বাবার বিরুদ্ধে তিন মেয়েকে দামোদর নদীতে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ
আসানসোলের কুলটির ঘটনা, উদ্ধার ১
বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ২১ অক্টোবরঃ বাবার বিরুদ্ধে তিন নাবালিকা মেয়েকে দামোদর নদীতে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠলো। বুধবার সকালের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আসানসোলের কুলটি থানার চিনাকুড়ি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। চিনাকুড়িতে দামোদর নদীতে আসানসোল পুরনিগমের এক কর্মী ঘটনার কথা জানতে পেরে একজনকে উদ্ধার করতে পারেন। তার শারীরিক অবস্থা ঠিক আছে বলে জানা গেছে। খবর পেয়ে কুলটি থানা ও নিয়ামতপুর ফাঁড়ির পুলিশ এলাকায় যায়। দামোদর নদীতে জেলার সিভিল ডিফেন্স বা ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের উদ্ধারকারী তল্লাশিতে নামলেও, বাকি দুজনের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।



পুলিশ কুলটির চিনাকুড়ি ২ নংয়ের লাইন ধাওড়ার বাসিন্দা মিথিলেশ ঠাকুর (৪৮) কে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। একইসঙ্গে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় মিথিলেশের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী সঙ্গীতা দেবী ও তিন নাবালিকার দাদুকেও ( মিথিলেশের বাবা)। তাদেরকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
জানা গেছে, মিথিলেশ ঠাকুর কুলটির চিনাকুড়ি এলাকাতে একটি মুদির দোকানে কাজ করে। তার প্রথম পক্ষের স্ত্রী বছর ছয়েক আগে বজ্রপাতে মারা যায়। প্রথম পক্ষের স্ত্রীর এক মেয়ে ও এক ছেলে আছে ৷ পরে সে আবার একটা বিয়ে করে। দ্বিতীয় পক্ষের দুটি মেয়ে। বুধবার সকালে সাড়ে নটা নাগাদ মিথিলেশ দোকান যাওয়ার সময় তিন মেয়ে পিঙ্কি কুমারী (১২), চাঁদনি কুমারী (৬) ও লক্ষী কুমারী (২) কে সঙ্গে করে বাড়ি থেকে বেরোয়। মিথিলেশ এরপর তিন মেয়েকে চিনাকুড়িতেই আসানসোল পুরনিগমের জল প্রকল্পের কাছে নিয়ে যায় ও দামোদর নদীতে ছুঁড়ে ফেলে দেয় বলে অভিযোগ।
একটা মেয়েকে উদ্ধার করল পুরকর্মী রাজ কুমার
মিথিলেশের এই কীর্তির একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী হলো জল প্রকল্পের এক পুরকর্মী রাজ কুমার। তিনি বলেন, আমি এদিন সকাল দশটা নাগাদ জল প্রকল্পের উপরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সেই সময় দেখি, একজন লোক তিনটে বাচ্চাকে নিয়ে ( একজনকে কোলে ও দুজনকে হাতে ধরে) নদীর মাঝখান দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। আমি চিৎকার করে তাকে ডাকি। ঐ লোকটা আমাকে হাত দেখায়। আমি কিছু না ভেতরে চলে যাই। মিনিট কয়েক পরে আমার একটু সন্দেহ হয়। আমি সঙ্গে সঙ্গে বাইরে এসে দেখি, দামোদরে এক গলা জল সমান জায়গায় গিয়ে ঐ লোকটা তিনজনকে ছুঁড়ছে। আমি চিৎকার করতে করতে দৌড়ে যাই। আমার চিৎকার শুনে আশপাশের আরো ২/১ জন আসে। আমি নদীতে ঝাঁপিয়ে একটা মেয়েকে উদ্ধার করি। পরে জানতে পারি যে, যাকে উদ্ধার করি সে বড় মেয়ে। তার নাম পিঙ্কি কুমারী। জলে তলিয়ে গেছে চাঁদনি ও লক্ষী কুমারী।
এরপরে খবর পেয়ে পুলিশ এলাকায় আসে। দুপুরে জেলা প্রশাসনের সিভিল ডিফেন্সের উদ্ধারকারী দল আসে। তারা নদীতে তল্লাশিতে নামে৷
মিথিলেশের ভাগ্নে সনু ঠাকুর এদিন বলে, মামার প্রথম পক্ষের স্ত্রী বেশ কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। তার একটি ছেলে ও একটি মেয়ে আছে। পরে মামা আবার বিয়ে করে। এই পক্ষে দুটো মেয়ে আছে। নানা কারণে মামার সঙ্গে মামীর কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া প্রায়ই হতো। এদিন সকালে শুনি মামা দোকান যাওয়ার সময় তিন মেয়েকে সঙ্গে করে নিয়ে যায় ও দামোদর নদীতে ছুঁড়ে ফেলে। বুঝতে পারছি না যে, কি এমন হলো। কেন মামা এমন করলো।
এদিকে, প্রাণে বেঁচে যাওয়া পিঙ্কি কুমারী পুলিশকে জানায়, তাদের বাবাই তিনজনকে দামোদর নদীতে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলো।
পুলিশ জানায়, বাড়ির সবার সঙ্গেই কথা বলা হচ্ছে। কি কারণে ঐ ব্যক্তি এমন ঘটনা ঘটালো, তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, পারিবারিক অশান্তির কারণেই সে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে৷ দুই মেয়ে খোঁজে নদীতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এখনো পরিবারের তরফে পুলিশের কাছে কোন অভিযোগ দায়ের করা হয় নি।