Bengali NewsDURGAPURLatestNewsWest Bengal

দূর্গাপুরে বিজেপি কর্মী খুনে চাঞ্চল্যকর মোড়,গ্রেফতার মা ও দাদা সহ ৪

সুপার কিলার দিয়ে হত্যার অভিযোগ

বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায়, দূর্গাপুর : দুর্গাপুরে ফরিদপুরের এক বিজেপি কর্মীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনাকে রাজনৈতিক রুপ দিতে গিয়ে ফের বেকায়দায় পড়লো পশ্চিম বর্ধমান জেলা সহ রাজ্য বিজেপির নেতারা। নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ফরিদপুর থানার পুলিস তদন্ত করতে নেমে সেই মৃত্যুর রহস্যের কিনারা করে মৃত বিজেপি কর্মী স্বরুপ শো’র (২৯) মা ও দাদা সহ আরও এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে বুধবার। এর আগে আরো একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের দাবি বাকি দুজন সুপারি কিলার।

পরিবারের তরফে খুনের অভিযোগ দায়ের না করা হলেও, মৃত স্বরুপের খুড়তুতো ভাই পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান হয়েছিলো, সম্পত্তির বিবাদের কারণে মৃতের মা সুলোচনা শো ও দাদা অরুপ শো সুপারি কিলার দিয়ে খুন করিয়েছে স্বরুপকে। তারপর তাদের গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের এদিন দূর্গাপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক খুনের ঘটনায় ধৃত মৃতের মা ও দাদার জামিন নাকচ করে ১৪ দিনের জেল হেপাজতের নির্দেশ দেন।

একইসঙ্গে খুনে অপর ধৃত শেখ ইব্রাহিমের জামিন নাকচ করে তিন দিনের পুলিশ রিমান্ডের নির্দেশ দেন। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, রাজনৈতিক কোনও কর্মসূচি না থাকায় বারে বারে মৃত্যুু নিয়ে রাজনীতি করতে গিয়ে মুখ পুড়ছে বিজেপির। তার প্রমাণ হলো দূর্গাপুরের বিজেপি কর্মীর রহস্যজনক মৃত্যু ।


প্রসঙ্গতঃ, স্বরুপ শো দূর্গাপুর পুরনিগমের ১ নং ওয়ার্ডের পারুলিয়া এলাকার বাসিন্দা। গত ৯ নভেম্বর তার মৃতদেহ উদ্ধার হয় দূর্গাপুর ফরিদপুর ব্লকের প্রতাপপুর এলাকা থেকে। মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ার পর থেকে শাসক দল ও বিজেপির মধ্যে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয় সেই দিন থেকেই। মৃতদেহর ময়নাতদন্ত হয় মৃতদেহ দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ।

সেদিন বিজেপির পশ্চিম বর্ধমান জেলার সভাপতি লক্ষন ঘোড়ুই সদলবলে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তিনি খুনের অভিযোগ তোলেন তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি তোলা হয় ।মৃতের পরিবারের লোকজন মৃত্যুর এই ঘটনাকে নিয়ে রাজনীতি করতে মানা করেন। মৃত্যু নিয়ে আর তদন্ত করতে চায়নি স্বরূপের পরিবার। তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা মৃতের বাড়িতে সহানুভূতি জানাতে গেলেও পরিবারের লোকেরা অসন্তোষ প্রকাশের করেন। কিন্তু বিজেপি দলীয় কর্মীর মৃত্যু ঘিরে রাজনীতি করতে পিছপা হয়নি ।

দোষীদের শাস্তির দাবিতে ১০ নভেম্বর দুর্গাপুরে আসেন বিজেপির রাজ্য সহ সভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়।ঘটনায় দাবি তোলেন সিবিআই তদন্তের। দূর্গাপুর হাউস মোড় থেকে মিছিল করে এসে দূর্গাপুর থানা ঘেরাও করা হয়।

দোষীদের শাস্তির দাবিতে চলতে থাকে থানার সামনে বিক্ষোভ। করা হয় পথসভা। এই কর্মসূচি শেষে মৃত দলীয় কর্মীর বাড়িতে যায় রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি মৃতের মা ও দাদাকে সমবেদনা দেখাতে গেলে তারা অসন্তুষ্ট হন। তারা পরিষ্কার বলে দেন, স্বরুপের মৃত্যু নিয়ে কোনও রাজনীতি তারা চাননা। বাড়ি থেকে তারা চলে যেতে বলেন বিজেপি নেতাও কর্মীদের।

