তিন মাসে জেলায় ৭২ জনের মৃত্যু, জাতীয় সড়ক ও রাজ্য সড়কে পথ দূর্ঘটনা কমাতে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পরিকল্পনা, সচেতনতা বাড়াতে প্রচারে জোর
বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য ও রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ৫ আগষ্টঃ পশ্চিম বর্ধমান জেলায় গত তিন মাসে জাতীয় সড়ক ও রাজ্য সড়কে ৭২ জনের পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে। বিভিন্ন পথ দূর্ঘটনায় এই তিনমাসে অনেকেই আহত হয়েছেন।
এবার এই পথ দুর্ঘটনা কমাতে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ট্রাফিক দপ্তরের পক্ষ থেকে জাতীয় সড়কের আশপাশের গ্রামগুলোতে মাইকে প্রচার করা হচ্ছে। তাতে বলা হচ্ছে, গ্রামবাসীরা যেন তাদের গবাদি পশু সামলে রাখেন। গবাদি পশুগুলিকে যেন রাস্তায় না ছেড়ে দেওয়া হয় বা তারা চলে না আসে। একই সঙ্গে এর আগে এইসব রাস্তার কাছাকাছি যেসব খাটাল আছে তাদের কাছে নোটিশ পাঠিয়ে বলা হয়েছে যাতে তাদের গরু মোষ গুলি রাস্তায় না চলে আসে তা দেখার জন্য। পুলিশের এই অভিনব উদ্যোগ ও প্রচারে খুশি এইসব রাস্তা দিয়ে চলাচল করা বাইক আরোহী বা গাড়ি চালকরা। কেননা যে ৭২ জন পথ দুর্ঘটনায় গত তিন মাসে মারা গেছে বা তার আগেও অনেক পথ দুর্ঘটনা ঘটেছে তার অন্যতম কারণ হলো আচমকা রাস্তায় গরু চলে আসা।
আরো জানা গেছে, আসানসোলেট কুলটি, আসানসোল উত্তর ও জেলার অন্যান্য থানা এলাকায় যেখান দিয়ে জাতীয় সড়ক বা রাজ্য সড়ক গেছে সেখানে রাস্তার উপরে চলে ২৭ টি গরুকে দুই দিনে পুলিশ আটক করে বিভিন্ন গোসালায় পাঠিয়েছে। তার একটি রিপোর্ট মহকুমাশাসককে জানানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে, এইসব গরুর মালিকদের সচেতন হওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে পুলিশের পক্ষ থেকে আইন অনুযায়ী মামলাও করা হচ্ছে। যেমন কুলটি থানা এলাকায় ২ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে বেশ কয়েকটি গ্রামেও এই ধরনের মাইকে প্রচার করা হয় মঙ্গলবার ও বুধবার। এই এলাকায় চারটি গরু পুলিশ আটক করে গোশালায় রেখেছে। বিষয়টি কুলটি ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে মহকুমা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। একইভাবে উত্তর আসানসোলের কয়েকটি গরুকে ধরা হয়েছে। সেখানেও মাইকে প্রচার চলছে।
আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ট্রাফিক বিভাগের ডিসিপি আনন্দ রায় বলেন, পুলিশের পক্ষে মাইকে করে জেলার সব জায়গায় জাতীয় সড়ক বা রাজ্য সড়কে গরুগুলি যাতে না আসে সেই প্রচার করা হচ্ছে মানুষকে সচেতন করার জন্য। বিশেষ করে গরুর মালিকদের এইসব সড়কের পাশে বেশ কিছু ঘাটাল আছে। যেখানে ইতিমধ্যেই আমরা তাদের নোটিশ পাঠিয়েছি। যাতে তাদের গরু রাস্তায় না চলে আসে। তাছাড়াও যেসব ধাবা বা হোটেলে রাতে বড় বড় ট্রাক আসে। গাড়িগুলিকে রাস্তায় দাঁড় করানো হয়। সেইসব ধাবা ও হোটেলগুলিকেও আমরা নোটিশ দিয়েছি। বলা হয়েছে, যাতে রাস্তা থেকে পাশে নামিয়ে ট্রাক দাঁড় করানো হয়। কেননা অনেক সময় দেখা গেছে ঐসব দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনে গাড়ি এসে ধাক্কা মারে ও তাতে দুর্ঘটনা ঘটে ।এছাড়াও আমরা হেলমেটহীন বাইক আরোহীদের ক্ষেত্রে বেশি মাত্রায় ধরাধরি শুরু করেছি। তাদের সচেতন করার জন্য প্রচারও করা হচ্ছে। কেননা অনেকেই দুর্ঘটনায় মারা যান হেলমেট না থাকার কারণে, এটাও বোঝানো হচ্ছে।
সম্প্রতি একাধিক দুর্ঘটনার পরে তদন্ত করে দেখা গেছে, রাস্তার যেখানে আলোর খুব প্রয়োজন সেখানে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোথাও কোথাও বড় বড় গাছ যেগুলো দৃশ্যমানতা হয় না সে ক্ষেত্রে আমরা বনদপ্তরের সহযোগিতা নিয়ে গাছের কিছুটা ছেঁটে দিয়েছি। কোথাও কোথাও রেল এলাকায় আন্ডারপাস, চৌরঙ্গির মোড় এলাকায় গর্ত আছে সেগুলিও রেল ও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে দেখা ও সংস্কার করার জন্য। তিনি আরো বলেন, এই ধরনের প্রচার ও পরিকল্পনায় দুর্ঘটনার সংখ্যা অবশ্য সামান্য হলেও কমছে। যেমন গত মে মাসে ২৬ জন, জুন মাসে ২৪ জন ও জুলাই মাসে ২২ জন পথদুর্ঘটনায় মারা গেছেন। পুলিশের প্রধান উদ্দেশ্য মৃত্যুর হার কমানো। পাশাপাশি দুর্ঘটনা কমাতে মানুষকে আরও সচেতন করে তোলা। সেজন্যই পুলিশের তরফে এই ধরনের প্রচার চলছে। আগামী দিনে দূর্ঘটনা কমাতে আরো কিছু করা যায় কিনা তারও চিন্তা ভাবনা চলছে।