KULTI-BARAKAR

উঠে আসছে নানা প্রশ্ন, কাঠগড়ায় পুলিশের ভূমিকা, কুলটির লছিপুরের নিষিদ্ধ পল্লী থেকে নাবালিকা উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেফতার ২৮

বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য ও রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ৬ আগষ্টঃ ওয়েস্ট বেঙ্গল কমিশন ফর প্রোটেকশন অব চাইল্ড রাইটসের চেয়ারপার্সনের ( ডবলুসিপিসিআর) উপস্থিতিতে পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের কুলটি থানার নিয়ামতপুরের লছিপুর যৌন পল্লীতে বুধবার রাতে একটি বড়সড় অভিযান চালানো হয়েছিলো। বিভিন্ন জায়গা থেকে অপ্রাপ্তবয়স্ক বা নাবালিকাদের পাচার করে নিয়ে এসে এই নিষিদ্ধ পল্লীতে যৌন ব্যবসা করানো হচ্ছে এমন অভিযোগ উঠেছিলো। বুধবার রাতের অভিযানে ৪৫ জন নাবালিকাকে উদ্ধার করা হয়েছিলো। যার মধ্যে একজন বাংলাদেশীও ছিলো। যদিও পরে পুলিশ খাতায় উদ্ধারের সংখ্যা দেখানো হয় ২০ জন। এর মধ্যে বাংলাদেশীকে আসানসোলের একটি হোমে রাখা হয়েছে। বাকি ১৯ জনকে সিডবলুসি বা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির মাধ্যমে বর্ধমানের হোমে পাঠানো হয়।

লছিপুরের নিষিদ্ধ পল্লী

পুলিশের দাবি, বাকিদের বিরুদ্ধে তেমন কিছু না থাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এই অভিযানে পুলিশ প্রথমে ২৫ জনকে গ্রেফতার করেছিলো। বৃহস্পতিবার ধৃতদের আসানসোল আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের জামিন নাকচ করে জেল হাজতের নির্দেশ দেন। পরে আরো ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। শুক্রবার তাদের আসানসোল আদালতে তোলা হয়। এদিন কুলটি থানার পুলিশের তরফে ধৃতদের মধ্যে ৭ জনকে এই ঘটনার তদন্তে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে। কুলটি থানার পুলিশের তরফে এই ঘটনায় বেশ কয়েকটি ধারায় মামলা করা হয়েছে। যেখানে পাচার করে নিষিদ্ধ পল্লীতে এনে জোর করে যৌন ব্যবসায় নামানোর অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের এই মামলায় তদন্তকারী অফিসার বা আইও হলেন আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের এসিপি (পশ্চিম) ওমর আলি মোল্লা।


এদিন আসানসোলের আদালতে এই মামলার আইনজীবীদের সওয়াল জবাবে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠে এসেছে। একইভাবে উঠে আসে পুলিশের ভূমিকাও। ধৃতদের হয়ে সওয়াল করা অন্যতম আইনজীবী শেখর কুন্ডু বিচারকের সামনে বলেন, বুধবার রাতের অভিযানে ঐ নিষিদ্ধ পল্লী থেকে মাইনোর বা নাবালিকা বলে ৪৫ জনকে উদ্ধার করা হয়েছিলো। কিন্তু পুলিশ খাতায় কলমে দেখাচ্ছে ২০ জনকে। তাহলে বাকিরা কোথায় গেলো? তিনি আরো বলেন, উদ্ধার হওয়া মেয়েরা যে মাইনোর, তা কি করে জানা গেলো? উদ্ধার হওয়ার পরে তাদের কি বয়স পরীক্ষা করা হয়েছে? তা করা হলে তার বিস্তারিত রিপোর্ট কোথায়? যাকে বাংলাদেশী বলা হচ্ছে, তার সত্যতা পুলিশ কি করে জানলো? এছাড়া ঐ নিষিদ্ধ পল্লীতে সারা দিন রাত পুলিশ পাহারা থাকে। তাহলে পাচার করে মেয়েদের সেখানে কি করে ঢোকানো হলো? পুলিশ কি তা দেখেনি? পাশাপাশি ঐ নিষিদ্ধ পল্লীতে আসা মেয়েদের দেখার মতো কোন বোর্ড বা কমিটি নেই। সবশেষে শেখরবাবু ধৃতদের পুলিশ রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিন দেওয়ার আবেদন করেন। এর পাল্টা সওয়ালে প্রধান সরকারি আইনজীবী বা পিপি স্বরাজ ওরফে বাচ্চু চট্টোপাধ্যায় বলেন, বাংলাদেশী মেয়ে নিজেই বলেছে, তার বাড়ি বাংলাদেশে। পুলিশ তার খোঁজ করছে। অভিযানের পরে সব আইন মেনে করা হয়েছে। তিনি জামিনের বিরোধিতা করেন।


পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বেশ কিছু দিন আগে মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের সুপ্রভা পঞ্চশীলা মহিলা উদ্যোগ সমিতির তরফে আসানসোল মহিলা থানায় অভিযোগ করে বলে, তাদের সংগঠনের ৫ জন মেয়েকে পাচার করে আনা হয়েছে কুলটি থানার নিয়ামতপুরের লছিপুর নিষিদ্ধ পল্লীতে। একই অভিযোগ করা হয় ডবলুসিপিসিআরের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তীর কাছেও। এরপর আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ সেই অভিযোগের তদন্ত শুরু করে। আর এর পরেই বুধবার রাতে পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসন ও আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তীর উপস্থিতিতে এই অভিযান চালায়। তাতে পশ্চিম বর্ধমানের জেলা শাসক বিভু গোয়েল ও আসানসোল দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার অজয় ​​কুমার ঠাকুরের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যায় আধিকারিক ও পুলিশ বাহিনী ছিলো।


অভিযানের পরে ডব্লিউবিসিপিসিআর চেয়ারপার্সেন অনন্যা চক্রবর্তী বলেছিলেন, আমাদের কাছে খবর ছিলো যে, এই যৌন পল্লীতে অপ্রাপ্তবয়স্কদের দিয়ে ব্যবসা করানো হচ্ছে। তার ভিত্তিতে তদন্ত করে এই অভিযান চালানো হয়েছে । এখান থেকে উদ্ধার হওয়া মেয়েদের মধ্যে অধিকাংশই অপ্রাপ্তবয়স্ক। তাদের পরীক্ষা করার পরে বাড়ির খোঁজ করে যার যার বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।
জেলা শাসক বিভু গোয়েল ও আসানসোল দূর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার অজয় ঠাকুর বলেছিলেন, কিছু মেয়েকে পাচার করে এখানকার নিষিদ্ধ পল্লীতে আনা হয়েছে একটি অভিযোগ করা হয়েছিলে । কমিশনের তথ্যের ভিত্তিতে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের একটি দল গঠন করে তদন্ত করা হচ্ছিলো । তার পরেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখান থেকে উদ্ধার হওয়া মেয়েদের কি ভাবে আনা হয়েছে তার তদন্ত করা হবে। কমিশনের নির্দেশ মতোই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।


প্রসঙ্গতঃ, ঐ নিষিদ্ধ পল্লীর যৌন কর্মী ও তাদের পরিবারের দেখভালের জন্য দূর্বার মহিলা সমিতি আছে। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যৌন কর্মীদের দেখার জন্য একটা বোর্ড আছে। প্রয়োজনে নজরদারি আরো বাড়ানো হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *