ASANSOLLatestSPORTS

ফুটবলের রাজপুত্রের মৃত্যুতে শোক আসানসোলের, মারাদোনার সঙ্গে থাকার স্মৃতি রোমন্থন মোম শিল্পী সুশান্ত রায়ের

বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ২৬ নভেম্বরঃ মাত্র ৬০ বছরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বুধবার রাতে স্বপ্নালোকে চলে গেছেন ফুটবলের রাজপুত্র দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা maradona। তার মৃত্যুতে শোকাহত গোটা বিশ্বের আপামর ফুটবলপ্রেমী মানুষ। এই মারাদোনার সঙ্গে আসানসোলের নাম জড়িয়ে ছিলো আজ থেকে ১২ বছর আগে সেই ২০০৮ সালে। তা হয়েছিলো আসানসোলের মহিশীলা কলোনির বাসিন্দা মোম শিল্পী ভাস্কর্য সুশান্ত রায়ের হাত দিয়ে। সুশান্ত রায়কে মাত্র ১৫ দিনে তৈরি করতে হয়েছিলো মারাদোনার মোমের মূর্তি। নিজের সেই মূর্তি দেখে শুধু অভিভূত নয়, রীতিমতো হতবাক হয়ে গেছিলেন ফুটবলের রাজপুত্র দিয়াগো মারাদোনা। নিজের সামনে মোমের মূর্তি দেখে মারাদোনা জড়িয়ে ধরিয়েছিলেন সেই মূর্তিকে। সেই স্মৃতির কথাই ফুটবলের রাজপুত্রের আকস্মিক মৃত্যুর পরে জানালেন মোম শিল্পী সুশান্ত রায়।

File photo susanta roy with Maradona

আসানসোলের সুশান্ত রায়কে মারাদোনাকে উপহার হিসাবে দেওয়ার জন্য মোমের মূর্তি তৈরি করতে বলেছিলেন


প্রসঙ্গতঃ, ২০০৮ সালে কলকাতায় এসেছিলেন দিয়েগো মারাদোনা। সেই সময়ে বামফ্রন্ট সরকারে রাজ্যের ক্রীড়া মন্ত্রী ছিলেন সুভাষ চক্রবর্তী। তিনি আসানসোলের সুশান্ত রায়কে মারাদোনাকে উপহার হিসাবে দেওয়ার জন্য মোমের মূর্তি তৈরি করতে বলেছিলেন। কিন্তু হাতে সময় ছিলো মাত্র ১৮ দিন।
এদিন সুশান্ত রায় বলেন, এত কম সময়ে একটা পূর্ণাবয়ব মূর্তি তৈরি করা যায় না। বলতে গেলে তা একটা অসম্ভব কাজ ছিলো । কমপক্ষে দেড় মাসের আগে একটা মোমের মূর্তি তৈরি করা যায় না। তবু আমি জেদ ধরি যে, এমন একজনের মূর্তি আমাকে তৈরী করতেই হবে মন্ত্রীর দেওয়া সময়ের মধ্যে। মনের ইচ্ছার জোরে রাতদিন এক করে ১৫ দিনের মধ্যে মারাদোনার মোমের মূর্তির কাজ শেষ করি। কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে হওয়া এক অনুষ্ঠানে সেই মূর্তি শিল্পী সুশান্ত রায়ের হাতে দিয়েই দেওয়ানো হয়েছিলে মারাদোনাকে। দোভাষির সাহায্যে মারাদোনা শিল্পী সুশান্ত রায়কে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি তার হাতের কাজের প্রশংসা করেছিলেন ।


তবে তার এই স্মৃতির মাঝে সুশান্ত রায়ের আক্ষেপ রয়েছে। তার তৈরী সেই মূর্তিটি ফুটবলের রাজপুত্রের দেশ আর্জেন্টিনা নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী প্রয়াত হওয়ায় সেই মোমের মূর্তিটি তখনকার মতো শিল্পীর কাছেই থেকে যায়। পরে মারাদোনার ছোঁয়া পাওয়া সেই মূর্তিটি কলকাতার ওয়াক্স মিউজিয়ামে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে সেখানেই তা রয়েছে।


‘হ্যান্ড অফ গড’ গোল খ্যাত দুযুগেরও বেশি সময় ধরে গোটা বিশ্বের ফুটবল প্রেমীদের মনে থাকা মারাদোনার মৃত্যুর খবর পেয়ে শিল্পী শোকাহত। তিনি বলেন, ৬০ বছর বয়সটা মারা যাওয়ার সময় নয়। আমরা অসময়ে ফুটবলের রাজপুত্রকে হারালাম। মূর্তির পায়ে যে ফুটবলটি ছিলো সেটি নিয়ে তিনি খেলেছিলেন। ড্রিবলিংও করেছিলেন। সেই ফুটবল আসানসোলেই রয়েছে। মোমের মারাদোনা রয়েছেন কলকাতায় । কিন্তু তিনি আজ চলে গেলেন সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে।

মারাদোনাকে রাজকীয় ভাবে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়েছিলো


উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের কলকাতার সেই অনুষ্ঠানে মারাদোনাকে রাজকীয় ভাবে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়েছিলো। তাকে উপলক্ষ করে হওয়া সেদিনের প্রীতি ম্যাচের আগে ফুটবলপ্রেমী মানুষেরা ১০ মিনিটের জন্য তাঁর পায়ের জাদু দেখেছিলেন। যা আজও সবার স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করছে। মারাদোনা না থাকলেও, কেউ তা ভুলবেন না। আর আমার কথা তো আলাদা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *