ক্ষুব্ধ একাধিক কংগ্রেস নেতা কর্মীদের নিয়ে দলবদলে গেলেন তৃনমুল কংগ্রেসে
আসানসোল উত্তর বিধান সভা কেন্দ্র দলের প্রার্থী নেই বলে ক্ষোভ
বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ৬ এপ্রিলঃ নির্বাচনের ঠিক আগে আসানসোল উত্তর বিধান সভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী মলয় ঘটকের হাত ধরে কংগ্রেস ছেড়ে শাসক দলে যোগদান করলেন আসানসোলের একাধিক প্রথমসারীর নেতা। যারমধ্যে অন্যতম হলেন দীর্ঘদিনের জেলা কংগ্রেস সম্পাদক শাহিদ পারভেজ, পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেসের সংখ্যালঘু সেলের রাজ্য সম্পাদক জিতু সিং, জেলা কংগ্রেস কমিটির নেতা ভিনসেন্ট হুইলার সহ বেশ কয়েকজন।
সোমবার রাতে আসানসোলের জিটি রোডের রাহালেন মোড়ে কংগ্রেসের আসানসোলের কার্যালয়ে এই যোগদান কর্মসূচি উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানে হয়। ঐসব নেতাদের সঙ্গে প্রায় ২০০ জন যুব কংগ্রেস, সেবা দলের কর্মী ও সমর্থকেরা যোগদান করেন তৃণমূল কংগ্রেসে ।তৃনমুল কংগ্রেসে এই যোগদানের পরে বদলে দেওয়া হয় কংগ্রেস কার্যালয়ের ব্যানার। প্রায় ১২ বছর আগে শহরের প্রাণকেন্দ্রে তৈরি হওয়া আস্ত কংগ্রেসের অফিসটাই তৃণমূলের দখলে চলে গেলো বিধান সভা নির্বাচনের মুখে। সেখানে এদিন থেকে কংগ্রেসের পতাকার পরিবর্তে তৃণমূল কংগ্রেসের পতাকা উড়ল। তৃনমুল কংগ্রেসের সাইনবোর্ড টাঙানো হয় কার্যালয়ের দেওয়ালে।
এই যোগদানের পরে মলয় ঘটক বলেন, বাংলায় যারা নিঃস্বার্থভাবে রাজনীতি করছেন, তারা সবাই আস্তে আস্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাশে আসছেন। এর আগেও আসানসোলের যারা কংগ্রেসের নেতা ছিলেন তারা তৃণমূলে চলে এসেছেন। যে তিনজন নেতা ও তাদের সঙ্গে প্রায় দুশো জন সক্রিয় কর্মী তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিলেন তারা দেখেছেন আসানসোল উত্তর কেন্দ্রটিতে কংগ্রেস প্রার্থী দিতো। এবার সেখানে তারা সেই আসনটি সিপিএমকে ছেড়েছিলো। কিন্তু সিপিএম প্রার্থী না দিয়ে অন্য একটি দলকে দিয়ে দেয়। এইসব কিছু নিয়ে কংগ্রেস নেতা ও কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। শুধু তাই নয় আমি বা আমরা কংগ্রেস করতাম, পরে তৃণমূলে এসেছি। তখনও কিন্তু এরা সকলেই কংগ্রেস করতেন ও আসানসোলে কংগ্রেসকে ধরে রেখেছিলেন। তাই এরা চলে আসায় আসানসোলের পুরো কংগ্রেসটাই তৃণমূল কংগ্রেস হয়ে গেলো ।
দলবদল করার পরে কংগ্রেসের দীর্ঘদিনের জেলা সম্পাদক তথা এবারের জামুরিয়া কেন্দ্রের দলের পর্যবেক্ষক শাহিদ পারভেজ বলেন ৩২ বছর কংগ্রেস দল করে আজ বুঝতে পারলাম যে, দলটা সিপিএম ও আরএসএসের কথা মতো চলছে। এরা জাত ও ধর্মকে সামনে রেখে মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে। বিজেপির হাত শক্ত করতে সিপিএম ও কংগ্রেস উঠে পড়ে লেগেছে। আজ সারাদেশে সমস্ত গরীব ও ধর্মনিরপেক্ষ মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত একজন মহিলা লড়াই করছেন। যাকে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা পর্যন্ত ভয় পাচ্ছেন। ঠিক এই সময় যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে গিয়ে আমরা না দাঁড়াই তাহলে আমাদের উত্তরসুরীদের কাছে জবাব দিতে পারব না। আমরা সেই কারণেই সবাই মিলে দল পরিবর্তন করলাম। পাশাপাশি আমার হাতে তৈরি করা এই অফিস অনেককে নিয়ে কংগ্রেসের পতাকা খুলে তৃণমূল কংগ্রেসের পতাকা লাগিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের অফিসে পরিণত করলাম।
অন্যদিকে পশ্চিম বর্ধমান জেলা কংগ্রেসের সভাপতি দূর্গাপুরের এবারের প্রার্থী দেবেশ চক্রবর্তী বলেন, শুনেছি কয়েকজন নেতা সহ বেশ কিছু কর্মী তারা কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে চলে গেছেন। সঙ্গে দলের অফিসে চলে গেছে। আমি যতদূর খবর রাখি তাতে কংগ্রেসের খুব একটা ক্ষতি হবে না। এই বিষয়টা যেখানে জানানোর সেখানে আমি জানিয়েছি। এর আগেও তৃণমূল কংগ্রেস এমন অফিস দখলের ঘটনা ঘটিয়েছে।
আসানসোল উত্তর কেন্দ্রে আব্বাস সিদ্দিকীর দল আইএসএফের প্রার্থী দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি তিনি বলেন, আমাদের প্রার্থী ওখানে নেই । সিপিএম আসনটি ছেড়ে দিয়েছে। আমরা সমর্থন করছি মাত্র। দেবেশ বাবুর আগে এই জেলায় কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্বে থাকা তরুণ রায় বলেন, একটা গোটা অফিস এবং সঙ্গে আসানসোলের নেতা ও কর্মীরা সবাই তৃণমূল কংগ্রেসে চলে কেন গেলেন, এর জবাব প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী দিতে পারবেন। আমি আর কি বলবো।
তবে আসানসোলে একাধিক কংগ্রেস নেতাদের দলবদল অবশ্যই তৃনমুল কংগ্রেসকে লাভ দেবে বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।