Bengali News

ভারতে পঙ্গপালের গ্রাসে মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ; পাঞ্জাবে হাই এলার্ট; ভারত সরকারের তরফে নেওয়া হচ্ছে বিশেষ ব্যবস্থা

আসানসোল, বেঙ্গল মিরর, ২৮ শে মে, ২০২০, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত : নোভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে সারা ভারতবর্ষ উদ্বিগ্ন। সারা দেশে চতুর্থ দফার লক ডাউন শেষ হবার দোরগোড়ায়।
এর মধ্যেই গত সপ্তাহে তাণ্ডব চালিয়ে গেল প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। এর ক্ষয়ক্ষতি মেটানো তো দূরের কথা, এখনও ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্নও মেটেনি। আর এর মধ্যেই  দেশটির সাতটি রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে মরু পঙ্গপালের ঝাঁক। 

জানা গেছে, ভারতে পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলের অন্তত পাঁচটি রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে পঙ্গপালের ঝাঁক। রাজস্থান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ এবং মধ্যপ্রদেশের একাধিক গ্রামে ও শহরে ঢুকে পড়েছে এসব পঙ্গপালের দল। লকডাউনের মাঝে ফসলের জমিতে পঙ্গপালের এই হানায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সেখানকার কৃষকরা।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পঙ্গপাল যে হানা দিয়েছে তা নিয়ে গত সপ্তাহে সতর্কবার্তা জারি করেছিল দেশের কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রণালয়। রাজধানী দিল্লিতেও জারি করা রেড এলার্ট। সেখানেও হানা দিয়েছে পঙ্গপালের দল।

  বস্তুত: পঙ্গপাল ( locust) হল Acrididae পরিবারে ছোট শিংয়ের বিশেষ প্রজাতি যাদের জীবন চক্রে দল বা ঝাঁক বাধার পর্যায় থাকে। এই পতঙ্গগুলো সাধারণত একাই থাকে কিন্তু বিশেষ অবস্থায় তারা একত্রে জড়ো হয়। তখন তাদের আচরণ ও অভ্যাস পরিবর্তিত হয়ে সঙ্গলিপ্সু হয়ে পড়ে। পঙ্গপাল এবং ঘাস ফড়িংয়ের মধ্যে কোন পার্থক্যগত শ্রেণীভাগ নেই। বিশেষ অবস্থায় তাদের প্রজাতিরা একত্র হওয়ার যে প্রবণতা দেখায় সেটাই মূল পার্থক্য।
আসলে এরা হলো ঘাস ফড়িং যেমন migratory locust (Locusta migratoria), যেটা তার প্রচরণশীল ধাপে রয়েছে। একা থাকা অবস্থায় এই ঘাস ফড়িংগুলো অনপকারী, তারা সংখ্যায় থাকে কম এবং কৃষির জন্য বিরাট কোন আর্থিক ক্ষতি করে না। তবে অনাবৃষ্টির পর দ্রুত ফসলের বর্ধন হলে এদের মস্তিষ্কে থাকা serotonin (সেরোটোনিন) তাদের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তনের সূত্রপাত করে। ফলে তারা প্রচুর পরিমানে ও দ্রুত জন্মদান শুরু করে। তখন তারা একত্রে থাকে, যখন তাদের সংখ্যা বেশি হয় তারা যাযাবর হয়ে পড়ে। এতে থাকে পাখাবিহীন ছোট পঙ্গপাল যেটা পরে পাখা জন্মে দলে যোগ দেয়। এই পাখাবিহীন এবং পাখনাসহ পঙ্গপালের দল একসাথে চলাচল করে এবং দ্রুত ফসলের মাঠের ক্ষতি করে। পূর্নবয়স্ক পঙ্গপাল শক্তিশালী উড্ডুক্কু তারা অনেক দূর পর্যন্ত উড়তে পারে আর পথে যেখানেই থামে সেখান থেকে ফসল খেয়ে শক্তি অর্জন করে। কিছু কিছু দেশে এদের খাদ্য হিসেবে অত্যন্ত উপাদেয় বিবেচনা করা হয়। ইংরেজি “locust” বা পঙ্গপাল শব্দটি এসেছে Vulgar Latin শব্দ locusta (লোকাস্টা) থেকে, যার অর্থ লবস্টার (lobster) বা লোকাস্ট ।

 সংবাদ সংস্থা পি টি আই সূত্রে খবর, এই ক্ষতিকর ফসল ধ্বংসকারী পঙ্গপালের ঝাঁক যাতে আরও খয়ক্ষতি না করতে পারে তার জন্য বিভিন্ন রাজ্য যেমন পাঞ্জাব, গুজরাট, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এই সমস্ত রাজ্যে ড্রোনের মাধ্যমে কীটনাশক স্প্রে করবার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে যা কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রালয়   বুধবার জানিয়েছে।
  এর সঙ্গেই মন্ত্রক সূত্র মারফত জানা যায় রাজস্থানের ২১ টি জেলা, মধ্যপ্রদেশের ১৮ টি জেলা, গুজরাটের ২ টি জেলা এবং রাজস্থানের ১ টি জেলা এ পর্যন্ত পঙ্গপাল প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।  রাজস্থান, গুজরাট, পাঞ্জাব ও মধ্যপ্রদেশে মোট  ৪৭৩০৮
হেক্টর চাষ জমি পঙ্গপালের গ্রাস থেকে মুক্ত করা গিয়েছে।

   ওই সরকারি মন্ত্রক আরো জানিয়েছে ব্রিটিশ বহুজাতিক সংস্থা “মাইক্রন” কে ভারত সরকার ৬০ টি কীটনাশক স্পে মেশিন এবং দুটি ফার্ম কে ড্রোনের জোগান দেবার অর্ডার দেওয়া হয়েছে যাতে যে সমস্ত উঁচু গাছের নাগাল পাওয়া যায়না সেগুলিতে ড্রোনের মাধ্যমে কীটনাশক  অনায়াসে কীটনাশক স্প্রে করা যায় এবং পঙ্গপালের গ্রাস থেকে বাঁচানো যায়।

    এর আগে, গত বছর গুজরাটে পঙ্গপালের ঝাঁক হানা দিয়ে ২৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল ধ্বংস করেছিল। কিন্তু ফসল ধ্বংসের সেই রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে এবার। পঙ্গপাল সাধারণত গড়ে ৯০ দিন জীবিত থাকে। মরু পঙ্গপালের ঝাঁক দিনে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে পারে।
   
   সংবাদ সূত্র:  পি টি আই এবং উইকিপিডিয়া।
ছবি ও ভিডিও : নিজস্ব সূত্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *