ASANSOLBengali NewsFEATUREDPOLL 2021

২০১৬ সালের তুলনায় ২০২১ সালে ছবি আলাদা, এবার বুথ মুখো হলেন না প্রায় ৫ শতাংশ ভোটার, জেলার ৭ কেন্দ্রেই কমলো ভোট

বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ২৮ এপ্রিলঃ ২০১৬ সালের বিধান সভা নির্বাচনের তুলনায় ২০২১ সালের নির্বাচনের ছবি অনেকটাই বলতে গেলে আলাদা। পশ্চিম বর্ধমান জেলার ৯ টি বিধান সভা কেন্দ্রের মধ্যে ৭ টি কেন্দ্রে গত বিধান সভা নির্বাচনের তুলনায় এবারে প্রায় ৫ শতাংশ ভোট কম পড়েছে। সবকিছু অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, এই ৫ শতাংশ ভোটার বুথ মুখো না হওয়ার অন্যতম কারণ হলো করোনা আতঙ্ক।

File photo

এছাড়াও রয়েছে, দলের প্রার্থী না থাকা, পছন্দসই প্রার্থী না মেলার মতো কারণও। তবে এমনটা নয় যে, এই ৭টি বিধান সভায় ভোটার কমেছে। ২০১৬ সালের বিধান সভা নির্বাচনের তুলনায় ২০২১ সালে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের এই ৭ টি বিধান সভা কেন্দ্রে গড়ে ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার করে ভোটার বেড়েছে।


করোনা আবহের মধ্যে ভোট হওয়ায় নির্বাচন কমিশন ভোটারদের আশ্বস্ত করতে সবরকমের প্রচার করেছিলো। এমনকি নতুন ভোটারদের ভোটদানে উৎসাহ দিতে নির্বাচন কমিশন সব পদক্ষেপ নেয়। তারপরেও বিধান সভা ভিত্তিক ভোট কম পড়ায়, নির্বাচনের কাজে থাকা সরকারি আধিকারিকরা করোনাকে দায়ী করছেন।

কমিশনের এই ভাবনার সহমত পোষণ করার পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ও দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন করে আসা নেতারা এর পেছনে আরো দুটি কারণের কথা উল্লেখ করেছেন। তারা বলেন, বেশ কিছু কেন্দ্রে দলের প্রার্থী ভোটে দাঁড়ায়নি। কয়েকটিতে মন মতো প্রার্থী হয়নি। এই দুই ক্ষেত্রে কোন একটি দলের কমিটেড ভোটাররা ভোট দেননি। যেমনটা আসানসোল উত্তর বিধান সভা কেন্দ্রের ক্ষেত্রে হয়েছে। এই কেন্দ্রে সিপিএমের বদলে প্রার্থী রয়েছে সংযুক্ত মোর্চার তরফে আইএসএফের।


মঙ্গলবার দুপুরের পরে জানা গেছে, সোমবার জেলায় ভোট পড়েছে ৭২.৪৪ শতাংশ। ২০১৬ সালে এই জেলায় ৭৭ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছিলো। গত বিধান সভা ভোটে পান্ডবেশ্বরে সবচেয়ে বেশি ৭৯.৭২ শতাংশ ভোট পড়েছিলো। সেখানে এবার এই কেন্দ্রে সবচেয়ে বেশি ৭৬.৪৭ ভোট পড়েছে। হিসাবে এবার এই কেন্দ্রে প্রায় ৩ শতাংশ ভোট কম পড়েছে। যদিও এই পান্ডবেশ্বরে গত বিধান সভা ভোটের তুলনায় প্রায় ২১ হাজার ভোটার বেড়েছে। রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটকের বিধান সভা কেন্দ্র আসানসোল উত্তরে ২০১৬ সালে ভোট পড়েছিলো ৭৩.৫০ শতাংশ। এবার সেই কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৬৯.২১ শতাংশ। হিসাবে এই কেন্দ্রে ৪ শতাংশ ভোট কম পড়েছে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে এই জেলার বারাবনি বিধানসভার চিত্তরঞ্জন রেল শহরের কথা। এবার এই শহরে ভোটদানের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কম । সাকুল্যে মাত্র ৪৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। যারমধ্যে ৬ এর পল্লীতে ভোটদানের হার মাত্র ৪২ শতাংশ। আবার ফতেপুর এলাকায় সেটা আরও কমে হয়েছে ৪০ শতাংশ। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছেন, করোনা আতঙ্কে এখানকার অনেকেই ভোট দিতে যান নি। করোনা আক্রান্ত ও তাদের পরিবারের লোকজন সংখ্যাটা প্রায় এক হাজারের মতো। যারা ঘরেই বন্দী রয়েছেন।

এছাড়াও করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেক রেলকর্মীর পরিবার শহর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ায় তারাও ভোট দিতে পারেননি। এরই সঙ্গে যোগ হয়েছে ভোটারদের দোদুল্যমান অবস্থা। বহু কট্টর বাা কমিটেড ভোটার যেমন ভোট দিতে দ্বিধায় ছিলেন, তেমনই দক্ষিণপন্থী বহু ভোটার বিজেপিকে রুখতে গিয়ে তৃণমূল না কংগ্রেস কোন দলকে ভোট দেবেন সেই চিন্তায় আর বুথ মুখোই হননি। এরই সঙ্গে কারণ রয়েছে ভোটের দিনের লাগামছাড়া গরম।

এই গরমে শরীর খারাপ হয়ে করোনা সংক্রমিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষেত্রেও ভোটারদের ঘর থেকে বুথ পর্যন্ত নিয়ে আসার যে তাগিদ অন্যান্যবারে লক্ষ্য করা যায় এবার তা একেবারেই ছিলনা। সব মিলিয়ে রেল শহরের পাশাপাশি গোটা আসানসোলের ভোটের পারদ ছিল অত্যন্ত নিম্নমুখী। বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত বিজেপি, তৃণমূল কংগ্রেস সংযুক্ত মোর্চার নেতৃত্ব।

Leave a Reply