ASANSOLBARABANI-SALANPUR-CHITTARANJAN

মা ও গৃহশিক্ষকের বকুনিতে পালানো দুই ভাইকে চাইল্ড লাইন বাড়ি ফেরালো

স্থানীয়দের সহায়তায় রুপনারায়নপুর পুলিশ ও চাইল্ড লাইন বাড়ি ফেরালো ঝাড়খন্ডের দুই নাবালক ভাইকে

childline
childline logo

রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল(Asansol News), ৪ সেপ্টেম্বরঃ (Childline) একদিকে পড়াশোনা ঠিকমতো না করায় ঘরে মায়ের ও গৃহশিক্ষকের বকুনি। অন্যদিকে আবার অনলাইনে পড়াশোনা রীতিমতো বুঝতে না পারা ৷ সবমিলিয়ে তিতিবিরক্ত হয়ে দুই ভাই ( যাদের বয়স ১১ ও ৭ বছর) পাশের রাজ্য ঝাড়খণ্ডের মিহিজামের বাড়ি থেকে কাউকে কিছু না বলে বেরিয়ে পড়ে৷ দুই ভাই পায়ে হেঁটে বুধবার সন্ধ্যায় বৃষ্টির মধ্যে আসানসোলের রূপনারায়ণপুরে চলে আসে। রাস্তায় তাদেরকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখে এলাকার বাসিন্দারা নিজেদের ঘরে ডেকে নেন৷ জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, তাদের মা ও বাবা কেউই নেই।

তারা ধানবাদে থাকতো। সেখান থেকে এক কাকা তাদেরকে জামতাড়ায় নিয়ে এসেছিল। আরেক কাকা তাদেরকে এদিন বলেছিলো, বাড়ি নিয়ে যাবে। সেই তাই তাদের রাস্তায় দাঁড়াতে বলে। তারপর কাকা নিখোঁজ হয়ে যায় । সেইখান থেকেই তারা পায়ে হেঁটে এখানে এসে পৌঁছেছে। ধানবাদে থাকার গল্পটা যে দুই ভাই পরিকল্পনা করে মিথ্যে বলেছিলো, বৃহস্পতিবার রাতে তাদের বাড়ি ফেরানোর পরে জানা যায়। তাদের বাবা দুর্ঘটনায় মারা গেছে । আর তাদের বাড়ি মিহিজামেই।

https://www.childlineindia.org/


বাড়ি থেকে পালিয়ে আসা নাবালক দুই ভাইকে স্থানীয় মানুষের সহযোগিতায় রূপনারায়নপুর পুলিশের হেফাজতে নিয়েছিলো। পরিবারের সন্ধান পেলেও সরাসরি তাদের হাতে দুজনকে তুলে দিতে পারলে না রূপনারায়ণপুর ফাঁড়ির পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ আসানসোল চাইল্ড লাইনের সদস্যদের হাতে তাদের তুলে দেয়। তারমধ্যে মিহিজাম পুলিশ ও মিহিজামের দু/একজন তাদের ছবি দেখে জানায় যে এরা মিহিজামের বাসিন্দা। বাড়ি থেকে তারা বুধবার নিখোঁজ হয়েছে।

সেইমতো মিহিজাম পুলিশ ও পরিবারের লোকেরা যোগাযোগ করে রুপনারায়নপুর পুলিশ ও আসানসোল চাইল্ড লাইনের সঙ্গে । পরে আসানসোল আদালত থেকে অনুমতি নিয়ে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় ঝাড়খন্ডের জামতাড়া আদালতে। সেখানে জামতাড়া চাইল্ড লাইন সদস্যদের উপস্থিতিতে আসানসোল চাইল্ড লাইনের সদস্যরা আদালতের অনুমতিতে দুই নাবালককে পরিবারের হাতে তুলে দেন। আসানসোল চাইল্ড লাইনের সঞ্জয় শাহু এই প্রসঙ্গে এদিন বলেন, দুই নাবালক যাতে তাদের পরিবারের সঙ্গে ঠিক মতো থাকতে পারে সেজন্য ঝাড়খন্ড চাইল্ড লাইনের ঐ এলাকার সদস্যরা নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন।

আসানসোলের রূপনারায়নপুর ফাঁড়ির পুলিশ জানায়, ভালো ভাবেই রাত কাটিয়েছে দুই ভাই। তাদেরকে নতুন জামা ও প্যান্ট দেওয়া হয়। পছন্দের খাবার খাওয়ানো হয়। ফাঁড়িতেই বিছানায় তাদের ঘুমোনোর ব্যবস্থা করা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে যখন তাদেরকে আসানসোল আদালতের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয় তখন তাদেরকে দেওয়া হয় মাস্কও।


পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দুই ভাই যাতে লেখাপড়া শিখে মানুষ হতে পারে, সেই জন্য মা ও বাড়ির লোকেরা চেষ্টা করতেন। মাঝেমধ্যে তাই তারা তাদেরকে বকাবকিও করতেন। লক ডাউনের কারণে স্কুলে যাতায়াত এখন বন্ধ। সেইজন্য গৃহশিক্ষক রেখে অনলাইনে যাতে তারা পড়াশোনা করতে পারে সেই ব্যবস্থা করেছিলেন বাড়ির লোকেরা। কিন্তু অনলাইনে পড়ার ঠিকমতো বুঝতে না পেরে প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায় তারা। সেইজন্যই পড়া জানতে গৃহশিক্ষকের কাছে যাওয়ার নাম করে দুই ভাই বুধবার সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে ।

পরে তারা বাড়ি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্তও নেয়। কিন্তু একবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে আবার ফিরলে বাড়ির লোকেরা বকবে। এই ভয়ে দুই ভাই আর বাড়িমুখো না হয়ে তারা নিরুদ্দেশের পথে পা বাড়ায়। তারা পুলিশকে যেসব কথা বলেছিল তার পুরোটা ঠিক নয় বলেও জানা গেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে মিহিজাম তালডাঙ্গায় তাদের আসল বাড়ি। বাড়িতে মা ছাড়াও অন্যরা আছেন। তাদের বাড়িতে কারোর কোনো মোবাইল নেই।


তবে কিছুটা হয়রানি হলেও শেষ পর্যন্ত যে এতো দ্রুততার সঙ্গে শিশু দুটিকে তাদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া গেছে, তার জন্য মিহিজাম পুলিশের পক্ষ থেকে চাইল্ড লাইন সহ সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মিহিজাম থানার ওসি সুমন কুমার। শিশু দুটির পরিবারও তাদের ফিরে পাওয়ায় খুশি।

News Editor

Mr. Chandan | Senior News Editor Profile Mr. Chandan is a highly respected and seasoned Senior News Editor who brings over two decades (20+ years) of distinguished experience in the print media industry to the Bengal Mirror team. His extensive expertise is instrumental in upholding our commitment to quality, accuracy, and the #ThinkPositive journalistic standard.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *