দুর্গাপুর ধর্ষণ কাণ্ড : টিআই প্যারেডের রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর তথ্য, মুল অভিযুক্ত ফিরদৌস, দাবি নির্যাতিতার আইনজীবীর
বেঙ্গল মিরর, দুর্গাপুর, রাজা বন্দোপাধ্যায়:* দুর্গাপুরে আইকিউ সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ধর্ষণ কান্ডে সোমবার চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এলো। বলা ভালো, এই ঘটনার তদন্তে নতুন মোড় এলো। এদিন দুর্গাপুরে আদালতে টেস্ট আইডেন্টিফিকেশন বা টিআই প্যারেডের রিপোর্ট জমা দেওয়া হয় পুলিশের তরফে। তা দেখার পরে বাইরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নির্যাতিতা ছাত্রীর আইনজীবী পার্থ ঘোষ দাবি করেন যে, ফিরদৌস শেখই এই ধর্ষণ কান্ডে মূল অভিযুক্ত। সে সরাসরি ধর্ষণকারী। বাকি পাঁচজন অভিযুক্তও কোন না কোনোভাবে এই ঘটনায় জড়িত। তাই তারা সমান দোষী।













ঘটনার সূত্রপাত ১০ অক্টোবর রাতে আটটা নাগাদ দুর্গাপুরের শোভাপুরে আইকিউ সিটি মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ২৩ বছর বয়সী ডাক্তারি পড়ুয়া তার সহপাঠী ওয়াসিফ আলির সঙ্গে খাবার খেতে বেরিয়েছিলেন। তারা যখন কলেজ ক্যাম্পাসের কাছাকাছি রাস্তা থেকে প্রথমে তিনজন যুবক ঐ ডাক্তারি পড়ুয়াকে পরাণগঞ্জ জঙ্গলে টেনে নিয়ে যায়। সেই সময় তার সহপাঠী সেখান থেকে কলেজে চলে আসে। এরপরে সেখান আরো দুজন যুবক আসে। বেশ কিছুক্ষন পরে ডাক্তারি পড়ুয়ার ফোন থেকে ঐ যুবকেরা তার সহপাঠীকে আবার সেখানে ডেকে পাঠায়। সহপাঠী সেখানে গেলে ঐ যুবকেরা তাকে দিয়ে ডাক্তারি পড়ুয়াকে কলেজে পাঠিয়ে দেয়। কলেজে আসার বেশ কিছুক্ষন পরে ডাক্তারি পড়ুয়া কলেজ কতৃপক্ষকে জানান, তাকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই এই ঘটনায় শোরগোল পড়তে।
ডাক্তারি পড়ুয়া উড়িষ্যার জলেশ্বরের বাসিন্দা নির্যাতিতাকে ঐ কলেজের হাসপাতালেই ভর্তি করা হয়। শনিবার সকালে লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে নিউটাউন শিপ থানার পুলিশ এফআইআর করে তদন্ত শুরু করে। তার সহপাঠীকে অভিযোগ করেন যে, সে ঘটনার সময় তাকে রক্ষা করার পরিবর্তে মিথ্যা তথ্য দিয়ে তদন্তে বাধা সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে। পুলিশ সহপাঠীকেও গ্রেপ্তার করেছে এবং তাকে অভিযুক্তের তালিকায় যোগ করেছে।
সোমবার দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে পুলিশ হেফাজতের মেয়াদ শেষে ছয় ধৃতকে পেশ করা হয়। তারা নাসিরউদ্দিন শেখ ওরফে সম্রাট (২৩), অপু বাউরি (২১), ফিরদৌস শেখ (২৩), শেখ রিয়াজউদ্দিন ওরফে মন্টু (৩২), শেখ সাফিকুল (২৭) এবং নির্যাতিতার সহপাঠী ওয়াসিফ আলি। এদিন সওয়াল-জবাব শুরু হওয়ার সময় আইনজীবী পার্থ ঘোষ আদালতে টিআই প্যারেডের রিপোর্ট খোলার আবেদন জানান। যা বিচারক শুভ্রকান্তি ধর মঞ্জুর করেন। তার রিপোর্ট অনুসারে, নির্যাতিতা পাঁচজনকেই সঠিকভাবে শনাক্ত করেছেন। যার মধ্যে ফিরদৌস শেখ মুল অভিযুক্ত। তার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি আছে এই ঘটনায়।পার্থ ঘোষ বলেন, ফিরদৌস শেখই এই ধর্ষণ ঘটনার মূল অভিযুক্ত। সেই করেছে ধর্ষণ। বাকি পাঁচজনও কোনো না কোনোভাবে যুক্ত এই ধর্ষণের ঘটনায়। ফিরদৌস ধর্ষণ করলেও, বাকিরা যুক্ত থাকায় এটি গণধর্ষণের সমান।
তিনি আরও জানান, পুলিশ তদন্তে সহপাঠীর ভূমিকা সন্দেহজনক বলে প্রমাণিত হয়েছে। বাকিদের মধ্যে দুই অভিযুক্ত হয়তো পুলিশের অনুমোদিত সাক্ষী (অ্যাপ্রুভার) হয়ে উঠতে পারেন। তিনি আরো বলেন, এদিন ধৃতদের জামিনের আবেদন বিচারক নাকচ করে দেন। নির্যাতিতা রবিবার পুলিশের পাহারায় বাড়ি ফিরে গেছেন। তার সঙ্গে বিচারক ভার্চুয়াল কথা বলেছেন। বিচারক তাড়াতাড়ি এই মামলা শেষ করতে চান। তাই তিনি তাড়াতাড়ি শুনানির দিন ঠিক করেছেন। পাশাপাশি বিচারক বলেছেন, পুলিশ চার্জশিট জমা দিলে, তার কপি আইনজীবীদের দিয়ে ট্রায়াল শুরু করা হবে। এদিন সওয়াল-জবাব শেষে বিচারকের নির্দেশে অভিযুক্তদের জেল হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিচারক শুভ্রকান্তি ধর মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য পরবর্তী শুনানির দিন নির্ধারণ করেছেন আগামী ৩১ অক্টোবর। এদিকে, পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তরা সকলেই স্থানীয় ধৃত পাঁচজন স্থানীয় বিজড়া গ্রামের বাসিন্দা। মালদহের বাসিন্দা ধৃত নির্যাতিতার সহপাঠী। ধৃত ৬ জনের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার বিএনএসের ৭০(১) ৩(৫) নং সহ একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।


