Bengali NewsFEATUREDPoliticsPOLL 2021

জিতেন্দ্র তিওয়ারি কে কখনোই বহিরাগত বলা যাবে না, অভিমত সমাজকর্মীদের

বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য, আসানসোল। জিতেন্দ্র তিওয়ারি কে কখনোই বহিরাগত বলা যাবে না। শুধু তাই নয়, তিনি আসানসোলের মেয়র হয়ে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের জন্য বাংলা একাডেমী থেকে বিদ্যাসাগর গ্যালারি, বাংলার শিল্পাঞ্চলের বুদ্ধিজীবী শিল্পীদের দাবি মেনে কফি হাউস ,রবীন্দ্রভবনের কয়েক কোটি টাকায় সংস্কার করেছেন ।তা অতীতের কোনও  মেয়র বা পুরসভার চেয়ারম্যানকে করতে দেখা যায়নি। এমন অভিমত পোষণ করেন খোদ  সিপিএমের জেতা বিধায়ক আইনজীবী থেকে শুরু করে কবি-সাহিত্যিক সমাজকর্মীরা।

Jitendra Tiwari file photo

 জিতেন্দ্র তিওয়ারি পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভায় প্রার্থী হবার পর তৃণমূলের একাংশ বারবার অভিযোগ করছেন তিনি বহিরাগত। ভিন রাজ্য থেকে এখানে এসেছেন এবং তিনি বাংলা ভাষাভাষী নন। তৃণমূল সুপ্রিমোর দৌলতেই আজকে তিনি একজন সাধারন রাজনৈতিক কর্মী থেকে বড় জায়গায় পৌঁছেছেন। তৃণমূলের হয়ে প্রচুর ক্ষমতা ভোগ করেছেন। এই ইস্যুটি এবার পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভা রীতিমতো আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।

Read Also শেষ মুহুর্তে দলের প্রার্থীর সমর্থনে সভায় এলেন না মিম সুপ্রিমো আসাদুদ্দিন ওয়েসি

এই বিষয়ে জিতেন্দ্র তিওয়ারি নিজেই বলেন আমার ছোটবেলা কেটেছে একেবারেই আসানসোল সংলগ্ন একটা কোলিয়ারির আবাসনে। আমার পড়াশোনা থেকে শুরু করে সবই এখানেই। এমনকি আইনজীবী পেশার কাজটাও আসানসোল আদালতেই। আর আমি আলাদা করে হিন্দি বাংলা ভাষা বুঝিনা, শিল্পাঞ্চলের সব মানুষের সাথেই আমি আছি আমি ছিলাম আমি থাকবো।

আসানসোল ভ্রাতৃত্বের শহর। এখানকার যারা কবি-সাহিত্যিক তাদের দাবি মেনে আমি পৌরসভার মেয়র থাকাকালীন বাংলা একাডেমি করি এবং বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে কবিতার বই। প্রকাশ করেছি। বাংলাভাষী কবিরা কবিতা লিখেছেন সেখানে। তাদের কবিতা হিন্দিতে অনুবাদ হয়েছে। আবার হিন্দিভাষী কবিদের কবিতা বাংলায় অনুবাদ হয়েছে ওই বইয়ে। দুই ভাষার কবিদের একটা জায়গায় আনার চেষ্টা করেছি।

এই শিল্পাঞ্চলে শিল্পীরা বহুদিন ধরে বলেছিলেন আসানসোলের নিজস্ব একটা আর্ট গ্যালারি দরকার ।আমি তাই বিদ্যাসাগরের নামে একটি আর্ট গ্যালারী তৈরি করেছি। এখন সেখানে নিয়মিত ছবি প্রদর্শনী হয়। এখানকার সাংবাদিক, কবি , সাহিত্যিক,আবৃত্তিকার বন্ধুরা আমাকে বলেছিলেন কলকাতায় কফি হাউস’ আছে। আমাদের একটা কফি হাউস দরকার। সেখানে আমরা আড্ডার ব্যবস্থা করতে পারি । রবীন্দ্র ভবন এলাকায় আমি মেয়র থাকাকালীন একটি কফি হাউস তৈরি করে দিয়েছি। একইভাবে এমন অনেক কাজ আমি করেছি।

Read Also শহর জুড়ে চাঞ্চল্য, ” এবার ঘটক বিদায় ” লেখা ফ্লেক্স টাঙ্গালো বিজেপি

আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ হিন্দিভাষী  ব্যবসায়ীদের আপনি ধরে ধরে ফুটপাতে এনে দিয়েছেন। এটা তিনি অস্বীকার যেমন করেন সঙ্গে সঙ্গে বলেন মেয়র থাকাকালীন আমি আরেকটি বড় কাজ করেছি বাংলা ভাষীদের জন্য। আসানসোল পৌর নিগম ট্রেড লাইসেন্সের নবীকরণ কিংবা নতুন করে করানোর ক্ষেত্রে অন্য ভাষার সাথে বাংলা ভাষায় বোর্ডে লিখতে হবে দোকানের নাম । তা না হলে নতুন করে লাইসেন্স পাওয়া যাবেনা ।এটা আগে ছিল না ।যারা আমাকে বহিরাগত বা হিন্দিভাষী দের পক্ষ নিয়ে কাজকর্ম করার কথা বলেন তারা যে সঠিক বলেন না এই ঘটনাগুলো তা প্রমাণ করে।

