শহরে আবার সাইবার ক্রাইম, ফোন পে খুলতেই মেকআপ আর্টিস্টের একাউন্ট থেকে উধাও ৫৮ হাজার টাকা
বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ১৫ জুলাইঃ আসানসোল শহরে আবার সাইবার ক্রাইম। এবার সাইবার ক্রাইমের শিকার হলেন আসানসোল দক্ষিণ থানার জিটি রোডের গোপালপুরের বাসিন্দা পেশায় মেকআপ আর্টিস্ট অভিশ্রুতি মাজি। তিনি নিজের পার্সোনাল আইডি দিয়ে ফোন পে খুলতেই মুহুর্তেই ব্যাঙ্ক একাউন্ট থেকে উধাও হয়ে যায় ৫৮ হাজার টাকা। জানা গেছে প্রথমে ১০ টাকা তোলা হয়। পরের নবারে ৬৫০০ টাকা করে তুলে নেওয়া হয়। কোন লিঙ্ক না খোলা সত্বেও নিজের পার্সোনাল আইডি দিয়ে ফোন পে খুলতেই এইভাবে টাকা চলে যাওয়ায় রীতিমতো হতবাক অভিশ্রুতি মাজি। গোটা ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার। যে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের শাখায় তার ব্যাঙ্ক একাউন্ট ছিলো, সেখানে জানানোর পাশাপাশি তিনি আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের সাইবার সেলে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
জানা গেছে, অভিশ্রুতি মাজি শিলিগুড়িতে থাকা এক পরিচিত ডিলারের কাছ থেকে বেশকিছু প্রসাধনী সামগ্রী একটি বহুজাতিক কুরিয়ার সংস্থার মাধ্যমে নিজের বাড়িতে আনার অর্ডার দিয়েছিলেন। গত ১৩ জুলাই মঙ্গলবার সেই পার্সেল আসার কথা ছিলো। সেই কারণে তিনি সেদিন সকাল দশটার সময় ঐ কুরিয়ার সংস্থার আসানসোলের কোর্ট মোড়ের অফিসে জানতে চান, তার পার্সেলের লোকেশান কোথায় আছে। কিন্তু সেখান থেকে তাকে বলা হয়, এখান থেকে বলা যাবে না। টোল ফ্রি নম্বরে ফোন করে তা জানতে হবে। সেই মতো তিনি ঐ কুরিয়ার সংস্থার টোল ফ্রি নম্বরে ফোন করেন। কিন্তু কথা হওয়ার আগেই সেই ফোন কেটে যায়। পর মুহুর্তেই অন্য একটি আননোন নম্বর থেকে তার কাছে ফোন আসে। বলা হয়, বাড়ি ঠিকানা আপডেট করার জন্য ফোন পে থেকে ৫ টাকা তাদেরকে পাঠাতে হবে।
কিন্তু অভিশ্রুতি তা দিতে অস্বীকার করেন। তা নিয়ে ফোন করা ব্যক্তির সঙ্গে তার কথা কাটাকাটিও হয়। পরে তিনি ফোন কেটে দেন। এর মিনিট পরে অন্য একটি নম্বর থেকে তার কাছে ফোন আসে। বলা হয়, আপনি কুরিয়ার সংস্থার ডেলিভারি বয়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন। তাই তারা আপনার পার্সেল ডেলিভারি করবে না। তারা আপনার পার্সেল একটি বহুজাতিক অনলাইন ডেলিভারি সংস্থায় ট্রান্সফার করে দিয়েছে। এখন সেখান থেকে তা আপনাকে নিতে হবে। বৃহস্পতিবার অভিশ্রুতি মাজি বলেন, আমি জানতে চাই, কেন এমনটা হবে? যে কুরিয়ারে আমি অর্ডার দিয়েছি, তারা তো আমার বাড়িতে পাঠাবে। অনেক টাকার জিনিস থাকায়, আমি কথা না বাড়িয়ে জানতে চাই কি করতে হবে? তখন ঐ ব্যক্তি বলেন, কিছু করতে হবে না। শুধু কিছু নিয়ম মানতে হবে।
আমাকে বলা হয় ” এনি ডেস্ক ” নামে এ্যাপ ডাউনলোড করতে। আমি তা করি। পরে আমার কাছে ৯ সংখ্যার একটি ওটিপি আসে। আমি তা ঐ ব্যক্তিকে শেয়ার করি। আমার ফোনে একটা লিঙ্ক আসে। কিন্তু আমি সেটা খুলনি। পরে আমাকে ঐ ব্যক্তি বলে, দেখে নিন, আপনার ফোন পে থেকে কোন টাকা কাটা যায় নি তো? আমি বলি, না। তারপরও ঐ ব্যক্তি বলে ভালো করে দেখে নিন। এবার আমার সন্দেহ হওয়ায়, আমি আমার পার্সোনাল আইডি দিয়ে ফোন পে খুলি। আমি কথা বলতে বলতে দেখতে পাই মিনিট খানেকের মধ্যে আমার একাউন্ট থেকে প্রথমে ১০ টাকা ও পরের নবারে ৬৫০০ টাকা করে তুলে নেওয়া হলো। পরক্ষণেই আমি বুঝতে পারি যে, লিঙ্ক না খুললেও, ওদের ফাঁদে পা দিয়ে আমি আমার ফোন পে খুলে ফেলেছি। কিন্তু তখন আমার কিছু করার নেই। গোটা ঘটনার কথা আমি ব্যাঙ্কে জানানোর পাশাপাশি, আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের সাইবার সেলে লিখিত অভিযোগ করেছি।
পুলিশ জানায়, অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তদন্ত করা হচ্ছে । প্রসঙ্গতঃ, বেশকিছু দিন আগে, রানিগঞ্জের এক কলেজ পড়ুয়া দিল্লি থেকে বই আনাতে গিয়ে একইভাবে সাইবার ক্রাইম চক্রের হাতে প্রতারণার শিকার হয়ে ৭৫ হাজার টাকা খুইয়েছেন।
এদিকে বারবার এইভাবে সাধারণ মানুষেরা প্রতারণার শিকার হওয়ায় চিন্তিত পুলিশ প্রশাসন। আধিকারিকরা বলেন, আমরা এতো সচেতনতার প্রচার করছি। সবাইকে সতর্ক করছি। তারপরেও এই ধরনের অপরাধে লাগাম টানা যাচ্ছে না।
আসানসোলে বসে অনলাইন প্রতারণা, আন্তঃরাজ্য চক্রের হদিশ রেলপার এলাকায়, ধৃত ৭