরিবারের তরফে হিরাপুর থানায় গিয়ে আলাদা করে পুলিশের কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। তাতে বলা হয়, তাকে খুন করা হয়েছে। তবে শুভমের বাবা ও কাকা কেউ বলতে পারেননি, কে তাকে ডেকে নিয়ে যায়।


বুধবার হিরাপুর থানায় আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের ডিসিপি (পশ্চিম) অভিষেক মুদি বলেন, ঐ স্কুল পড়ুয়াকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়েছে। এই ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদেরকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আরো একজনকে খোঁজা হচ্ছে। ঠিক কি কারণে এই খুনের ঘটনা তা জানতে তদন্ত ও ধৃতদেরকে জেরা করা হচ্ছে।

Leave a Reply