ASANSOLASANSOL-BURNPURBARABANI-SALANPUR-CHITTARANJANBengali NewsFEATUREDKULTI-BARAKARRANIGANJ-JAMURIA

আসানসোলের ৬ বিধান সভা কেন্দ্রেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই, নজরে উত্তর ও দক্ষিণ

বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল: পশ্চিম বর্ধমান জেলায় মোট বিধান সভা কেন্দ্রের সংখ্যা ৯। তারমধ্যে আসানসোল মহকুমা বা শিল্পাঞ্চলে রয়েছে ৬টি কেন্দ্র। সেই ৬ টির মধ্যে রানিগঞ্জ ও জামুড়িয়া বাদ দিলে বাকি ৪টি কেন্দ্রেই গত বিধান সভা নির্বাচনে সহজ জয় পেয়েছিলো তৃণমূল কংগ্রেস। বাকি দুটোয় জয় পায় সিপিএম। কিন্তু তারপরেও গত লোকসভা নির্বাচনে আসানসোল থেকে বড় জয় পায় বিজেপির বাবুল সুপ্রিয়। 


আসানসোল উত্তর বিধান সভাঃ ২০১৬ সালের নির্বাচনে এই কেন্দ্রে জয় পেয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী মলয় ঘটক। তারপরেও ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রে এগিয়ে ছিল বিজেপি। এবারও এই কেন্দ্রে রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটককেই প্রার্থী করেছে তৃণমূল। স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ও প্রচারের নিরিখে এগিয়ে তিনি। এখানে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন সমাজসেবী রাজ্য কমিটির নেতা কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়। এর আগে তিনি সরাসরি রাজনীতিতে ছিলেন না। এই কেন্দ্রে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী হয়েছেন আইএসএফের মহঃ মুস্তাকিম। মিমের প্রার্থী রয়েছেন এই কেন্দ্রে দানিশ আজিজ। এই কেন্দ্রে সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে। যা জয় পরাজয়ে একটা বড় ফ্যাক্টার। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সেই ভোট কাটাকাটি হলে সমস্যায় পড়তে পারে শাসক দল। 


 আসানসোল দক্ষিণ বিধান সভাঃ ২০১৬ সালের নির্বাচনে এই কেন্দ্রে বড় ব্যবধানে জিতেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এবারে তাপসবাবুকে এই কেন্দ্র থেকে সরিয়ে রানিগঞ্জে প্রার্থী করা হয়েছে। আসানসোল দক্ষিণে শাসক দলের প্রার্থী হয়েছেন তারকা সায়নী ঘোষ। রাজ্যে শাসকদলের উন্নয়ন ও দলীয় সংগঠনের উপর ভিত্তি করে ভোটযুদ্ধে সহজ জয় পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী সায়নী। অন্যদিকে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন সেলিব্রিটি দলের মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল। তিনি আবার আসানসোলের ভূমিকন্যা। সায়নীর বিরুদ্ধে ভোটে নেমে তিনি সেই প্রচারকেই সামনে রাখছেন। শাসক দলের প্রার্থীর গায়ে এঁটে দিয়েছেন বহিরাগতর তকমা। সংযুক্ত মোর্চার হয়ে সিপিএমের প্রার্থী করা হয়েছে প্রশান্ত ঘোষকে। তিনি আইনজীবি ও রাজনীতিতে আনকোরা। হিন্দু ও সরকার বিরোধী চোরা হাওয়া ভরসা বিজেপি প্রার্থীর। দুই সেলিব্রিটির লড়াইয়ে কে জেতে তার দিকে তাকিয়ে সবাই। 
 জামুড়িয়া বিধান সভাঃ জামুড়িয়া বামদূর্গ বলে পরিচিত। ২০১৬ সালে এই কেন্দ্র থেকে জয় পেয়েছিলেন সিপিএমের জাহানারা খান। এবার তাকে সরিয়ে প্রার্থী করা দেশজুড়ে শোরগোল ফেলে দেওয়া জেএনইউয়ের নেত্রী ঐশী ঘোষকে। তার প্রতিপক্ষ হিসাবে রয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনের নেতা হরেরাম সিং। বিজেপির তাপস রায়কে প্রার্থী করেছে । এই কেন্দ্রে প্রায় সবসময় সিপিএমের হাওয়া থাকলেও, এবার লাল হাওয়া কিছুটা বিজেপির দিকে গেছে বলে দাবি করেছে ওয়াকিবহাল মহল। এখানে গেরুয়া শিবিরের সংগঠনও ভাল। গত লোকসভা নির্বাচনে এখানে বিজেপি বামেদের ভোটে থাবা বসিয়েছিল। এবার সেই ভোটাররা ফিরে আসবে বলে দাবি বামেদের। তাই এই কেন্দ্রে লড়াইটা হবে ত্রিমুখী।


রানিগঞ্জ বিধান সভাঃ জামুড়িয়ার মতো রানিগঞ্জ বাম দূর্গ। ২০১৬ সালে এই কেন্দ্রে জয় পেয়েছিলেন সিপিএমের রনু দত্ত। এবার তাকে না দিয়ে সিপিএম প্রার্থী করেছে যুব নেতা হেমন্ত প্রভাকরকে। তৃণমূলের প্রার্থী এখানে রাজনীতিতে দক্ষ তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘাসফুল শিবিরের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলছে গত লোকসভা নির্বাচন। মোদি হাওয়ার উপর ভিত্তি করে এই বিধানসভা কেন্দ্রে সিপিএমের থেকে অনেক এগিয়ে ছিল বিজেপি। এই ব্যবধান ঘোঁচানোই তৃণমূলের বড় চ্যালেঞ্জ। এদিকে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন চিকিৎসক বিজন মুখোপাধ্যায়। তার ভরসা এখানে গত লোকসভা ভোটের বিজেপি হাওয়া। সিপিএম প্রার্থীর ভরসা মজবুত সংগঠন। তাপসবাবুর ভরসা স্বচ্ছ ভাবমূর্তি। এই কেন্দ্রের লড়াইটা তাই বেশ জমজমাট। ত্রিমুখী লড়াই হবে রানিগঞ্জেও।


 বারাবনি বিধান সভাঃ বারাবনি কেন্দ্রে পরপর দুবার জয় পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের বিধান উপাধ্যায়। ২০১৬ সালে এখানে বড় ব্যবধানে জিতেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী। এবারও প্রার্থী হয়েছেন তিনি। এই বিধানসভা কেন্দ্রটিতে দুটি ব্লক আছে। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে মোদি হওয়ায় ভর করে বারাবনি ব্লকে সামান্য ও সালানপুর ব্লকে বড় ব্যবধান জয় পেয়েছিল পদ্ম ফুল। এবার বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়র অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ যুব মোর্চার জেলা সভাপতি অরিজিৎ রায়। এখানে সংযুক্ত মোর্চার হয়ে কংগ্রেসের প্রার্থী করা হয়েছে রণেন্দ্রনাথ বাগচীকে। এই কেন্দ্রে জোর লড়াই অপেক্ষা করছে। তা হবে অবশ্যই ঘাসফুলের সঙ্গে পদ্মফুলের।


 কুলটি বিধান সভাঃ ১৫ বছর ধরে এখানের বিধায়ক তৃণমূলের উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। এবারেও তাকে প্রার্থী করেছে তৃনমুল কংগ্রেস। ব্যক্তি করিশ্মার পাশাপাশি এলাকায় উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের সুনাম রয়েছে। কুড়ি বছরের বেশি সময় ধরে তিনি পুর চেয়ারম্যান, তিনবারের বিধায়ক থাকার পরেও চারচাকা গাড়িতে চড়েন না । বিধানসভা ভোটে বড় ব্যবধানে তৃণমূল কংগ্রেসের জয় হলেও পর পর দুটি লোকসভা ভোটে বিজেপি বড় ব্যবধানে এগিয়েছিল এখানে । এবারের এখানে বিজেপির প্রার্থী এলাকার পরিচিত মুখ চিকিৎসক অজয় পোদ্দার। তিনি গত বিধানসভাতেও প্রার্থী হয়েছিলেন। সমাজসেবী ও চিকিৎসক হিসাবে তার সুনাম রয়েছে। এখানে সংযুক্ত মোর্চার হয়ে কংগ্রেসের প্রার্থী চণ্ডীদাস চট্টোপাধ্যায়। এবারে এখানে মূলত লড়াই উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অজয় পোদ্দারের।


 ইতিমধ্যেই তার হয়ে প্রচারে ঘুরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি, শুভেন্দু অধিকারী ও শাহনওয়াজ হোসেনরা। তবে তৃণমূল কংগ্রেসে র হয়ে কেউ আসেননি কুলটিতে । উজ্জ্বলবাবুই নাকি চাননি কেউ প্রচারে আসুক। সারা বছর মানুষের সঙ্গে থাকেন তাই তার বাড়তি প্রচারের প্রয়োজন নেই বলে দাবি। এবার জোরদার লড়াই তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপির। ঝাড়খণ্ড সীমানা ঘেঁষা কুলটির বিজেপির এবারের তুরুপের তাস অবাঙালি ভোট।

News Editor

Mr. Chandan | Senior News Editor Profile Mr. Chandan is a highly respected and seasoned Senior News Editor who brings over two decades (20+ years) of distinguished experience in the print media industry to the Bengal Mirror team. His extensive expertise is instrumental in upholding our commitment to quality, accuracy, and the #ThinkPositive journalistic standard.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *