আসানসোলের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরলেন বাবুল
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত : করোনা আবহে লক ডাউনের কয়েক মাস পর সোমবার ট্রেনে আসানসোলে আসার পর আসানসোলের সাংসদ এবং কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় বুধবার বিকেলে আসানসোল জেলা বিজেপি পার্টি অফিসে একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন।
মূলত সাংবাদিক বৈঠকটি কৃষি বিল যা বর্তমানে আইনে পরিণত হয়েছে সেই সম্পর্কিত তথ্য তুলে ধরেন। কিন্তু এরই সঙ্গে আলাদা করে লকডাউন এর সময় তার অনুপস্থিতিতে আসানসোল এবং পশ্চিমবঙ্গের জন্য যে সমস্ত কাজ করেছেন সেগুলিও তথ্য সমেত সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।
বস্তুত উল্লেখ্য শাসকদলের তরফ থেকে বারংবার অভিযোগ করা হয়েছে করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন এর সময় এলাকার সাংসদ এবং প্রতিমন্ত্রীকে নিজের এলাকায় দেখতে পাওয়া যায়নি। ফলে তার এলাকার জন্য উন্নয়নের সঙ্গে তিনি সামিল নন এরকম অভিযোগও অহরহ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, “করোনার বিরুদ্ধে আমরা এখনও জয়ী হয়নি, তৃণমূলের নেতারা বলছেন বাবুল সুপ্রিয় কোথায়? তারা বুঝতে পারছেন না বাবুল সুপ্রিয় রাস্তায় কেন বেরোচ্ছে না। নৈতিক দায়িত্ব থেকেই রাস্তায় বেরোচ্ছি না কারণ বাবুল সুপ্রিয় রাস্তা বেরোলে এরকমই ভিড় হয় এর ফলে আমরা করোনা যুদ্ধে হেরে যেতে পারি।”
করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের সময়কালীন কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ এলাকার সংসদ এবং ভারত সরকারের মন্ত্রী হয়ে করেছেন :
সুরক্ষিত বনাঞ্চল নির্মাণ করার জন্য “নগর ও বন যোজনা”
পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এর দ্বারা আসানসোলে যে বোটানিকাল গার্ডেনস স্থাপন করা হচ্ছে সেই প্রকল্পের বাস্তবায়নের জন্য লকডাউন পিরিয়ডের মধ্যে রিপোর্ট তৈরি কাজ সমাপ্ত হয়েছে।
এছাড়া ভূমিক্ষয় রোধ করার জন্য শহর অঞ্চলের ভিতরে সুরক্ষিত বনাঞ্চল নির্মাণ করার জন্য “নগর ও বন যোজনা” আমার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।ভূমিক্ষয় রক্ষা ও জল সংরক্ষণের জন্য পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ২ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে নগর বনভোজনের আহত ১০ থেকে ৫০ হেক্টর বনভূমি প্রদান করার জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে।
করণা মহামারীর প্রকল্পের লকডাউন চলাকালীন সময়ে কনসলে অসুস্থ রোগীদের আর্থিক সাহায্য করার জন্য এলাকার সাংসদের অনুরোধে প্রধানমন্ত্রী তাঁর জাতীয় রিলিফ ফান্ড থেকে ৬ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকা বরাদ্দ করেছেন সাতজন গুরুতর অসুস্থ মানুষের চিকিৎসার জন্য। এদিকে ৩০ শে অগাস্ট ২০২০ সাল পর্যন্ত আসানসোলের সংসদীয় ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী ২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছেন ১৫১ টি গুরুতর অসুস্থ রোগীর চিকিৎসার জন্য।
ইএসআই হসপিটাল আসানসোলে রোগীদের জন্য আনুমানিক ৪০ কোটি টাকা খরচ করে অতিরিক্ত ৫০ টি শয্যা বিশিষ্ট একটি ভবনের নির্মাণ করা হচ্ছে যার সূচনা হয়েছিল ১৬ ই আগস্ট ২০১৮। এর ফলে ইএসআই হাসপাতালের ক্ষমতা ১০০ শয্যা থেকে বেড়ে ১৫০ হবে। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে এবং হাসপাতালের জন্য ৭ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করেছেন।
করণা মহামারীর জন্য কুমারপুর রেলওয়ে ক্রসিং এ জি টি রোড এর উপর রেলওয়ে ওভার ব্রিজের কাজ থেমে গেলেও আনলক ১ শুরু হবার পর ব্রিজ অ্যান্ড রুফ কোম্পানি সাথে আলোচনা করে ৬৩০ মিটার দীর্ঘ লম্বা ফ্লাইওভার এর কাজ আবার শুরু হয়েছে এই ব্রিজটি নির্মাণ করার জন্য ৫৪ কোটি টাকার দরকার ছিল যা তিনি দুই কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা রেল এবং সেল মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে ৫০:৫০ আনুপাতিক হারে অর্থরাশি মঞ্জুর করাতে সক্ষম হয়েছেন।
গতকাল তিনি ১০ মিনিটের জন্য ওই ব্রিজের কাজ পরিদর্শনে যান।
আধিকারিক এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরে তিনি জামুড়িয়ার অন্তর্গত বাসরা মোড়ে এন এইচ ২ জাতীয় সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামতের জন্য এনএইচএআই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন এবং এই রাস্তার মেরামতির কাজ পুরোদমে চলছে।গত ছ’মাস ধরে নিরপেক্ষ সার্ভে ও সামাজিক মাধ্যমে পাওয়া কিছু অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ইস্টার্ন কোয়ালফিল্ড ( ECL) সিএসআর ফান্ড থেকে সৌর বিদ্যুৎ চালিত আলোকস্তম্ভ প্রদান করে।মন্ত্রীর আন্তরিক অনুরোধ এবং যাত্রীদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বালিঘাট স্টেশনে দুটি লিফট নির্মাণ করার জন্য এক কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। লিফট হয়ে যাবার ফলে যাত্রীদের আশিটি সিড়ি চড়তে হবেনা।জামুড়িয়ার অন্তর্গত শ্যামলা পঞ্চায়েতের আলিনগর ৩৬ গণ্ডা গ্রামে পানীয় জলের সমস্যা দূর করার জন্য ১৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে দুটি সৌরচালিত সাবমারসিবল পাম্প লাগানো হয়েছে করণা মহামারীর মধ্যেও শ্রমিকরা কাজ চালিয়ে গিয়েছেন তাই তাদেরকে ধন্যবাদ জানান মন্ত্রী।
১৫ হাজারের অধিক বাড়িতে চাল আলু বিতরণ
কোভিড – ১৯ মহামারীর লকডাউন এর সময় সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্টে প্রাপ্ত কল এবং মেসেজ এর পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন শহর ও গ্রামের মধ্যে ১৫ হাজারের অধিক বাড়িতে চাল আলু বিতরণ করা হয়। এদিকে বলা হয় এই বিতরণ করার সামগ্রী পার্টির কর্মীদের দ্বারা বিতরিত সামগ্রী থেকে আলাদা। এছাড়া জামুরিয়া ব্লকে ১৫ এবং ১১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে দুটি কমিউনিটি হলের কাজও শেষ পর্যায়ে সেটিও তিনি বলেন। মে মাসের শুরুর দিকে ভার্চুয়াল সভার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রী নীতিন গড়করি সঙ্গে বৈঠকের পর এন এইচ ২ দু’ধারে বৃক্ষরোপণ এর কাজ শুরু হয়ে গেছে। আসানসোলের অন্তর্গত অন্ডাল থেকে বরাকর পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার রাস্তা বৃক্ষ রোপন করে সৌন্দর্যায়ন করা হয়েছে।এছাড়াও করোনার সময় দিল্লিতে থাকলেও সবার সঙ্গে যোগাযোগ করে আরো বিভিন্ন কাজকর্মের তদারকি করেছেন সে কথাও বলেন তিনি।
ওই সাংবাদিক বৈঠকে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজ্য বিজেপি মিডিয়া সেলের ইনচার্জ সপ্তর্ষি চৌধুরী, পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি লক্ষণ ঘড়ুই, সহ-সভাপতি প্রশান্ত চক্রবর্তী ও অপূর্ব হাজরা, সেক্রেটারি সুধা দেবী, জেলার যুব সভাপতি অরিজিৎ রায়,এছাড়া নেত্রী উপাসনা উপাধ্যায়, সুব্রত মিশ্র, অভিজিৎ রায়, শিবরাম বর্মন, কেশব পোদ্দার প্রমুখ নেতা কর্মী ও সমর্থকেরা।