নুনিয়া নদীর উপর অবৈধ ভাবে তৈরী হওয়া সেতু ভাঙলো সেচ দপ্তর
বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্য, আসানসোল, ৮ জুলাইঃ আসানসোল পুরনিগমের ১৪ ও ১৫ নং ওয়ার্ডের মাঝে নুনিয়া নদীর উপর একটি অবৈধ সেতু বৃহস্পতিবার বিশাল পুলিশবাহিনীর উপস্থিতিতে সেচ দপ্তরের ইঞ্জিনিয়াররা পুরনিগমের ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে নিয়ে ভেঙ্গে দিলেন। এই অবৈধ নির্মাণ ভেঙে দেওয়ার পরে আসানসোল পুরনিগমের পুর প্রশাসক অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলছেন কোথাও কোনভাবে কোনরকম অবৈধ নির্মাণ মেনে নেওয়া যাবে না। একই সঙ্গে যারা জমি দখল করছে বা মানুষকে ভুল বুঝিয়ে জমির প্লট বিক্রি করছে তাদের বিরুদ্ধেও জেলা পুলিশ ও প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে।
আসানসোল পুরনিগম সূত্রে জানা গেছে, ১৪ ও ১৫ নং ওয়ার্ডের মাঝে তপসি বাবার মন্দিরে কাছে নুনিয়া নদীর উপর একটি পাকা সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল সম্পূর্ণ অবৈধ বা বেআইনি ভাবে। অভিযোগ, এক জমি ব্যবসায়ী ঐ নদীর উল্টো দিকে প্লট করে জমি বিক্রি করার জন্য এই নদীর উপরে অবৈধ ভাবে পাকা কংক্রিটের সেতু নির্মাণ করেছিলেন। এই খবর পাওয়ার পরে পুরনিগমের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার আরকে শ্রীবাস্তবকে তদন্তে পাঠানো হয়।
ইঞ্জিনিয়ার বলেছিলেন, নদীর উপরে এভাবে কোন সেতু নির্মাণ করা যায় না। এতেই নদীর জল চলাচলেও সমস্যা তৈরি হবে। এমনকি সরকারের সার্বিক অনুমতি ছাড়াই কোন জমিও এভাবে প্লট করে বিক্রি করা যায় না । পুরনিগমের পক্ষ থেকে সেই সময় সেতুটি ভাঙ্গার চেষ্টা করা হয়েছিলো
কিন্তু, অভিযোগ ঐ জমি ব্যবসায়ী দূরে থেকে এলাকার কিছু মানুষকে দিয়ে অবরোধ করিয়েছিল। ফলে সেদিন পুর কর্তৃপক্ষ সেতু না ভেঙে ফিরে আসে । এর পরেই গোটা বিষয়টি পুরনিগমের তরফে রাজ্যের সেচ দপ্তরকে জানানো হয়। পাশাপাশি পুলিশের কাছে অভিযোগ জমা পড়ে।
জেলা প্রশাসনও সেচ দপ্তরের সঙ্গে কথা বলে।
বৃহস্পতিবার সেচ দপ্তরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সঞ্জয় সিংয়ের নেতৃত্বে কিছু কর্মী, পুরনিগমের একটি বিশেষ দল, আসানসোল উত্তর থানার ওসি মনোজিৎ ধারার নেতৃত্বে এক বিশাল পুলিশবাহিনী ও আসানসোলের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট এলাকায় আসেন। সবার উপস্থিতিতে ঐ অবৈধ সেতুটি ভেঙে দেওয়া হয়। নদীর জল এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে সহজেই যাতে যেতে পারে তারও ব্যবস্থা করা হয়। এদিন অবশ্য কেউ সামনে আসেনি বা কোনো রকম বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেননি।
পুর প্রশাসক অমর চট্টোপাধ্যায় বলেন, অবৈধ সেতু ভাঙার মধ্যে শুধু কাজ শেষ হল তাই নয়। এরপরেই যে জমি বিক্রির অভিযোগ উঠেছে তার বৈধতা নিয়েও আমরা তদন্ত করবো। সঙ্গে অবশ্যই রাজ্যের ভূমি রাজস্ব দপ্তরের আধিকারিকরা থাকবেন। অমর বাবু আরো বলেন, ঐ এলাকার বাসিন্দাদের মনে রাখতে হবে এভাবে জমি চলে গেলে ও এমন অবৈধ সেতু তৈরি হলে ঐ এলাকার নদীর ঘাট ছোট হয়ে যাবে। আসানসোলে কয়েকদিন আগেই একটি পুকুর ভরাট করার খবর পেয়ে মন্ত্রী মলয় ঘটক ও আসানসোল দূর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার একযোগে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন । সেই আশ্বাসের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সেখান থেকে বেশকিছু ট্রাক্টর ও পোকল্যান মেশিন উদ্ধার করা হয়।
উল্লেখ্য, দিন কয়েক আগে রাজ্যের আইন ও পূর্ত দপ্তরের মন্ত্রী মলয় ঘটক হুল দিবসের অনুষ্ঠানে আদিবাসীদের সভায় বলেছিলেন কোনভাবেই আদিবাসী বা অন্য কারোর জমি দখলের খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানান। তারা ব্যবস্থা নেবে। জমি মাফিয়াদের যে কোনো মূল্যে আটকানোর জন্য মন্ত্রী সেদিন আশ্বাস দিয়েছিলেন।