সেই পরিস্থিতি সামাল দিয়ে রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়ে বলেন, মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করতে নয়, সমবেদনা জানাতেই এসেছিলাম।


সেই সময় অভিযুক্ত দাদা অরুপ শো বলেন, ভাই কোন রাজনৈতিক কারণে খুন হয়নি। ভাই মানসিক বিকারগ্রস্থ ছিলো। নেশা করতো। আমরা খুনের কোন অভিযোগ করছিনা। পুলিশই বিষয়টি দেখুক।
কিন্তু এরপর পারিবারিক বিবাদের কারণে মৃত্যুু হয়েছে এমনই সন্দেহ করে মৃত স্বরূপের খুড়তুতো ভাই অভিজিৎ শো পুলিশের কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

সম্পত্তি নিয়ে অশান্তি চলতেই থাকে সংসারে


এলাকা সূত্রে জানা গেছে, ১০ বছর আগে স্বরুপ শোয়ের বাবার মৃত্যুু হয়েছে। তাদের বেশ কিছু জমি ছিলো । বেশ কয়েক বছর আগে সেই জমি বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা তারা পেয়েছিলেন। কিন্তু স্বরুপ ব্যবসা করার জন্য টাকা চাইতেই শুরু হয় বিবাদ। সম্পত্তি নিয়ে অশান্তি চলতেই থাকে সংসারে। এরই মধ্যে হঠাৎই স্বরুপের অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে শুরু হয় রাজনৈতিক চাপানউতোর।
পুলিস তদন্তে নেমে এলাকারই এক বাসিন্দা সদয় মাহান্তাকে গ্রেপ্তার করে গত ১৬ নভেম্বর । তাকে ১০ দিনের পুলিসি রিমান্ডে নিয়ে শুরু হয় স্বরূপের মৃত্যুর রহস্য খোলার তদন্ত। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বেরিয়ে আসে মৃতের মা ও দাদা সহ ঐ থানা এলাকার শেখ ইব্রাহিমের নামে এক যুবকের নাম ।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সুলোচনা শো এক লক্ষ টাকার চেক দিয়েছিলেন সদয় মাহান্তার স্ত্রীকে। যা দেওয়া হয় স্বরুপের মৃত্যুর আগে। কেন সেই চেক দেওয়া হয়েছিলো তাকে তা জানানো হয়নি বলে দাবি করেন সদয়ের স্ত্রী। পুলিস সদয়ের মোবাইল ফোন থেকে সব তথ্য সংগ্রহ করে। এরপর গ্রেপ্তার করা হয় স্বরুপের মা, দাদা সহ ঐ যুবক’কে।

বিজেপি বারে বারে মুত্যু নিয়ে নোংরা রাজনীতি যে করে তার প্রমান এটাই


পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি জিতেন্দ্র তেওয়ারি বলেন, বিজেপি বারে বারে মুত্যু নিয়ে নোংরা রাজনীতি যে করে তার প্রমান এটাই। সব দেখছেন বাংলার মানুষ। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে যে খুন ও ধর্ষণ সহ দুষ্কৃতিমূলক অপরাধ বেড়ে চলেছে, তা নজরে পড়েনা।


এনিয়ে রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, নৃশংসভাবে আমাদের দলের কর্মীকে খুন করা হয়েছে। আমরা সিবিআই তদন্তের দাবি করেছিলাম। সেখানে পুলিশ মৃতের মা ও দাদাকে গ্রেপ্তার করেছে।তৃণমূলের দূষ্কতিরা খুন করবে আর তার পরিবারকে মিথ্যা মামলা দেবে। এখনো বলছি সিবিআই তদন্ত হওয়া উচিত। পুলিশ নিরপেক্ষ নয়।জোর করে ভয় দেখিয়ে সব করা হচ্ছে। এটা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত।

যুবককে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে


আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিস কমিশনারেটের ডিসিপি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্তা বলেন, ঘটনায় মৃতের মা ও দাদা সহ মোট চারজন’কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে ঐ যুবককে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। এই খুনের জন্য সুপারি দেওয়া হয়েছিলো।ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে। আমরা আরো কিছু জানার চেষ্টা করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *