ASANSOLASANSOL-BURNPURBengali NewsKULTI-BARAKAR

এবার সক্রিয় রাজস্থান গ্যাং/ ভারতীয় সেনাবাহিনীর নাম নিয়ে প্রতারণার ফাঁদ বহুজাতিক অনলাইন সংস্থায় / গাড়ি কিনতে গিয়ে প্রতারিত আসানসোলের কুলটির যুবক

বেঙ্গল মিরর, .রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ২৩ আগষ্টঃ অনলাইনের মাধ্যমে গাড়ি কিনতে গিয়ে প্রতারিত হলেন এক যুবক। প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরে ঐ যুবক অভিযোগ দায়ের করেছেন আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের সাইবার সেলে। তবে ততক্ষণে ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে কয়েক দফায় প্রায় ৪০ হাজার টাকা প্রতারকদের দিয়ে ফেলেছেন কুলটির ঐ যুবক সজল চট্টোপাধ্যায়।
এতদিন শোনা যেতো যে, নানা প্রলোভন দেখিয়ে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ” জামতাড়া গ্যাং”।
এবার একটি বহুজাতিক অনলাইন সংস্থায় গাড়ির ভুঁয়ো বিজ্ঞাপন দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে রাজস্থানের ‘ভরতপুর গ্যাং’। একবছরের বেশি সময় ধরে ঐ সংস্থায় পুরানো গাড়ির ভুঁয়ো বিজ্ঞাপন দিয়ে ও সেনা অফিসারের পরিচয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে প্রতারণা চক্র। রবিবার কুলটির যুবকের সঙ্গে যে কায়দায় প্রতারণা করা হয়েছে তার সঙ্গে মিল রয়েছে ‘ভরতপুর গ্যাং’য়ের। এমন ধারণা সাইবার সেলের দায়িত্বে থাকা তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের।


একটা সময় ” জিনিস পুরনো হয়েছে, এই সংস্থার মাধ্যমে বিক্রি করে দিন “। সাধারণ মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয় এই বিজ্ঞাপন। অনেকেই এই বিঞ্জাপন দেখে পুরনো জিনিস বিক্রি করছেন। অনেকে আবার পুরনো জিনিষ কিনছেন। কিন্তু তার মধ্যেও লুকিয়ে রয়েছে প্রতারণার ফাঁদ। আর সেই ফাঁদে পড়ে টাকা খোয়ালেন আসানসোলের কুলটির মিঠানির যুবক সজল চট্টোপাধ্যায়ও ।
সজলবাবু বলেন, আমি অন্যের গাড়ি ভাড়ায় চালাই। নিজেই গাড়ি কিনবো ও চালাবো, এই ভেবে একটা গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। বহুজাতিক অনলাইন সংস্থার বিজ্ঞাপনে দেখি আসানসোলের রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেওয়া একটা অল্টো গাড়ি বিক্রি আছে। সেই গাড়ি বিক্রির জন্য যিনি সংস্থার ওয়েবসাইটে পোস্ট করেছিলেন তিনি নিজেকে সেনাবাহিনীর অফিসার চন্দ্রভূষণ মিশ্র বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। চন্দ্রভূষণ লেখেন, একসময় আসানসোলে ছিলাম। বর্তমানে উড়িষ্যার ভূবেনেশ্বরে কর্মরত আছি। গাড়িটি কেনার সব কিছু ঠিক হওয়ার পরে সজলবাবুকে জানানো হয়, সেনাবাহিনীর কুরিয়ারের মাধ্যমে গাড়িটি পাঠানো হবে। সেই কুরিয়ার সংস্থার ম্যানেজার পরিচয় দিয়ে রাম কুমার নামে একজন ব্যক্তি সজলবাবুকে ফোন করেন। তাকে জানানো হয় যে, ক্যুরিয়ারের তরফ থেকে গেটপাসের জন্য ৫১০০ টাকা পাঠাতে হবে। যেটা পরে ফেরত পাওয়া যাবে। শুক্রবার সেই কথা মতো বিশ্বাসের সঙ্গে, কোন কিছু না ভেবে সেই টাকা অনলাইন ওয়ালেট থেকে সজল পাঠিয়ে দেন ঐ সংস্থায়। এরপর শনিবার ফাইল প্রসেসিং চার্জ হিসাবে আরো ১৪ হাজার ৯৯৯ টাকা চাওয়া হয় সজলবাবুর কাছ থেকে। একইভাবে কোন কিছু না চিন্তা করে তিনি সেই টাকাও পাঠিয়ে দেন। এরপর সেনাবাহিনীর সেই ক্যুরিয়ারে জিপিআরএস সিস্টেমের নামে সেই ব্যক্তি আরো ৭ হাজার ২০০ টাকা পাঠাতে বলেন। সজলবাবু সেই টাকাও পাঠান। এরপর ফাইনাল প্রসেসিংয়ের নাম করে আবার ৯ হাজার ৯০০ টাকা চাওয়া হয়। সজলবাবু বিশ্বাসের সঙ্গে সেই টাকাও পাঠিয়ে দেন। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলেও, সজলবাবুর গাড়ি আর আসেনা। সবশেষে সজলবাবু বুঝতে পারেন যে, তিনি প্রতারিত হয়েছেন। মোট ৩৮ হাজার ৪০০ টাকা খুইয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হন তিনি।
তিনি বলেন, সেনবাহিনীর পরিচয় দিয়ে অনলাইনে এভাবে প্রতারণা করা হব আমার সঙ্গে, তা ভাবিনি । আরো ৫ হাজার টাকা চেয়ে রবিবারও আমার কাছে বেশ কয়েকবার ফোন এসেছিল। আর কোনও টাকা না দিয়ে আমি পুলিশের দ্বারসৃথ হয়েছি।
আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশের এসিপি (ডিডি ও সাইবার) সৌমদ্বীপ ভট্টাচার্য্য এদিন বলেন, প্রতিদিন এই ধরণের প্রতারিত হওয়ার অনেক অভিযোগ জমা পড়ছে সেলে। সেনবাহিনীর অফিসারের নাম নিয়ে বা ছবি ব্যবহার করেও প্রতারণা করা হচ্ছে। এই প্রতারণা চক্রটি স্থানীয় নয়। মূলত রাজস্থান বা উত্তরপ্রদেশ থেকে কাজ করছে। আমরা এই অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছি৷ তিনি আরো বলেন, সবার কাছে অনুরোধ করছি ভার্চুয়াল এই ধরনের অনলাইনে কেনাকাটার ক্ষেত্রে অনেক বেশি সতর্ক হন। খুব প্রয়োজন না হলে এড়িয়ে চলুন। সরাসরি যোগযোগ করে কেনাকাটা করাটা ভালো। তাহলে প্রতারিত হওয়ার সম্ভবনা অনেকটাই কম থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *