বিশ্বসেরা শিক্ষকের তকমা পেলেন রাস্তার মাস্টার দীপ নারায়ণ নায়ক
বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য।আসানসোল ।বাংলার মাটি থেকে উঠে আসা শিক্ষাবিদ তথা পশ্চিম বর্ধমান জেলার জামুরিয়া নামোপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীপ নারায়ণ নায়ক, যাঁকে ‘রাস্তার মাস্টার’ ( Rastar Master ) ও ‘হিউম্যান ব্ল্যাকবোর্ড’ ( Human Balckboard )হিসেবে সম্বোধন করা হয় সেই তিনি আবার পেলেন মালয়েশিয়া থেকে গ্লোবাল এডুকেটেড অ্যাওয়ার্ড ২০২৫। বুধবারই তিনি ওই পুরস্কার নিয়ে বাড়ি ফিরলেন । এক সময় তার বাবা একজন সাধারন দিনমজুর ছিল । তখন থেকেই সে বুঝেছিল শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা কত ।


এক সাক্ষাৎকার জানান মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি পেনডিডি কান সুলতান আইডিরিস (university Pendidikan Sultan Idris )তে অনুষ্ঠিত গ্লোবাল এডুকেটর অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ এ অভ্যান্ট গার্ড টিচার এয়ার্ড বিশ্বসেরা শিক্ষক হিসেবে সম্মানিত হয়েছেন।দীপনারায়ণ বাবু এই স্বীকৃতি অর্জন করেছেন তার রাস্তার মাস্টার তিন প্রজন্মের শিক্ষণ মডেল এর জন্য। এই উদ্ভাবনী মডেল শিশু, বাবা-মা ও দাদু-দিদাকে একসঙ্গে শেখার মাধ্যমে শিক্ষাকে সামাজিক আন্দোলনে রূপান্তরিত করেছেন এবং গ্রামের মাটির ঘরের দেওয়ালকে ব্ল্যাকবোরে পরিণত করে করোনার সময় থেকে গ্রাম্য শিক্ষার মানকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে রূপান্তরিত করেছেন তিনি।

৪ থা অক্টোবর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানটি মালয়েশিয়ার Dewan Tuanku Canselor-এ অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন ৫৭ টি দেশের ২৪৪ জন শিক্ষাবিদ ও নেতৃবৃন্দ। প্রধানমন্ত্রী অনুপস্থিত থাকায় মালয়েশিয়ার উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে তার হাতে প্রথম পুরস্কার তুলে দেন। উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী বলেন,“দীপ নারায়ণ নায়কের উদ্ভাবনী শিক্ষার ধারণা প্রমাণ করে, শিক্ষার মাধ্যমে শুধু একটি সম্প্রদায় নয়, সমগ্র জাতিকেই উন্নত করা যায়। তার উদ্ভাবনী পদ্ধতি মালয়েশিয়ার মঞ্চেও শিক্ষার নতুন দিগন্ত স্থাপন করেছে।”ভারত পেল অ্যাভান্ট-গার্ড ক্যাটাগরিতে শীর্ষস্থান। এজন্য দীপনারায়ণ কে একটি ট্রফি একটি সার্টিফিকেট এবং ইউএস-৫০০০ডলার গবেষণামূলক কাজের জন্য দেয়া হয়েছে।দীপ নারায়ণ জানান তার সঙ্গে ওই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি আনুষ্ঠানিক মৌ স্বাক্ষর করেছে।তার মধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা, টেকসই উন্নয়ন এবং ২১তম শতাব্দীর দক্ষতা উন্নয়নে যৌথ উদ্যোগকে শক্তিশালী করবে পিছিয়ে পড়া এলাকায় শিক্ষাদানের জন্য।
তিনি আরো জানান তিন প্রজন্মের শিক্ষার মডেল হল শিশু, পিতামাতা ও দাদু,দিদা একসঙ্গে শেখে। এই পদ্ধতি অন্তঃপ্রজন্মীয় শিক্ষা, লিঙ্গ সমতা এবং সাংস্কৃতিক সহানুভূতি বৃদ্ধি করে।তিনি মাটির দেয়াল ও পথকে ক্লাসরুমে পরিণত করে শিক্ষাকে সক্রিয় সামাজিক আন্দোলন হিসেবে গড়েছেন বিশেষ করে একেবারেই গ্রামীণ ও পিছিয়ে পড়া এলাকায়। তার রিভার্স লার্নিং পদ্ধতি, যেখানে শিশু বড়দের শিক্ষা দেয়, সমাজে মর্যাদা, অন্তর্ভুক্তি এবং আজীবন শেখার মানসিকতা তৈরি করে।মালয়েশিয়ার শিক্ষাগত সফর নিয়ে অভিজ্ঞতার ও অনুপ্রেরণা প্রসঙ্গে জানান তিনি মালয়েশিয়ার পাঁচটি প্রধান স্কুল এবং ঐ বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করেছেন। ঐ দেশটির শিক্ষাক্রম উদ্ভাবন, শিক্ষক উন্নয়ন এবং শিক্ষা সংক্রান্ত নীতি অনুযায়ী মূল্যভিত্তিক শিক্ষার পদ্ধতি সম্পর্কে জানেন। মালয়েশিয়ায় ভারতের হাই কমিশনের শিক্ষা কাউন্সেলর Ms. J. Rocheus Sukanya দীপ নারায়ন নায়কের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এই সর্বোচ্চ পুরস্কার পাওয়ার জন্য অভিনন্দন জানান। তার শিক্ষাকে ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকল্প —দুয়ারে শিক্ষা মডেল ,রাস্তার মাস্টার ,একসঙ্গে তিন জেনারেশনের শিক্ষা ১০০ গ্রামে ২০,০০০-এর বেশি শিক্ষার্থীকে ইতিমধ্যে পৌঁছে দিয়েছেন ।
দীপ নারায়ণ বাবু ইতিমধ্যেই বহু আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন তার মধ্যে অন্যতম ভারকে ফাউন্ডেশন এবং ইউনেস্কোর ২০২৩ এর গ্লোবাল টিচার পুরস্কার। সিমল্যান্ড থেকে হুন্ডি ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড ভারত সরকারের পক্ষ থেকে পথব্রেকার এন্ড ইউথ লুন ২০২৫, সংকল্প রত্ন ২০২৪ বঙ্গ গৌরব সম্মান ২০২৩ গ্লোবাল টিচার ২০২২ অ্যাওয়ার্ড।তিনি বলেন আজ পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষার জন্য গর্বের দিন।এই অর্জন শুধু ভারতের নয়, পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার জন্যও তার কাছে এক গর্বের দিন।একজন পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সারা বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছেন, কীভাবে গ্রামের স্কুলও বিশ্বমঞ্চে স্থান পেতে পারে।এই স্বীকৃতি দিয়ে দীপ নারায়ণ নায়ক বাংলার গ্রাসরুটস শিক্ষায় উদ্ভাবনী নেতৃত্বের নতুন দিগন্ত স্থাপন করেছেন এবং প্রমাণ করেছেন, কিভাবে একজন সাধারণ বাঙালি শিক্ষক প্রজন্ম বদলানো ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে বিশ্বমঞ্চে প্রভাব ফেলতে পারেন বলে জানান জেলা শিক্ষা দপ্তরের অতিরিক্ত জেলাশাসক সঞ্জয় পাল এবং আসানসোলের মেয়র বিধান উপাধ্যায়।