সাইকেলের রিং দিয়ে অভিনব ভাস্কর্য তৈরি করলেন সালানপুর থানার ইন্সপেক্টর ইনচার্জ পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়
বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্জি।আসানসোল। করোনার কারণে স্কুল গুলো বন্ধ থাকায় দীর্ঘদিন ধরে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া ছাত্র-ছাত্রীরা সাইকেল নিয়ে আর স্কুলে যেতে পারছেন না । সেই ছাত্র-ছাত্রীদের ছোট থেকে বড় হয়ে ওঠার অদম্য ইচ্ছা কে ধরে রাখতে এবং চোখের সামনে সাইকেলে করে যারা স্কুল জীবন শেষ করে শুধু দেশে নয় বিশ্বসেরা হয়ে উঠেছেন এমন সব মানুষকে স্মরণ করেই সাইকেলের রিং দিয়ে অভিনব ভাস্কর্য তৈরি করলেন সালানপুর থানার ইন্সপেক্টর ইনচার্জ পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়। আর বিশ্ব্ব্ব সাইকেল দিবসকে মনে রেখে তিসরা জুন উৎসর্গ করলেন।




স্কুলে যেতে না পারলেও এই শিল্পীর কন্যাা ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী অনিশা তার আরো দু একজন বান্ধবীকে নিয়ে এই ভাস্কর্যের নিচে বসে সময় কাটাচ্ছে। আর সাইকেলের রিং গুলোকে মাঝেমধ্যে হাত বোলানোর চেষ্টা করছে। তার কালচারাল স্ট্রীট বা ভাস্কর্যের সড়কে নবতম সংযোজন হল “রাইজিং হাই”- অর্থাৎ উচ্চতার শিখরে। ফেলে দেওয়া নাট বল্টু, ৩৪৩ টি সাইকেলের ভাঙাচোরা লোহার চাকা বা রিম ও আনুষঙ্গিক ফেলে দেওয়াা যন্ত্রাংশ দিয়ে সালানপুর থানা প্রাঙ্গণে গড়ে উঠেছে দেশের অন্যতম এক দীর্ঘ ভাস্কর্য। পবিত্র বাবু জানান এই তাক লাগানো ৩৯ ফুট উচ্চতার, ২০ফুট বাই ২০ ফুট প্রস্থের ভাস্কর্য তৈরি করতে তিনি ব্যবহার করেছেন ফেলে দেওয়া ৪৪৩ টি সাইকেলের চাকা এবং প্রায় একান্ন কেজি লোহার ওয়াশার। নির্মাণে সময় লেগেছে দু’মাস। ঘূর্ণায়মান চাকার আদলে স্থাপিত সাইকেলের রিমগুলি ছুঁয়ে গেছে পরস্পরের উচ্চতাকে।
ভাস্কর্যের পাদদেশে পিঠে স্কুলব্যাগ নিয়ে এক ছাত্রী, সাইকেলে চেপে গতির আঙ্গিকে। সেই ছাত্রীর স্বপ্ন – এই উচ্চতাকে ছোঁয়ার। সেই লক্ষ্যেই সে এগিয়ে চলেছে। পবিত্র বাবুর ভাষায় এই ভাস্কর্য সেইসব পড়ুয়াদের প্রতি উৎসর্গিকৃত – যেমন অমর্ত্য সেন, প্রণব মুখার্জি, মনি ভৌমিক, এপিজে আবদুল কালাম – যারা সাইকেলে চেপে শিখর ছুঁয়েছেন। যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ছাত্র-ছাত্রীদের দিকনির্দেশ। আমার ষষ্ঠ শ্রেণীর স্কুল ছাত্রী মেয়েকে দেখে এই ভাবনা এসেছিল । আমার ছেলে অরিত্র সেও সাইকেলে করেে স্কুলে যাতায়াত করে। এই সময় স্কুল বন্ধ থাকায় তার কষ্টটা আমি বুঝি । ৩রা জুন বিশ্ব সাইকেল দিবস ছিল । এই ভাস্কর্যটি আমি সেই দিনটিকে মনে রেখে উৎসর্গ করলাম।
গতবছর প্রথম লকডাউনে পবিত্র বাবু প্রতীকী লকডাউন একটি ভাস্কর্য লোহার ফেলে দেওয়া জিনিস দিয়ে তৈরি করেছিলেন ।যেখানে একজন শ্রমিক একটি তালা ভাঙ্গার চেষ্টা করছে। তার আগেই ফেলে দেওয়া লোহার জিনিস নিয়ে একটি ছুটন্ত ঘোড়া তিনি ভাস্কর্য আকারে তৈরি করে থানার সামনে লাগিয়ে রেখেছেন। যা ইতিমধ্যেই বহু মানুষ দেখতে এসেছিলেন।
পেশার সাথে তার কোন বিরোধ নেই। পুলিশ প্রশাসন সামলানোর সাথে সাথে। শিল্প ও সংস্কৃতি চর্চাও তার জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। বললেন, ভাবনাটাই শেষ কথা। প্রকৃতি থেকে পাই, পরিবেশ থেকে শিখি, আর সেই ভাবনাটা মূর্ত হয়ে ওঠে শিল্পের অবয়বে। করোনা, লকডাউন সহ নানান প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মানুষ যখন অত্যন্ত চিন্তা প্রবণ হয়ে পড়েছেন, ইতিবাচক ভাবনা থেকে দূরে চলে যাচ্ছেন তখন একজন পুলিশ ইন্সপেক্টরের ভাস্কর্যে উচ্চতা ছোঁয়ার স্বপ্ন আগামী দিনের ছাত্র-ছাত্রী দেব অবশ্যই নতুন জীবনের দুয়ার খুলে দেবে।