আসানসোল বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি ও সিপিআইএমের প্রাক্তন বিধায়ক তথা আসানসোলের জেলা আদালতের আইনজীবী অমিতাভ মুখোপাধ্যায় বলেন যারা জিতেন্দ্র তিওয়ারি কে বহিরাগত বলছেন, হিন্দিভাষী প্রতিনিধি বলছেন তারা সঠিক বলছেন না। কেননা তৃণমূলে তাকে আগে পুরসভার চেয়ারম্যান এবং পুরসভার মেয়র করেছিল।তাকে তৃণমূল বিধায়ক করেছিল। আজ এসব বলার কোন যুক্তি নেই। আর একথা সত্যি তিনিতো আসানসোলের বাংলা ভাষার সাহিত্য সংস্কৃতির জন্য কিছু কাজ তো করেই ছেন। আসানসোল আদালতে আইনজীবী হিসেবেও তার সাথে আমাদের প্রত্যেকের সম্পর্কই যথেষ্ট ভালো।

 আসানসোল শিল্পাঞ্চলের শুধু নয় রাজ্যের অন্যতম বিশিষ্ট কবি বিকাশ গায়েন অমিতাভের সুরেই  বলেন যারা এইসব বলছেন তাদের নৈতিক অধিকার নেই  তাকে বহিরাগত বলার । যার বাবা এখানে খনি এলাকার কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন যিনি নিজেই একটা খনি আবাসনে বেড়ে উঠেছেন এখানে আইনের পেশার সাথে যুক্ত হয়েছিলেন এবং এখানকার নাগরিকদের কাজকর্ম নিয়ে ভাবনা নিয়ে ভেবেছেন তাকে বহিরাগত বলার কোন যুক্তি আছে বলে আমি কিছুতেই মনে করতে পারি না ।

আসানসোলের বিশিষ্ট গল্পকার লেখক মনোজ মাজি বলেন দীর্ঘদিন ধরে সাহিত্য করছি এবং সাহিত্য করতে গিয়ে দেখেছি বই মেলায় তার ভূমিকা, কফি হাউস ,আট গ্যালারি করাতে তার যে ভূমিকা এটা ভাবাই যায় না। তাই তাকে বহিরাগত বলতে আমরা রাজি নই ।আসানসোলের  তিনি যে উন্নয়ন করেছেন যে দল থেকে করুন না কেন তা অতীতে হয় নি।  ভবিষ্যতে হবে কিনা জানিনা।

অন্যদিকে ভাবনা সামাজিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা লিটল ম্যাগাজিনের সংগঠক ও আজকের যোধন পত্রিকার সম্পাদক বাসুদেব মন্ডল বলেন আমরা ওনার কাছে আবেদন করেছিলাম  বছরের পর বছর আসানসোলের দোকানগুলোয় বাংলা ভাষায় কোন সাইনবোর্ড নেই। বাংলা ভাষা ছিল ব্রাত্য। আসানসোল শহরের রাস্তার নামে কোথাও বাংলায় ছিল না।বাংলায় সাইনবোর্ড ছিল না। উনি পৌরসভা থেকে নিয়ম করে এ কাজটা করিয়ে দিয়েছেন।  এটা সত্যি কথা আবার এটাও ঠিক ওনার আমলে আসানসোলের ফুটপাতের দখলে হিন্দিভাষী দের প্রাধান্য কিন্তু লক্ষণীয়।  যদিও আমরা আলাদা করে এটা ভাবি না ।কিন্তু আসানসোল মহাকুমাতে যেহেতু সব ধর্ম সব ভাষা সব জাতের মানুষ থাকেন তাই সকলের সার্বিক উন্নতি করতে যেকোনো ভাষার মানুষ এগিয়ে আসতে পারেন। এই ধরনের মানুষদের বহিরাগত কেন বলা হচ্ছে তা অবশ্য জানি না।

আসানসোলের অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ শিক্ষক অসীম রায় বলেন উনি অনেক উন্নয়ন করেছেন এটা সত্যি। আবার এটাও লক্ষ্য করে দেখেছি উনি মেয়র থাকাকালীন নিজের গোষ্ঠী তৈরি করে হিন্দিভাষী দেব সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন নানান ক্ষেত্রে ।সেটা হয়তো উনি তখন যে দলে ছিলেন সেই দল হিন্দিভাষী দের ভোট নেয়ার জন্য তাকে দিয়ে করাতে পারে।


তবে পাণ্ডবেশ্বর এর প্রার্থী নরেন চক্রবর্তী বলেন উনি বিধায়ক হিসেবে এলাকার কোনো কাজই করেন নি। মানুষ এখন ক্ষোভ উগলে দিচ্ছেন। আগামী ভোটে মানুষ জবাব দেবেন।

আসানসোলের তৃণমূলের এক বড় নেতা থেকে শুরু করে বেশ কিছু মানুষ দাবি করেছেন শহরের রবীন্দ্র ভবনের পিছনে কোটি কোটি টাকা খরচ হয়েছিল ।এই টাকা দিয়ে দুটো রবীন্দ্রভবন হতে পারত। এর তদন্ত হওয়া উচিত। একই সঙ্গে তাদের অভিযোগ আসানসোলের কফি হাউসের যে খরচ দেখানো হয়েছে এবং যা খরচ হয়েছে তার টেন্ডার নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত এবং তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় মেয়র থাকাকালীন দোকানের সাইন বোর্ডে বাংলা ভাষা লেখা সিদ্ধান্ত প্রথম নিয়েছিলেন। যদিও তা মাত্র কয়েকমাস কার্যকরী হবার পর বন্ধ হয়ে গেছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *