করোনা পরিস্থিতির আবহে অনারম্বরেই পালিত হলো শ্রীরামপুরে মাহেশের জগন্নাথ মন্দিরের চন্দন উৎসব
বেঙ্গল মিরর, মাহেশ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২০, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত : সারা দেশে করোনা পরিস্থিতিতে লক ডাউন চলছে। রেড জোন ঘোষণা হয়েছে হাওড়া, কলকাতা সহ আরো কয়েকটি জেলা। আর এই পরিস্থিতিতে হাওড়া জেলার পাশেই শ্রীরামপুরে মাহেশ এর জগন্নাথ মন্দির এবার পবিত্র অক্ষয় তৃতীয়ায় ছিল পুণ্যার্থী-শূন্য। প্রথা অনুযায়ী এই দিনে চন্দন লেপন হয় জগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলরামের দিব্য মূর্তিতে। বহুকাল ধরে চিরাচরিত এই প্রথার সাক্ষী থাকতে মাহেশে হাজির হন কয়েক লাখ ভক্ত ও পুণ্যার্থী। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের আবহে সেসবের অবকাশ নেই। ফলে মন্দির পরিসর ছিল একদমই ফাঁকা।
সামাজিক দূরত্ব মেনে আড়ম্বরহীন ভাবেই পালিত হল মাহেশের জগন্নাথ মন্দিরের অক্ষয় তৃতীয়ার অনুষ্ঠান।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীন রথযাত্রা “মাহেশের রথযাত্রা” এবার ৬২৪ বছরে পদার্পণ করল। গতকাল অর্থাৎ অক্ষয় তৃতীয়ার পবিত্র দিনেই প্রথা অনুযায়ী শুরু হয়ে যায় রথযাত্রা উৎসবের প্রস্তুতি। কিন্তু, কোরোনা ভাইরাসের কারণে গত একমাস সময় যাবৎ মাহেশ জগন্নাথ মন্দির বন্ধ রয়েছে। এবছর করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় মন্দির কমিটি এবার মন্দিরে ভক্তদের সমাগম স্থগিত রাখেন এবং এই পদক্ষেপ আগে থেকেই পুণ্যার্থীদের কাছে নিয়ে দেওয়া হয়। ফলস্বরূপ গতকাল সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মন্দিরের কয়েকজন সেবায়েত মিলে মাহেশের জগন্নাথ মন্দিরের চিরাচরিত চন্দন লেপন অনুষ্ঠান পালন করা হয়।
ভিড় উপচে পরছে মন্দির চত্ত্বরে, চন্দন উতসব চাক্ষুষ করতে সকাল থেকেই প্রচুর ভক্তের সমাগম , তিল ধারনের জায়গা নেই কোনো… প্রতিবারের এই ছবিটাই দেখা যেত হুগলির মাহেশের জগন্নাথ দেবের মন্দিরে। কিন্তু এবারে সে চিত্র আর নেই, সকাল থেকে নেই কোনো ভিড়, নেই কোন আরম্বর। তাই বিনা আরম্বরেই কোনো রকমে নম : নম: করে এবারে পালিত হলো মাহেশের জগন্নাথ দেবের ঐতিহাসিক চন্দন উৎসব। মন্দিরের প্রধান সেবাইত সৌমেন অধিকারী জানান, “আজকের এই অক্ষর তৃতীয়ার দিনেই প্রভুর চন্দন উতসব পালিত হয়।এই প্রথম এখানে কোনো আরম্বর ছাড়াই এই উতসব পালন করা হলো।সকালে প্রভুর দেহে চন্দন লেপন করা হলো।”
জগন্নাথ মন্দিরের এক সেবায়েত তমালকৃষ্ণ অধিকারী বলেন, “অক্ষয় তৃতীয়ার দিন মাহেশের রথ যাত্রার সূচনা হয়। এই দিন থেকে সমস্ত ভারী কাপড়-জামা ছাড়িয়ে, গয়নাগাটি খুলিয়ে জগন্নাথদেবের গায়ে চন্দন লেপন করা হয়। কথিত আছে, তখনকার দিনে চন্দন লেপনের মাধ্যমে প্রভু জগন্নাথদেবের মাথা যন্ত্রণা সারানো হত। সেই থেকে শুভ অক্ষয় তৃতীয়াতে পালিত হয়ে আসছে এই অনুষ্ঠান।”
গতকাল মন্দিরে উপস্থিত ছিলেন প্রধান সেবায়েত ছাড়াও সেবায়েতগণ পৃথ্বীশ চৌধুরী প্রমুখ।
সামনের ২৩ জুন রথযাত্রা, এরকম চলতে থাকলে কিভাবে রথযাত্রা হবে সেটাই এখন চিন্তার বিষয়।