ASANSOLKULTI-BARAKAR

আসানসোল পুরনিগম : বোরো অফিসের প্রায় ৮৭ লক্ষ টাকা তছরুপ, কংগ্রেসের কাউন্সিলরের অভিযোগে তদন্তের নির্দেশ পুর সচিবের

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্য্য : আসানসোল পুরনিগমের কুলটি বোরো অফিসের প্রায় ৮৭ লক্ষ টাকা তছরূপের অভিযোগ উঠলো। সেই অভিযোগের তদন্ত করে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিলেন পুরনিগমের সচিব শুভেন্দু বসু। গত ১৭ আগস্ট তিনি পুরনিগমের ফিনান্স অফিসার বা অর্থ বিভাগের প্রধান ও আইনী পরামর্শদাতা সুদীপ্ত ঘটককে এই তদন্তের দায়িত্বভার দিয়ে নির্দেশিকা জারি করেছেন। এই তছরুপের কথা জানাজানি হওয়ার পরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।

kulti municipal corporation office
kulti municipal corporation office


জানা গেছে, গত ২৭ জুলাই অর্থাৎ জুলাই মাসের আসানসোল পুরনিগমের কাউন্সিলরদের মাসিক অধিবেশন বা বোর্ড বৈঠকে কংগ্রেসের কাউন্সিলর তথা প্রাক্তন মেয়র পারিষদ গোলাম সরোবর এই তছরুপের ঘটনাটি সামনে আনেন । তিনি অভিযোগ করেন, পুরনিগমের কুলটি বোরো অফিস থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে আচমকা ধরা পড়ে ৮৬ লক্ষ ৮৬ হাজার ৯৮৯ টাকা পুরনিগমের নির্দিষ্ট ব্যাংক একাউন্টে জমা পড়েনি। এই অভিযোগ সেই সময় প্রকাশ্যে আসার পর আচমকাই আসানসোল পুরনিগমের আধিকারিকরা কুলটি বোরো অফিসে একদিন যান। তারা দেখেন সেদিন ১ লক্ষ ৭৬ হাজার ২৫৬ টাকা জমা দিতে কুলটি এলাকার ব্যাঙ্কে এক কর্মী গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেই টাকা জমা দেননি। তারপর থেকে ঐ কর্মী নিখোঁজ হয়ে যান। এই সূত্র ধরেই তদন্তে নেমে সবমিলিয়ে প্রায় ৮৭ লক্ষ টাকার তছরূপের হদিশ পাওয়া যায়। মজার বিষয় তখন কিন্তু কুলটি বোরো অফিসের পক্ষ থেকে ১ লক্ষ ৭৬ হাজার ২৫৬ টাকা তছরুপের অভিযোগ ঐ কর্মীর বিরুদ্ধে এনে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। তারপর থেকে সেই কর্মীর আর কোন খোঁজ মেলেনি। প্রায় ৮৭ লক্ষ টাকার কেন কোন এফ আই আর করা হয়নি বা তদন্ত করা হয়নি তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কংগ্রেসের কাউন্সিলর।


এর উত্তরে ঐ বোর্ড বৈঠকেই পুরো কর্তারা জানিয়ে দেন বিষয়টা নিয়ে তদন্ত হবে। উধাও হয়ে যাওয়া ৮৭ লক্ষ টাকা নিয়েই অভিযোগ দায়ের হবে। কিন্তু তারপরেও পুরনিগম নীরব থাকায় কয়েকদিন আগেই এই বিষয়ে গোলাম সরবর পুর সচিবকে এক চিঠি দেন। তাতে তিনি জুলাই মাসের পুরনিগমের বোর্ড বৈঠকের সিদ্ধান্তের কথা মনে করিয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তোলেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ আগস্ট পুর সচিব শুভেন্দু বসু বিষয়টি তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন । তিনি পুরনিগমের ফিনান্স বা অর্থ দপ্তরের সর্বোচ্চ আধিকারিক ফিনান্স অফিসার ও আইনী পরামর্শদাতাকে চিঠি দিয়ে অবিলম্বে এই অভিযোগের তদন্ত শুরু করতে বলেন।


কিভাবে এই তছরুপ হয়েছে, সেই সম্পর্কে সূত্র থেকে জানা গেছে, কুলটি বোরো অফিসের যে রাজস্ব আসতো তা নিয়মিত ব্যাংকেই জমা দিতে যেতেন অস্থায়ী এক কর্মী। ব্যাংকের বইয়ের স্লিপের যে অংশটি ব্যাংকে জমা পড়তো সেখানেই যে টাকা দেখানো হতো। আর সেই স্লিপেরই অন্য অংশে তার চেয়ে অনেক বেশি অর্থাৎ দিনের যতটা আয় হয়েছে, তার সমস্ত টাকাটা দেখানো হতো ও তা অফিসে রাখা থাকতো। পুরনিগমে ঐ জমা রাখা স্লিপের ভিত্তিতে মনে করা হতো পুরো টাকা জমা পড়ছে। ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে এই আর্থিক কেলেঙ্কারি ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে।


আসানসোল পুরনিগমের আইনী পরামর্শদাতা আইনজীবী সুদীপ্ত ঘটক বলেন, পুরনিগমের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল অ্যাকাউন্টস দফতরের আধিকারিকরা এই বিষয়ে আইন আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে তদন্ত করবেন। তারাই থানায় অভিযোগ দায়ের করবেন। কিন্তু আচমকাই অর্থ দপ্তরের আধিকারিক ও আমাকে এর তদন্ত করতে বলা হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে মেয়র বিধান উপাধ্যায় জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই গোটা বিষয়টি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply