পাঁচ বছর আগে দলের কর্মীর নাবালিকা মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ, প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে গ্রেফতার দুর্গাপুরের বিজেপি বিধায়কের ভাইপো
বেঙ্গল মিরর, দুর্গাপুর, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ* দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক লক্ষণ ঘোড়ুইয়ের ভাইপোকে এক নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার করলো পুলিশ। ধৃতর নাম সহদেব ঘোড়ুই। মঙ্গলবার সকালের এই ঘটনায় ইস্পাত নগরীতে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। ২০২০ সালে দুর্গাপুরের কাঁকসার আমলাজোড়া এলাকার বাসিন্দা তথা বিজেপি নেতা সহদেব ঘোড়ুইয়ের বিরুদ্ধে দলেরই কর্মীর নাবালিকা মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে। সহদেব ঘোড়ুই দুর্গাপুর পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপির বিধায়ক লক্ষণ ঘোড়ুইয়ের ভাইপো। ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় পড়ে যায়।













কাঁকসা থানায় নাবালিকার পরিবার অভিযোগ দায়ের করতেই, অভিযুক্ত সহদেব ঘোড়ুই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। কাঁকসা থানার পুলিশ তার খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়েও তার কোনো খোঁজ পায় নি।বারবার পুলিশের পক্ষ থেকে বাড়িতে আদালতের নির্দেশ নামা পাঠানোর পরেও তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। দীর্ঘদিন ফেরার থাকার পর গত দু দিন আগে কাঁকসার রাজবাঁধে আসে একজনের বাড়িতে। মঙ্গলবার সকালে প্রাতঃভ্রমন করতে বেরোলে স্থানীয় কয়েকজন তাকে দেখে চিনতে পারেন। এর তারা পরেই কাঁকসা থানায় খবর দেন।
কাঁকসা থানার পুলিশ এলাকায় আসে ও সহদেবকে গ্রেফতার করে। এদিনই তাকে দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে পেশ করে। ধৃতের বিরুদ্ধে ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করে তা মোবাইলে তুলে সেই ভিডিও সমাজ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে বারবার ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ ছিল। পরিবারের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পকসো আইনে মামলা রুজু করে কাঁকসা থানার পুলিশ ঘটনার তদন্তে নামে। কিন্তু তার কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিলো না। শেষ পর্যন্ত পাঁচ বছর পরে পুলিশের জালে ধরা পড়লো বিজেপি বিধায়কের ভাইপো। অন্যদিকে এদিন দুর্গাপুরে আদালতে যাওয়ার পথে সহদেবের দাবি, ঐ নাবালিকার সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল। সবাই জানত। সম্পূর্ণ নির্দোষ আমি। এমনকি তাকে ফাঁসানো হয়েছে বলেও এদিন মন্তব্য করেছেন সহদেব। তবে কে বা কারা ফাঁসিয়েছে সে বিষয়ে স্পষ্টভাবে কিছু বলেননি ধৃত সহদেব।এদিকে এই ঘটনার পরেই দুর্গাপুরে শিল্পাঞ্চলে রাজনৈতিক চাপানওতোর শুরু হয়েছে। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস বঙ্গে সাম্প্রতিককালে ঘটা একাধিক ধর্ষণের ঘটনায় বিরোধীদের আক্রমণে কোণঠাসা। তখন বিজেপির বিধায়কের ভাইপো গ্রেফতার হওয়ার পরেই পদ্ম শিবিরকে পাল্টা আক্রমণ করেছেন পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।
তিনি এদিন বলতে, বিজেপি বিধায়কের ভাইপো নাবালিকাকে ধর্ষণ করে ত্রিপুরায় লুকিয়ে ছিলো। পরে সে ফিরে আসে। এদিন সকালে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। আমরা বেশি কিছু বলছি না। দেখছি রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কি বলেন? উনি তো দুর্গাপুরে এসে ধর্ণা অবস্থানে অনেক কথা বলেছিলেন। আমরা এবার ধর্ণা মঞ্চ তৈরি করে দেবো। অন্যদিকে, বিজেপি বিধায়ক বলেন,আমি তো ভাইপোর সঙ্গে থাকিনা। ২০ বছর ধরে আলাদা থাকি। ঐ নাবালিকার সঙ্গে সহদেবের ভালোবাসার সম্পর্ক ছিলো। সেটা সবাই জানে। সেটা নাবালিকাও বলেছিলো। সে এও বলেছিলো, তাকে চাপ দিয়ে এটা করানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এতে আমার কিছু বলার নেই। কেউ যদি দোষ করে থাকে, তার শাস্তি তো পেতে হবে। তারজন্য আইন আদালত আছে।প্রসঙ্গতঃ, এদিন সন্ধ্যায় বিজেপি নেতা চন্দ্রশেখর বন্দোপাধ্যায়ের ক্লাবের জগদ্ধাত্রী পুজোর উদ্বোধন করতে দুর্গাপুরে আসছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। স্বাভাবিক ভাবেই জেলার বিজেপি নেতৃত্ব কিছুটা হলেও চাপে বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।


