Bengali NewsFEATUREDLatestWest Bengal

বাংলার মেয়েকেই প্রধানমন্ত্রী চাই : গুজরাট সহ ৭ রাজ্যে ২১ শে জুলাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণ সম্প্রচার, লাগানো হবে জায়েন্ট এলইডি স্ক্রিন

বেঙ্গল মিরর ,সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত:
আগামী ২০২৪-এ নরেন্দ্র মোদীকে সরিয়ে দিল্লির মসনদ দখল নেওয়াই মূল উদ্দেশ্য এবং পাখির চোখ তৃণমূল কংগ্রেসের সেটি আসন্ন বাদল অধিবেশনে পরিষ্কার করে দিতে চান তৃণমূল নেতৃত্ব। বাকি বিরোধী ঐক্যের পরোয়া না করেই লোকসভার অধিবেশনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রধানমন্ত্রী পদে দেখতে চাওয়ার স্লোগান তোলা হবে তৃণমূলের তরফ থেকে। এমনটাই খবর পাওয়া যাচ্ছে শাসকদল সূত্রে।

আগামী ২১ জুলাই শহিদ দিবস অনুষ্ঠান উপলক্ষে একাধিক রাজ্যে মমতার ভাষণের সম্প্রচার করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। তালিকায় সবার প্রথমেই নাম রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাটের। সূত্রের খবর, গুজরাটের ৩২ টি জেলায় মোট ৫০ টি জায়ান্ট এলইডি স্ক্রিন লাগিয়ে মমতার ভাষণ শোনানো হবে। জায়ান্ট স্ক্রিন লাগানো হবে দিল্লিতে। এর পাশাপাশি যোগী আদিত্যনাথের রাজ্য উত্তর প্রদেশের একাধিক জেলাতেও জায়ান্ট স্ক্রিনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। একই আয়োজন থাকছে তামিলনাড়ু, পঞ্জাব এবং ঝাড়খণ্ডেও। এ ছাড়া উত্তর-পূর্বের দুই রাজ্য অসম ও ত্রিপুরা যে এই ব্যবস্থা থাকছে তা আগেই জানানো হয়েছিল তৃণমূল সূত্রে। ফলে সবমিলিয়ে অন্তত ৬ থেকে ৭ টি রাজ্য যে মমতার ২১ জুলাইয়ের ভাষণ শুনতে চলেছে তা বলাই যায়। গুজরাটে মমতার ভাষণ সম্প্রচার উপলক্ষে ইতিমধ্যেই গুজরাটিতেও প্রচার শুরু করেছে তৃণমূল।

শনিবার একটি গুজরাটি পোস্টার প্রকাশ্যে আনা হয়েছে রাজ্যের শাসকদলের পক্ষ থেকে। দিল্লি, অসম, ত্রিপুরা, উত্তর প্রদেশের পাশাপাশি গুজরাট, পঞ্জাব, ঝাড়খণ্ডেও মমতার ভাষণ শোনার ব্যবস্থা হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। ফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জাতীয় স্তরে নরেন্দ্র মোদীর বিকল্প হিসেবে তুলে ধরার সর্বোচ্চ চেষ্টা যে তৃণমূল কংগ্রেস চালাচ্ছে, তা একপ্রকার পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের নজরে।

বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের রেকর্ড মার্জিনে জয়ের পর এই প্রথমবার সংসদে অধিবেশন বসতে চলেছে। তাই বাংলার মানুষের রায়কে হাতিয়ার করে এই মঞ্চেই মমতার একক সাফল্যের দিকে দেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছেন তৃণমূল সাংসদেরা। সূত্রের খবর, তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এ বার লোকসভা অধিবেশন চলাকালীন ‘বাংলার মেয়েকেই প্রধানমন্ত্রী চাই’ স্লোগান তোলা হবে অধিবেশন কক্ষে। তার জন্য দলীয় সাংসদদের ইতিমধ্যেই প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

একসময় লোকসভায় তৃণমূল তৃতীয় বৃহত্তম দল ছিল, সাংসদ সংখ্যা ছিল ৩৪। কিন্তু এখন তা কমে হয়েছে ২২। জয়ী ২২ সাংসদের মধ্যে দু’জন আবার ইতিমধ্যেই গেরুয়া ঝাণ্ডা হাতে তুলে নিয়েছেন। ফলে সংখ্যার অনুপাতে তৃণমূলের ‘বাংলার মেয়েকেই প্রধানমন্ত্রী চাই’ স্লোগান হয়তো খুব একটা প্রভাব ফেলবে না। কিন্তু এর রাজনৈতিক প্রভাব অস্বীকার করতে পারছেন না রাজনীতির সচেতকরা। এর প্রধান কারণ দু’টো। প্রথমত, জাতীয় স্তরে এই মুহুর্তে মোদী বিরোধী মুখের অভাব। দ্বিতীয়ত, বাংলায় বিজেপি সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ সত্ত্বেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের অবিশ্বাস্য জয়। এই দুই-ই মমতার গুরুত্ব অনেকাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে জাতীয় রাজনীতিতে।

লোকসভায় এই স্লোগান উঠলে আপতভাবে তার কোনও প্রভাবই পড়বে না, এটা যেমন ঠিক। একই সঙ্গে এটাও ঠিক যে, লোকসভা অধিবেশনে এই স্লোগান উঠলে এবং গোটা দেশ তা দেখলে জাতীয় রাজনীতিতে যে বিরোধী শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা পূরণের অন্তত একটা সম্ভাবনা তৈরি হবে। সংসদ অধিবেশন চলাকালীন আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে দিল্লি যেতে পারেন, এমনটাও খবর। বঙ্গে হ্যাটট্রিক করার পর এটাই তাঁর প্রথম দিল্লি সফর হবে। অন্তত ৫-৬ দিনের এই সফরে প্রচার মাধ্যমের সমস্ত আলো যে মমতার দিকেই থাকবে, তা হলফ করে বলাই যায়। এই সফরের মাঝেই যদি লোকসভায় ‘বাংলার মেয়েকেই প্রধানমন্ত্রী চাই’ স্লোগান ওঠে, তাহলে রাজনৈতিকভাবে আরও ফায়দা হতে পারে তৃণমূলের। মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চাই’ থেকে ‘বাংলার মেয়েকেই প্রধানমন্ত্রী চাই’, এই যাত্রাপথ যে খুব একটা সহজ হবে না তৃণমূল নেতৃত্ব সেটা বিলক্ষণ বোঝেন। আর তাই নরেন্দ্র মোদীর চোখে চোখ রেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবেন, সেটা যেন প্রতি পদক্ষেপের মাধ্যমেই বুঝিয়ে দিচ্ছে তৃণমূল।
এখন আগামী ২১ শে জুলাই এর মঞ্চকে ব্যবহার করে তৃণমূল জাতীয় রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলতে পারে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে রাজনৈতিক মহল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *