দুর্গাপুর গণধর্ষণ কান্ড : ২০ দিনের মধ্যে ৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট পুলিশের
দুমাসেই ট্রায়াল শেষ করার চেষ্টা হবে, দাবি পিপির
বেঙ্গল মিরর, দুর্গাপুর, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ* দুর্গাপুরের বেসরকারি মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ডাক্তারি পড়ুয়াকে গণধর্ষণের মামলায় ২০ দিনের মধ্যে দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে চার্জশিট জমা পড়লো। এই ঘটনায় ধৃত অভিযুক্ত ৬ জনের বিরুদ্ধেই দুর্গাপুরের নিউটাউন শিপ থানার পুলিশ চার্জশিট জমা দিয়েছে আদালতে।













এই প্রসঙ্গে এই মামলার স্পেশাল সরকারি আইনজীবী বা পিপি বিভাষ চট্টোপাধ্যায় এদিন বলেন, এই ঘটনাটি ঘটেছিলো ১০ অক্টোবর রাতে। পরের দিন ১১ অক্টোবর এই ঘটনার মামলা হয় ও পুলিশ তদন্ত শুরু করে। অর্থাৎ ২০ দিনের মধ্যে অভিযুক্ত ৬ জনের বিরুদ্ধে মোট ১৮ টি সেকশানে এই চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। নির্যাতিতার সহপাঠী (ওয়াসেফ আলি) বিরুদ্ধে শুধুমাত্র ধর্ষণের ধারা বা সেকশানের উল্লেখ রয়েছে এই চার্জশিটে মামলা।
বাকি ৫ জনের মধ্যে অপু বাউরি,শেখ নাসিরউদ্দিন ও শেখ ফেরদৌসের বিরুদ্ধে গণধর্ষণ, তোলাবাজি ও ডাকাতির ধারা দেওয়া হয়েছে। শেখ রিয়াজউদ্দিন ও সফিক শেখের বিরুদ্ধে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ধারা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, এই মামলায় উল্লেখযোগ্য ধারা গুলি হলো ৭(১), ৭৪, ৭৫, ৭৬, ৭৬ ও ৭৯। এই ক্ষেত্রে যাতে কাস্টডি ট্রায়াল হয়, তারজন্য সরকারের তরফে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি, চার্জশিট জমা পড়ার দুমাসের মধ্যে ট্রায়াল শেষ হয়ে দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি হবে বলে আশাবাদী স্পেশাল পিপি বিভাস চট্টোপাধ্যায়।
তার দাবি, সব অফিসারের চেষ্টায় ২০ দিনের মধ্যে চার্জশিট জমা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এর আগে, গত ২৭ অক্টোবর দুর্গাপুরে আদালতে এই মামলার টেস্ট আইডেন্টিফিকেশন বা টিআই প্যারেডের রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছিলো পুলিশের তরফে। তার ভিত্তিতে পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নির্যাতিতা ছাত্রীর আইনজীবী পার্থ ঘোষ দাবি করেছিলেন যে, ফিরদৌস শেখই এই ধর্ষণ কান্ডে মূল অভিযুক্ত। সে সরাসরি ধর্ষণকারী। বাকি পাঁচজন অভিযুক্তও কোন না কোনোভাবে এই ঘটনায় জড়িত। তাই তারা সমান দোষী। ঘটনার সূত্রপাত, গত ১০ অক্টোবর শুক্রবার রাতে আটটা নাগাদ। সেই সময় দুর্গাপুরের শোভাপুরে আইকিউ সিটি মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ২৩ বছর বয়সী ডাক্তারি পড়ুয়া তার সহপাঠী ওয়াসিফ আলির সঙ্গে খাবার খেতে বেরিয়েছিলেন। তারা যখন কলেজ ক্যাম্পাসের কাছাকাছি রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলেন সেই সময় সেখান থেকে প্রথমে তিনজন যুবক ঐ ডাক্তারি পড়ুয়াকে পরাণগঞ্জ জঙ্গলে টেনে নিয়ে যায়। সেই সময় তার সহপাঠী সেখান থেকে কলেজে চলে আসে। এরপরে সেখান আরো দুজন যুবক আসে। বেশ কিছুক্ষন পরে ডাক্তারি পড়ুয়ার ফোন থেকে ঐ যুবকেরা তার সহপাঠীকে আবার সেখানে ডেকে পাঠায়।
সহপাঠী সেখানে গেলে ঐ যুবকেরা তাকে দিয়ে ডাক্তারি পড়ুয়াকে কলেজে পাঠিয়ে দেয়। কলেজে আসার বেশ কিছুক্ষন পরে ডাক্তারি পড়ুয়া কলেজ কতৃপক্ষকে জানান, তাকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই এই ঘটনায় শোরগোল পড়তে। ডাক্তারি পড়ুয়া উড়িষ্যার জলেশ্বরের বাসিন্দা নির্যাতিতাকে ঐ কলেজের হাসপাতালেই ভর্তি করা হয়। পরের দিন ১১ অক্টোবর শনিবার সকালে লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে নিউটাউন শিপ থানার পুলিশ এফআইআর করে তদন্ত শুরু করে। ঘটনার দুদিনের মধ্যে একে একে এলাকারই বিজরা গ্রামের বাসিন্দা ৫ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। নির্যাতিতার সহপাঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে যে, সে ঘটনার সময় তাকে রক্ষা করার পরিবর্তে মিথ্যা তথ্য দিয়ে তদন্তে বাধা সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে। পরে পুলিশ সহপাঠীকেও গ্রেফতার করে। তাকে এই ঘটনার অন্যতম অভিযুক্তের তালিকায় রাখা হয়। গত সোমবার দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে পুলিশ হেফাজতের মেয়াদ শেষে ছয় ধৃতকে পেশ করা হয়। জামিন নাকচ হওয়ায় তারা আপাততঃ জেল হেফাজতে রয়েছে।
বিচারক শুভ্রকান্তি ধরের কাছে পুলিশের জমা দেওয়া টিআই প্যারাডের রিপোর্ট অনুসারে, নির্যাতিতা পাঁচজনকেই সঠিকভাবে শনাক্ত করেছেন। যার মধ্যে ফিরদৌস শেখ মুল অভিযুক্ত। তার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি আছে এই ঘটনায়। আরো বলা হয়েছে, ফিরদৌস শেখই এই ধর্ষণ ঘটনার মূল অভিযুক্ত। সেই করেছে ধর্ষণ। বাকি পাঁচজনও কোনো না কোনোভাবে যুক্ত এই ধর্ষণের ঘটনায়। ফিরদৌস ধর্ষণ করলেও, বাকিরা যুক্ত থাকায় এটি গণধর্ষণের সমান। পুলিশের তদন্তে সহপাঠীর ভূমিকা সন্দেহজনক বলে প্রমাণিত হয়েছে।প্রসঙ্গতঃ, ইতিমধ্যেই নির্যাতিতা পুলিশের পাহারায় তার বাড়ি ফিরে গেছেন।


