লকআপে মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে ডিডি,বরাকর কান্ডের তিনদিন পরেও গোটা এলাকা থমথমে
বেঙ্গল মিরর, .রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ৮ জুলাইঃ আসানসোলের কুলটি থানার বরাকর কান্ডে আরো তিন পুলিশ অফিসারকে বৃহস্পতিবার সাসপেন্ড করা হলো। এর আগে গত মঙ্গলবার সকালে সাসপেন্ড করা হয়েছিলো আরো দুই পুলিশ অফিসারকে। এই নিয়ে পুলিশ লকআপে মৃত্যুর ঘটনায় মোট ৫ পুলিশ অফিসারকে সাসপেন্ড করা হলো। একই সঙ্গে এই ঘটনায় বরাকর ফাঁড়ির ৫ সিভিক ভলেন্টিয়ারকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের বরাকর ফাঁড়ির পুলিশ লকআপে মৃত্যুর ঘটনায় ৫ পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতি, দুর্ব্যবহার ও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে বরখাস্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের তরফে জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, ৫ সিভিক ভলেন্টিয়ার এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলো তাদেরকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এই মর্মে ৬ জুলাই কুলটি থানায় দায়ের হওয়া মামলার ভিত্তিতে (নং ৩২৬/২১) তদন্ত করা হচ্ছে। সেই তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই নির্দেশ কার্যকর থাকবে।
পরে এই প্রসঙ্গে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের ডিসিপি (পশ্চিম) অভিষেক মোদি এদিন বলেন, লকআপে মৃত্যুর ঘটনার গোয়েন্দা দপ্তর বা ডিডি তদন্ত করছে। এছাড়াও সাসপেন্ড হওয়া ৫ পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করা হচ্ছে। একইভাবে তদন্ত করা হচ্ছে ৫ সিভিক ভলেন্টিয়ারের ভূমিকা নিয়েও।
তিনি আরো বলেন, যে যুবকের মৃত্যু হয়েছে তার পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও যে যুবক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে তার চিকিৎসার দায়িত্ব পুলিশ দেখছে।
প্রসঙ্গতঃ, মঙ্গলবার সকালে লকআপে চুরির ঘটনা জড়িত থাকার সঙ্গে বাড়ি থেকে তুলে আনা বরাকরের বাসিন্দা মহঃ আরমান আনসারির মৃত্যু প্রকাশ্যে আসতে গোটা এলাকা অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থল থেকেই আসানসোল দূর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার অজয় ঠাকুর বরাকর ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই অমরনাথ দাস ও কুলটি থানার এসআই প্রশান্ত পালকে সাসপেন্ড করেন। বৃহস্পতিবার সকালে আরো যে তিনজনকে সাসপেন্ড করা হয় তারা হলেন এসআই সুভাষ দাশ, সশস্ত্র পুলিশ বা আমর্ড ফোর্সের এসআই আলি রাজা ও এএসআই সরোজ কুমার তিওয়ারি। যে ৫ সিভিক ভলেন্টিয়ারকে বরখাস্ত করা হয়েছে তারা হলো রবি রাম, কার্তিক রুইদাস, পুষ্পল বন্দোপাধ্যায় , মন্নু যাদব এবং রঞ্জিত সাউ।
উল্লেখ্য, ঘটনার তিনদিন পরেও বৃহস্পতিবার বরাকরের চেহারা স্বাভাবিক হয়নি। গোটা এলাকায় একটা চাপা উত্তেজনা রয়েছে। গোটা ঘটনাকে নিয়ে থমথমে পরিবেশ রয়েছে। তবে নতুন করে যাতে কোন ঘটনা না ঘটে তারজন্য পুলিশের টহল রয়েছে। বেশকিছু জায়গায় পুলিশ পিকেটিং করা হয়েছে।
এদিকে, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে বুধবার রাতে ময়নাতদন্ত হয়ে আরমানের দেহ বরাকরে আসে। বিশাল পুলিশ বাহিনীর উপস্থিতিতে আরমানের পরিবার শেষকৃত্য করে।
অন্যদিকে, এই চুরির ঘটনায় তদন্ত করার নামে বরাকরের বাসিন্দা মহঃ আরমান আনসারি, সনোজ শ্রীবাস্তব, শ্যামল বাউরি সহ মোট ৯ জন যুবককে বরাকর ফাঁড়ির পুলিশ বাড়ি থেকে তুলে এনেছিলো। যার মধ্যে সনোজ বাড়ি ফেরেনি বলে তার পরিবারের তরফে বুধবার অভিযোগ করেছিলো। বৃহস্পতিবার সকালে সনোজের দাদা অরুণ শ্রীবাস্তব বলেন, ভাই বুধবার মাঝরাতে বাড়ি এসেছে। তাকে কুলটি থানায় আটকে রাখাছিলো। কেন তাকে এতদিন কি কারণে আটকে রাখা হয়েছিলো তা জানতে সরোজের পরিবার পুলিশের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার কথা ভাবছে। শ্যামল বাউরিকে অসুস্থ অবস্থায় পুলিশ প্রথমে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে তাকে দূর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।