ASANSOL

ভোটের অজুহাত দেখিয়ে চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ পুলিশের, ১৩ ঘন্টা রেল হাসপাতালের মর্গে পড়ে থাকলো করোনা আক্রান্তর দেহ

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, ২৫ এপ্রিলঃ শুধু কলকাতায় নয়, আসানসোলেও করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হওয়া বৃদ্ধর দেহ সৎকার করতে ১৩ ঘন্টারও বেশি সময় পার হয়ে গেলো। বৃদ্ধর দেহ সেই ১৩ ঘন্টা থাকলো আসানসোলের ডিভিশনাল রেল হাসপাতালে। তবে এই ঘটনায় জেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য দপ্তর ও রেল হাসপাতালের কোন গাফিলতি ছিলোনা। শুধু মাত্র আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশের উদাসীনতা, অবহেলা ও দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ সামনে চলে আসে।

পুলিশের দাবি, ভোটের কারণে দেহ সৎকারের ব্যবস্থা করতে দেরী হয়েছে। আর এরজন্য বৃদ্ধর বাড়ির লোকেদের ঘন্টার পর ঘন্টা আসানসোল রেল হাসপাতালের বাইরে অপেক্ষা করতে হয়েছে। আসানসোলের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত রেল কর্মী ঐ বৃদ্ধর মৃত্যু শনিবার দুপুর পৌনে বারোটা নাগায় হয় আসানসোল রেল হাসপাতালের আইসিসিইউতে। রাত একটার পরে পুলিশ এ্যাম্বুলেন্স এনে সেই দেহ সৎকার করতে নিয়ে আসানসোলের ২ নং জাতীয় সড়কের কাল্লা মোড় সংলগ্ন দোমহানি শ্মশানে। শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে।


জানা গেছে, গত চারদিন আগে শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে ৮৭ বছরের বৃদ্ধ আসানসোলের ডিভিশনাল রেল হাসপাতালের আইসিসিইউতে ভর্তি হয়েছিলেন। উপসর্গ থাকায় তার লালারস করোনা পরীক্ষার জন্য নেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসা চলাকালীন সেই পরীক্ষার রিপোর্ট আসেনি। শনিবার দুপুরে বৃদ্ধর মৃত্যু হওয়ার পরে রেল হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়, তিনি করোনা পজিটিভ। তাই মৃতদেহ পরিবারকে দেওয়া হবে না। রাত দশটার পরে আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশ মৃতদেহ সৎকার করবে। এক ঘন্টার মধ্যে বৃদ্ধর পরিবারের আধার কার্ডের নম্বর সহ যাবতীয় তথ্য পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে নিয়ে রেল হাসপাতাল কতৃপক্ষ জেলা প্রশাসনকে জানিয়ে দেয়। পরিবারের সদস্যদের রাত দশটার পরে হাসপাতালে আসতে বলা হয়। সেই পরিবারের সদস্যরা সেখানে পৌঁছে যান। তারা ঘন্টা দুয়েক অপেক্ষা করলেও পুলিশ হাসপাতালে না আসায় পরিবারের সদস্যরা থানার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

তখন থানা থেকে বলা হয়, রেল হাসপাতাল থেকে করোনা আক্রান্ত রোগীর দেহ তুলতে হবে, এমন কোন ইনফরমেশন তাদের কাছে নেই। এরও এক ঘন্টা পরে আসানসোল দক্ষিণ থানা থেকে দুই পুলিশ অফিসার আসেন। তারা হাসপাতাল কতৃপক্ষ ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে, নানা যুক্তি দিয়ে চলে যান। তারা বলেন , আমাদের এ্যাম্বুলেন্স নেই। বাড়ির লোকেরা এ্যাম্বুলেন্স দেবে। আমরা কি করবো। শেষ পর্যন্ত রাত একটার পরে দুটি এ্যাম্বুলেন্স হাসপাতালে আসে। প্রায় রাত দুটো নাগাদ আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশের একটি গাড়ি আসে ও ঐ বৃদ্ধ সহ দুজনের দেহ সৎকারের জন্য নিয়ে যায়।


জানা গেছে, রেল হাসপাতালের তরফে সবকিছু জেলা প্রশাসনকে সব জানানো হয়েছিলো। জেলা প্রশাসন থেকেও আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশকে মেল করে দুপুরেই জানিয়েছিলো। কিন্তু পুলিশ সেই মেল দেখে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দপ্তরের ঠিক করা এ্যাম্বুলেন্সকে জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি। বৃদ্ধর পরিবার বেশ কয়েকবার ফোন করায় রাত বারোটার সময় পুলিশ এ্যাম্বুলেন্স চালকের কাছে দেহ সৎকারের ইনফরমেশন পাঠায়। তারপর এ্যাম্বুলেন্স আসে।
আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশের সাফাই, ভোটের ব্যবস্থার কারণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যায়নি। ভবিষ্যতে যাতে এমন না হয়, তা দেখা হবে।
যদিও, জানা গেছে, শনিবারের ঘটনা নতুন। গত একমাসে এমন ঘটনা একাধিক দিন হয়েছে।
জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দপ্তর জানায়, পরিবার যাতে হয়রানির মুখে না পড়ে, তা দেখা হবে ও পুলিশকে বলা হবে।ভোটের অজুহাত দেখিয়ে চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ পুলিশের / ১৩ ঘন্টা রেল হাসপাতালের মর্গে পড়ে থাকলো করোনা আক্রান্তর দেহ

Leave a Reply