হুগলীতে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধের নির্দেশ কার্যকর হবার পর তা শেষ হচ্ছে ১৭ ই মে : কলকাতা হাইকোর্টকে বলল রাজ্য ; হাইকোর্টের রাজ্যকে ইন্টারনেট বন্ধের যৌক্তিকতা ও কারণ দর্শানোর নির্দেশ
কলকাতা,১৭ ই মে, ২০২০, বেঙ্গল মিরর, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত:
গতকাল কলকাতা হাইকোর্টের একটি বিশেষ আদালতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মহামান্য প্রধান বিচারপতি থট্টাটিল বি রাধাকৃষ্ণন এবং বিচারপতি অরিজিৎ ব্যানার্জির বেঞ্চ রাজ্য সরকারকে হুগলী জেলার জেলাশাসকের ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করার যৌক্তিকতা এবং তিনি এই আদেশ দিতে পারেন কিনা সে বিষয়ে জেলাশাসকের ক্ষমতা কতখানি সেটি এফিডেভিট দাখিল করে কারণ দর্শাতে নির্দেশ দিয়েছেন।
এডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত মহামান্য আদালতকে কে বলেন যে ওই এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধের দিন যা আজ ১৭ ই মে শেষ হচ্ছে তা আইন শৃঙ্খলা অবনতি না হওয়ার কারণবশত: আরো বর্ধিত করা হবেনা।
গতকাল এই ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করার অর্ডার কে চ্যালেঞ্জ করে রিট পিটিশন দাখিল করেন সফটওয়্যার ফ্রিডম ল সেন্টার ইন্ডিয়া এবং হাইকোর্টের আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল এবং শুনানির পর দুই বিচারপতির বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
বিভিন্ন কারণ দর্শিয়ে পিটিশনাররা ইন্টারনেট বন্ধের জেলাশকের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করেন। তার মধ্যে অন্যতম ছিল একজন জেলাশাসকের ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধের আদেশ দেবার ক্ষমতার পরিধি এবং তার যৌক্তিকতা। এই বিষয়ে তর্ক চলার সময় তারা সুপ্রিম কোর্টের একটি মামলা “অনুরোধ ভাসিন এবং ভারত সরকার” উদহারন হিসেবে তুলে ধরেন।
বাদানুবাদ চলার সময় আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল বলেন মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট অতীতে জোর দিয়ে বলেছেন টেলিকম সাসপেনশন রুল অনুযায়ী ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করার নির্দেশ কার্যকর করার আগে সেটি একটি রিভিউ কমিটির সামনে পর্যালোচনার জন্য স্থাপন করতে হবে।
এই ব্যাপারে বলার সময়ে আইনজীবী টিব্রেওয়াল একটি মামলা ” ফাউন্ডেশন অফ্ মিডিয়া প্রফেশনালস এবং ইউনিয়ন টেরিটরি অফ্ জম্মু এন্ড কাশ্মীর ” উদহারন হিসেবে তুলে ধরেন।
এরই সঙ্গে আইনজীবী তিব্রেওয়াল অনুরোধ করেন, ১২ ই মে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক বিরোধ এবং হিংসার নিরপেক্ষ তদন্ত করা হোক এবং এটিও তিনি উল্লেখ করেন যে ওই হিংসার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের কোন সাহায্য বা ত্রান দেওয়া হয়নি। এমনকি ওই হিংসার পর এফ আই আর ওই বাদানুবাদ চলার সময় অব্দি দাখিল করা হয়নি।
এছাড়া সফটওয়্যার ফ্রিডম ল সেন্টার ইন্ডিয়া এর পক্ষ থেকে বলা হয় দেশের এই আপদকালীন পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট পরিষেবা দেশের মধ্যে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম যার ওপর চিকিৎসা ব্যবস্থা, মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্ম, ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা, এমনকি বিচার ব্যবস্থা সমস্ত কিছুই নির্ভরশীল। এই সংস্থার পিটিশনে উল্লেখযোগ্য ভাবে এটাই বলা ছিল, ” এই আপদকালীন পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করার নির্দেশ মানুষের মৌলিক অধিকারকে ভঙ্গ করে যা সংবিধানের ১৪,১৯ এবং ২১ নং অনুযায়ী নিশ্চিত করে। এই আপদকালীন লক ডাউন পরিস্থিতিতে সাধারণ নাগরিককে আগাম কোনো খবর না দিয়েই এই ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করা হয়েছে যা ১৭ ই মে বিকেল ৫ ঘটিকা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। ওই সংস্থার লিগ্যাল ডাইরেক্টর প্রশান্ত সুগাথান এর মতে ১৪৪ ধারা অনুযায়ী একজন জেলাশাসকের ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করা ক্ষমতার বাইরে যা টেম্পোরারি সাসপেনশন অফ্ টেলিকম সার্ভিসেস ( পাবলিক ইমার্জেন্সী পাবলিক সেফটি রুলস) এর পরিপন্থী।
এদিকে এডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত বলেন ইন্টারনেট সাসপেনশন অর্ডার সি আর পি সি ১৪৪ ধারা জারি করার ক্ষমতাবলে সঠিক কতৃপক্ষের মাধ্যমে বলবৎ করা হয়েছে।
রাজ্য যেহেতু ইতোমধ্যে ইন্টারনেট বন্ধ রাখার দিন বর্ধিত না করার কথা আদালতকে জানিয়েছে তাই এই বিষয়ে আর দীর্ঘায়িত শুনানির দিকে যেতে চান নি।
মামলাটি আরো শুনানির জন্য আগামী ২২ শে মে ধার্য করা হয়েছে যেদিন রাজ্যের তরফ থেকে এফিডেভিট দাখিল করা হবে।
বস্তুত, গত ১২ ই মে হুগলির তেলেনিপাড়া , তাঁতী পাড়া , সেগুন বাগান, স্বেতেশর এলাকায় ভীষণ হিংসা ও গন্ডগোলের খবর পাওয়া যায়। আর এর পরই জেলাশাসক ১৪৪ ধারা জারি করার সঙ্গে সঙ্গে শ্রীরামপুরে এবং চন্দননগর সাবডিভিশন এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করার নির্দেশ দেন।