ASANSOLASANSOL-BURNPURKULTI-BARAKARLatestPANDESWAR-ANDALRANIGANJ-JAMURIA

রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ধোঁয়াশায় রেখে কলকাতা গেলেন জিতেন্দ্র তেওয়ারি, শহর জুড়ে ছিঁড়ে ফেলা হলো ছবি, কালি দেওয়া হল পোস্টারে


বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ১৮ ডিসেম্বরঃ আসানসোল পুরনিগমের পুর প্রশাসক সহ দলের সব পদ ছাড়ার পরে বৃহস্পতিবার জানিয়েছিলেন বিজেপিতে যাবোনা। শুক্রবার সকালে নিজের সেই অবস্থানে অনড় থেকে নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ধোঁয়াশায় রেখে কলকাতায় চলে গেলেন জিতেন্দ্র তেওয়ারি। সঙ্গে নিয়ে গেলেন স্ত্রী চৈতালী তেওয়ারিকে। সঙ্গে এও বলে গেলেন, কলকাতায় মেয়ের সঙ্গে দুদিন কাটিয়ে আসানসোলে ফিরে নিজের পুরনো পেশা উকালতি করবেন। তার এই পেশায় সঙ্গী হিসাবে থাকবেন স্ত্রী। সত্যি কি তাই? তা তো সময়ই বলবে।


কিন্তু, তার আসানসোল ছাড়ার কয়েক মুহুর্তের মধ্যেই আসানসোলে বাসস্ট্যান্ড থেকে ছিঁড়ে ফেলা হলো জিতেন্দ্র তেওয়ারি ছবি। সেই পোস্টার মাটিতে ফেলে পায়ে মাড়িয়ে জিতেন্দ্র তেওয়ারি নামে উঠলো মুর্দাবাদ ধ্বনিও। বিশ্বাসঘাতক দল থেকে দূর হয়েছে, এই দাবিতে বাজি ফাটিয়ে , লাড্ডু বিলি করে উচ্ছ্বাসে মাতলেন তৃণমূল কংগ্রেসেরই একাংশ। দলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত মোটর ভেহিক্যালস ট্রেড ইউনিয়নের নেতা ও কর্মী শুক্রবার সকালে জিতেন্দ্র তেওয়ারি ছবি দেওয়ার পোস্টার, ব্যানার ও হোডিং ছিঁড়ে ফেলেন।

তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা রাজু আলুওয়ালিয়া নেতৃত্বে কর্মীরা রাস্তায় নেমে পড়েন তার ছবি দেওয়ার পোস্টারে কালি লেপতে।
তবে দিনের শুরুটা হয়েছিলো আসানসোলের রানিগঞ্জের টিডিবি কলেজ থেকে । রানিগঞ্জের টিডিবি কলেজের ছাত্র সংসদের অফিসে রাখা জিতেন্দ্র তেওয়ারির ছবিতে কালি লেপে দেয় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যরা। এই কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি ছিলেন এই জিতেন্দ্র তেওয়ারি। দুদিন আগে তিনি সেই পদ থেকে ইস্তফা দেন। তারপর এই তৃনমুল ছাত্র পরিষদের কর্মীরা তার প্রতিবাদে কলেজে মিছিল করেছিলো। কিন্তু তার দল ছাড়ার পরে এদিন সেই কলেজেই দেখা গেলো একবারে উল্টো ছবি।

জিতেন্দ্র তেওয়ারি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন


এদিন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা রাজু আলুওয়ালিয়ার দাবি করে বলেন , মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই জিতেন্দ্র তেওয়ারিকে আসানসোলের পুর চেয়ারম্যান থেকে মেয়র করেছেন। দলের টিকিট দিয়ে জিতিয়ে বিধায়ক করেছিলেন। দলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছিলেন। পরে পুর প্রশাসকের দায়িত্বও দেন। সেই জিতেন্দ্র তেওয়ারি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন দল ও দলনেত্রীর সঙ্গে। তার আরো অভিযোগ, তিনি পুরকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন। তবু মুখ্যমন্ত্রী তাকে সতর্ক করে কাজ করার সুযোগ দিয়েছিলেন। সেই বিশ্বাসঘাতক জিতেন্দ্র তেওয়ারির ছবি আমরা শহরে দেখতে চাই না। তাই ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে।


উল্লেখ্য বৃহস্পতিবারই আসানসোল পুরনিগমের পুর প্রশাসকের পদ ও দলের পদ থেকে ইস্তাফা দিতেই পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক অফিস দখল করে নেশ তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ও কর্মীরা। তার নামাঙ্কিত বোর্ডও সেখান থেকে খুলে ফেলে দেওয়া হয়। তারপরেই শুক্রবার সকাল থেকে শহরজুড়ে দেখা যায় জিতেন্দ্র তেওয়ারির বিরোধিতায় সরব হওয়ার ছবি ।

শুক্রবার সকালে কলকাতার উদ্দেশ্যে সস্ত্রীক জিতেন্দ্র তেওয়ারি যখন যান, তখন দেখা যায় তার সরকারি নিরাপত্তা রক্ষী তুলে নেওয়া হয়েছে। যাওয়ার আগে তার কাছে জানতে চাওয় হয় তিনি বিজেপিতে যোগদান করছেন কিনা ? উত্তরে তিনি বলেন আপাতত মেয়ের বাড়িতে যাচ্ছি। গত কয়েক দিন ধরে যা হলো, তাতে মেয়ে খুব টেনশনে আছে। দুদিন পরে আসানসোল ফিরে এসে আমার পুরোনো পেশায় নামবো।

তিনি আরো বলেন, তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়েছি বলে অন্য কোনও রাজনৈতিক দলে যোগদান করতেই হবে এই রকম কোন মানে নেই। শহরে তার ছবিতে কালি লেপা ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার প্রসঙ্গে বলেন, আমি তৃণমূল ছেড়েছি। অন্য দলে তো এখনো যোগ দিইনি। এইরকম প্রতিহিংসার তো কোনও মানে হয় না। শহরবাসী নয়, যে দল ছেড়েছি তাদের একাংশ হয়তো এই কাজ করছেন। যে দলে আমি নেই সেই দলের নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। এদিন জিতেন্দ্র তেওয়ারি বলেন, সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপন করতে চাই।

দলের কাছে মনে হয়েছিল আমার জীবনের এতদিন মূল্য ছিল

নিরাপত্তারক্ষী তুলে দেওয়া প্রসঙ্গে বলেন, দলের কাছে মনে হয়েছিল আমার জীবনের এতদিন মূল্য ছিল। এখন বোধহয় আর কোন মূল্য নেই । তবে তিনি কোন পথে যাচ্ছেন সে কথা কিন্তু পরিষ্কার করলেন না।


অন্যদিকে শহর জুড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের একাংশকে দেখা যায় উল্লাস করতে । অনেককেই সোশ্যাল মিডিয়াতেও তার নামে কটু মন্তব্য করতে দেখা যায় । এই বিষয়ে জিতেন্দ্র তেওয়ারি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। শুধু বলেন, সবকিছু আসানসোলের মানুষ দেখছেন।

Leave a Reply