ASANSOLPANDESWAR-ANDALRANIGANJ-JAMURIA

কেন্দ্রীয় সরকারের টাকা আসছে না, থমকে পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজ, সমস্যায় খনি এলাকায় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত ২৯ হাজার পরিবার

আবাসন তৈরি হলেও, হয়নি পরিকাঠামো, জমির জন্য মিলছে না এনওসি

বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্য, আসানসোল,: ২ বছর আগে কেন্দ্রীয় সরকার চুক্তি শেষ হওয়ার কারণে বকেয়া টাকা পাঠাচ্ছে না। অন্যদিকে রাজ্য সরকার ধসে ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের পুনর্বাসন প্রকল্পের জন্য যে জমি নির্বাচন করেছে সেইসব জমির নিচে কয়লা আছে, তারজন্য ইসিএলের পক্ষ থেকে এনওসি বা সবুজ সংকেত দেওয়া হচ্ছে না। আর এইসব কারণের জন্য প্রায় ২৯ হাজারের মতে পরিবারকে নতুন করে বাড়ি তৈরি করে দেওয়া যাচ্ছে না। যদিও ইতিমধ্যেই বারাবনি ও জামুড়িয়ায় একাধিক জায়গায় পুনর্বাসন প্রকল্পে প্রায় ১১ হাজার নতুন আবাসন তৈরি হয়েছে। পরিকাঠামো এখনো সম্পূর্ণ না হওয়ায় সেগুলিও এখনো বিলি করা যায়নি।
কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে টাকা না আসা ও ইসিএলের সবুজ সংকেত জমির ক্ষেত্রে না পাওয়ার জন্য সময়মতো কাজ হচ্ছে না অভিযোগ করেছেন আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ বা আড্ডার চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।


আসানসোল রানিগঞ্জ খনি শিল্পাঞ্চলে ধসে ক্ষতিগ্রস্ত ৪১৩৪৪ টি পরিবারকে চিহ্নিত করার পরে ছবি সহ পরিচয় পত্র দেওয়া হয়েছে। এইসব পরিবারকে পুনর্বাসন দেওয়ার কাজ কেন বারবার আটকে যাচ্ছে তা নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক দিন দুই আগেই করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে সোমবার তাপস বন্দোপাধ্যায় বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের এই পুনর্বাসন প্রকল্পের জন্য ২১৬০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা। কিন্তু তারা দিয়েছে মাত্র ৫৬০ কোটি টাকা। এদিকে এই প্রকল্পের কাজ ২০১৯ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু টাকা ও জায়গার অভাবে সেই কাজ সম্পন্ন হয়নি। তিনি আরো বলেন, এই প্রকল্প আবাসন তৈরির জন্য বেশ কয়েকটি জায়গা দেখা হয়েছিলো। যেখানে বেশকিছু বাড়ি তৈরি করা যেত। কিন্তু ইসিএল প্রতি ক্ষেত্রেই সেইসব জমির নিচে কয়লা আছে বলে সবুজসংকেত দেয়নি। যে টাকা কয়লা মন্ত্রক থেকে পাওয়া গিয়েছিল তাতে ক্ষতিগ্রস্তদের যাবতীয় সমীক্ষা থেকে শুরু করে তাদের ছবি সহ পরিচয় পত্র দেওয়ার পাশাপাশি সেই সঙ্গে প্রায় ১১ হাজার বাড়ি তৈরি করার কাজ শেষ হয়েছে।

যদিও এইসব বাড়িগুলোর পরিকাঠামোগত কিছু কিছু কাজ বাকি থাকায় তা বিলি করা যায়নি। গত বছরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রানিগঞ্জে এসে বলেছিলেন পুনর্বাসন প্রকল্প যে বাড়িগুলি কাজ শেষ হয়েছে সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পাঠিয়ে দিতে হবে। ছাতিম ডাঙ্গার ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচ জনের হাতে তিনি চাবিও তুলে দিয়েছিলেন। যদিও সেখানে পরিকাঠামোগত কিছু কাজ বাকি থাকায় তাদের পাঠানো যায় নি বলে তাপস বাবু এদিন জানান। ছাতিম ডাঙ্গার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ১৮০ পরিবারকে শীঘ্রই জামুড়িয়ার কাছে যে নতুন আবাসন গুলি তৈরি হয়েছে সেখানে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সেখানে জল ও বিদ্যুতের ব্যবস্থাও হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, যেহেতু কেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে ২০১৯ সালের শেষে। তাই নতুন করে আবার কয়লা মন্ত্রককে চুক্তি করতে হবে। আমরা বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি জেলা ও রাজ্য স্তর থেকে দিল্লিকে চিঠি লিখে অবিলম্বে ঐ চুক্তি নবীকরণ করার জন্য বলা হবে। একইসঙ্গে বকেয়া টাকা আমাদেরকে পাঠানোর জন্য বলা হবে। আমরা অন্ডালের কাছে ১৬০ কোটি টাকায় যে জমি কিনেছি সেখানে আশা করা যায় প্রায় ২০ হাজার ঘর তৈরি করে ফেলা সম্ভব হবে। দিল্লি বিপুল পরিমাণ টাকা আটকে রেখে কি করে পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজ শেষ করতে বলছে তা আমাদের কাছে বিস্ময়ের বলে তাপস বন্দোপাধ্যায় জানান। ঐ বৈঠকে জেলা ও পুলিশের
আধিকারিকদের পাশাপাশি আবাসন দপ্তর ও ইসিএলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।


অন্যদিকে ঐ বৈঠকে উপস্থিত থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিক বলেন, বারাবনি বা জামুরিয়াতে যে বাড়ি গুলি তৈরি করা হয়েছে সেই জমির নিচে কয়লা না থাকায় আমাদের এনওসি দিতে কোন অসুবিধে হয়নি। আগে যে সব জায়গা বাছাই করা হচ্ছিল তার নিচে কয়লা ছিল বলেই সমস্যা হচ্ছিল । আর বকেয়া টাকার বিষয়টি এখান থেকে দেখা হয়না। এটা দিল্লি থেকে দেখা হয়। স্বাভাবিকভাবেই রাজ্য সরকার দিল্লিকে চিঠি লিখলে তার উত্তরটা পাওয়া যাবে। এ নিয়ে আমরা কিছু মন্তব্য করতে পারবোনা।


প্রসঙ্গতঃ, আসানসোলের সিপিএমের সাংসদ থাকাকালীন প্রয়াত হারাধন রায় এই আসানসোল রানিগঞ্জ কয়লাখনি এলাকায় ধস কবলিত মানুষদের জন্য পুনর্বাসন চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিলেন। দীর্ঘ আইনী লড়াইয়ে পরে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্র সরকারকে পুনর্বাসন প্রকল্প করার নির্দেশ দিয়েছিলো।

News Editor

Mr. Chandan | Senior News Editor Profile Mr. Chandan is a highly respected and seasoned Senior News Editor who brings over two decades (20+ years) of distinguished experience in the print media industry to the Bengal Mirror team. His extensive expertise is instrumental in upholding our commitment to quality, accuracy, and the #ThinkPositive journalistic standard.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *