ASANSOLASANSOL-BURNPURBengali News

তৃনমুল কংগ্রেসের নতুন জেলা সভাপতির ডাকা প্রথম বৈঠকেই গরহাজির জিতেন্দ্র তেওয়ারি, বিজেপির বিরুদ্ধে বোঝাতে আরো বেশী করে মানুষের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন মন্ত্রী মলয় ঘটক

তৃনমুল কংগ্রেসের নতুন জেলা সভাপতির ডাকা প্রথম বৈঠকেই গরহাজির জিতেন্দ্র তেওয়ারি

বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ২৪ জানুয়ারিঃ পশ্চিম বর্ধমান জেলার তৃনমুল কংগ্রেসের নতুন জেলা সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের ডাকা প্রথম বৈঠকেই গরহাজির থাকলেন আসানসোল পুরনিগমের প্রাক্তন পুর প্রশাসক, প্রাক্তন জেলা সভাপতি জিতেন্দ্র তেওয়ারি। রবিবার দুপুরে আসানসোলের রবীন্দ্র ভবনে এই বৈঠকটি হয়।

তৃনমুল কংগ্রেসের নতুন জেলা সভাপতির ডাকা প্রথম বৈঠকেই গরহাজির জিতেন্দ্র তেওয়ারি,

যদিও এদিন সকালে বার্ণপুরে একটি অরাজনৈতিক অনুষ্ঠানে রাজ্যের ক্রীড়া ও যুবকল্যান দপ্তরের মন্ত্রী অরুপ বিশ্বাসের সঙ্গে পান্ডবেশ্বরের বিধায়ক জিতেন্দ্র তেওয়ারি উপস্থিত ছিলেন। কেন এদিন বিকালে দলের জেলা সভাপতির ডাকা বৈঠকে গরহাজির ছিলেন তিনি, তার জবাব অবশ্য জিতেন্দ্র তেওয়ারি দিয়েছেন।

তিনি বলেন, আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি আসানসোলে কেন্দ্রীয় প্রতি মন্ত্রী তথা সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় ও শুভেন্দু অধিকারীর রোডশো ও সভা রয়েছে। তার পাল্টা আমি সেদিন পান্ডবেশ্বর কর্মসূচি নিয়েছি। তার প্রস্তুতি রয়েছে। তাই আমি এদিন আমি যে আসানসোলের বৈঠকে থাকতে পারবো না, তা জেলা সভাপতিকে জানিয়েছি। আমি তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে আছি।


তবে দলের ডাকা বৈঠকে জিতেন্দ্র তেওয়ারি না আসায় আসানসোল তথা পশ্চিম বর্ধমান জেলা রাজনীতিতে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে। এদিনের বৈঠকে জেলার সব বিধায়কের পাশাপাশি সবকটি ব্লকের সব শাখা ও সংগঠনের সভাপতি থেকে বুথের পদাধিকারীরা ছিলেন।

সেই বৈঠকে দলের সবাইকে ভেদাভেদ ভুলে আগামী বিধান সভা নির্বাচনে বিজেপিকে হারাতে এখন থেকেই আহ্বান জানান রাজ্যের শ্রম ও আইন তথা জেলার চেয়ারম্যান মলয় ঘটক। মন্ত্রী এদিনের বৈঠক থেকে দলের ব্লক থেকে বুথ স্তরের নেতাদের কি করতে হবে, তার পথও বাতলে দেন৷


মন্ত্রী এদিন দলের নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, কোথাও কোন মানুষের সঙ্গে কোনরকম দূর্ব্যবহার করবেন না। মানুষ কিছু বললে, তা নিজেদের ভুল ভেবে শুধরে নিতে হবে। দলের কোন নেতার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে, তা জেলা সভাপতি ও বিধায়ককে বলতে হবে। বেশী হলে রাজ্যকে জানাতে হবে। কোনভাবে সংবাদ মাধ্যম বা সোশাল মিডিয়ায় তা প্রকাশ করবেন না।

দলে ত্রুটি বিচ্যুতি থাকতে পারে। তা দলের ভেতরে আলোচনা করে মিটিয়ে নিতে হবে। কোনভাবেই নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের হাতে তা তুলে দেওয়া যাবেনা। ব্লক ও বুথ স্তরে মিলেমিশে দলের কাজ ও সরকারের প্রচার করতে হবে। কোন আন্দোলন ও মিছিল মিটিং করতে হলে সভাপতি ও বিধায়ক নিজেদের মধ্যে কথা বলে ঠিক করতে হবে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত রাজ্য সরকারের যেসব প্রকল্প আছে, সেগুলো আরো ভালো করে মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে

মলয় ঘটক আরো বলেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার যে শ্রমিক ও কৃষক বিরোধী তা জেলার সব ব্লকে গিয়ে প্রচার করতে হবে। মনে রাখতে হবে আমাদের জেলার অনেকটা কয়লাখনি ও রেলের অংশ। দলের শ্রমিক সংগঠনকে ঐসব এলাকায় গিয়ে কেন্দ্র সরকারের রেল ও খনি বন্ধ ও বেসরকারি করে দেওয়া পরিকল্পনা বেশী করে বোঝাতে হবে। ভোটার তালিকা ধরে দলের মহিলা ও যুব সংগঠনকে ভোটারদের বাড়ি গিয়ে তাদের মনোভাব বুঝতে হবে। এদিনের বৈঠকে মন্ত্রী দাবি করেন যে, আমি সারা রাজ্য ঘুরছি। তা দেখে আমার মনে হচ্ছে, শুধু এবার নয়, যতদিন বেঁচে থাকবেন মমতা বন্দোপাধ্যায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে থাকবেন।


বৈঠকে জেলার অন্যতম মুখপাত্র বিধায়ক তাপস বন্দোপাধ্যায় দলের নেতাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, পদের পেছনে দৌড়াবেন না। কর্মী হয়ে সবার মধ্যে থাকুন, তাহলেই দেখবেন পদ পেয়েছেন। আর কারোর সমালোচনা ও অভিযোগ করার আগে দেখুন, সেটা করার যোগ্যতা আপনার আছে কিনা? দল আপনাকে যে দায়িত্ব ও কাজ দিয়েছে সেটা ভালোভাবে করুন। তাহলে দেখবেন, কারোর সমালোচনা করতে হচ্ছে না।


বৈঠকে জেলা সভাপতি নেতা ও কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, এদিন আপনাদেরকে যা বলা হলো, সেইমতো কাজ এখন থেকেই করুন। দলকে এবারেও জেতাতে হবে। মমতা বন্দোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রী করতে হবে।


প্রসঙ্গতঃ, ২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর আচমকাই প্রথমে আসানসোল পুরনিগমের পুর প্রশাসক পদ ও পরে দলের জেলা সভাপতি থেকে ইস্তফা দেন ও দল ছাড়েন জিতেন্দ্র তেওয়ারি। তবে দুদিন পরে নিজের ভুল বুঝতে পেরে আবার তিনি তৃনমুল কংগ্রেসে ফিরে আসেন। তবে দল তাকে আর পুরনো পদে ফেরায় নি। একমাস পরে আসানসোল পুরনিগমের নতুন পুর প্রশাসক হন জিতেন্দ্র তেওয়ারি। আর জেলা সভাপতি পদে বসানো হয় দূর্গাপুর পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায়কে।

Leave a Reply