শিল্পপতির অপহরণের ঘটনা, গুজরাটের সেন্ট্রাল জেল থেকে কুখ্যাত পাপ্পু চৌধুরীকে ট্রানজিট রিমান্ডে আসানসোলে আনলো সিআইডি
বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য ও রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ৭ আগষ্টঃ আসানসোলের কুলটি থানার বরাকরের বাসিন্দা শিল্পপতি তেজপাল সিংকে কারখানার সামনে থেকে অপহরণের ঘটনায় গুজরাটের সুরাটের লাজপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে আন্তঃ রাজ্য কুখ্যাত অপহরণকারী পাপ্পু চৌধুরিকে ট্রানজিট রিমান্ডে শনিবার আসানসোলে নিয়ে এলো রাজ্য পুলিশের সিআইডি। এদিনই তাকে আসানসোল আদালতে পেশ করে ১৪ দিনের জন্য হেফাজতে চায় সিআইডি। বিচারক তার জামিন নাকচ করে ১৪ দিনে সিআইডির হেফাজতের আবেদন মঞ্জুর করেছেন। আরো জানা গেছে, এরপর টিআই প্যারেডের মাধ্যমে তাকে সনাক্তকরণও করানো হতে পারে।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল সালানপুর থানার দেন্দুয়া এলাকায় লোহা ও ইস্পাত কারখানার সামনে থেকে শিল্পপতি তেজপাল সিং ও তার গাড়ির চালককে অপহরণ করা হয়েছিলো। সেখান থেকে তাদেরকে ঝাড়খন্ড ও বিহারে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। ঘটনার ৩৫ দিন পর মুক্তিপণ দিয়ে শিল্পপতি ও তার চালক বাড়ি ফিরে আসে। এই অপহরণের ঘটনায় এর আগে বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদেরকে জেরা করে এই অপহরণ ঘটনায় মাস্টার মাইন্ড হিসাবে গুজরাটের সুরাটের লাজপুর সেন্ট্রাল জেলে বন্দী আন্তঃরাজ্য অপহরণের কিংপিন পাপ্পু চৌধুরির কথা জানতে পারে সিআইডি। তাকে নিজেদের হেফাজতে নিতে সিআইডি ট্রানজিট রিমান্ডে শনিবার তাকে গুজরাট থেকে আসানসোলে আনে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অপহরণ হওয়ার পরে ২ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে তেজপাল সিং গাড়ি চালক বাড়ি ফিরে এসেছিল। সেই টাকার মধ্যে দেড় কোটি টাকা পাপ্পু চৌধুরী নাকি একাই নিয়েছিল বলে এর আগে গ্রেপ্তার হওয়া অপহরণকারীরা পুলিশকে জানিয়েছে। বিহারের অপহরণ চক্রের কিংপিন চন্দন সোনারের সঙ্গে পাপ্পু চৌধুরীর সম্পর্ক আছে। তারা একে অপরের ডান হাত বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। চন্দনকে এই ঘটনায় আগেই বিহার থেকে সিআইডি গ্রেফতার করেছে। সিআইডির অফিসারদের আশা, পাপ্পু চৌধুরীকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করলে এই কান্ডে আরও অনেক তথ্য তারা জানতে পারবেন।
ইতিপূর্বে চন্দন বা অন্যান্য গ্রেপ্তার হওয়া অপহরণকারীরা পুলিশকে জানিয়েছে, তেজপালকে তারই গাড়ি সহ অপহরণ করে চালক রবি কুমারকে সঙ্গে নিয়ে তারা কারখানার সামনে থেকে মাইথন হয়ে পালায়। পরে তেজপালের গাড়িটি ঝাড়খন্ডে তারা ছেড়ে দেয়। অন্য একটি গাড়ি নিয়ে তারা বিহারে যায়। ৩৫ দিন পরে ২০১৯ সালের ২২ মে তেজপাল ও তার চালক রবি কুমারকে হাজারিবাগে বারহি মোড়ের কাছে তারা ছেড়ে দেয়। ২ কোটি ৬০ লক্ষ্য টাকার মুক্তিপণের বিনিময়ে তারা দুজনকে ছেড়েছিলো। ঘটনার গুরুত্ব বুঝে পুলিশের হাত থেকে এই মামলা সিআইডির হাতে যায়। এরপর বিহারের আরা জেলার বিরামপুর গ্রাম থেকে অভিষেক চৌধুরী, ঔরঙ্গাবাদ রাহুল কুমার, পাটনার অমিত কুমারকে , ঝাড়খণ্ডের রাঁচি থেকে রবিকান্ত কে, বিহারের আরা থেকে দীপক কুমারকে সিআইডি গ্রেফতার করে। গত ৬ মার্চ বিহারের জাহানাবাদ থেকে রাকেশ কুমার সিং ও গত ১০ মার্চ বিহারের অন্যতম আন্তঃরাজ্য অপহরণকারী কিংপিন চন্দন কুমার লকে মধ্যপ্রদেশের সিংরৌলি থেকে গ্রেফতার করা হয়। চন্দন তার নিজের পরিচয় বদল করে চন্দ্রমোহন নাম দিয়ে বিহারে একটি হোটেল চালাচ্ছিল বলে সূত্র থেকে জানা গেছে ।
অন্যদিকে, গুজরাটের বলসাদ জেলার ওমোরগম থানা এলাকার থেকে প্রতিষ্টিত আবাসন ব্যবসায়ী জিতু প্যাটেলকে গত ২২ শে মার্চ অপহরণ করা হয়। ৩০ কোটি টাকা তার মুক্তিপণ হিসাবে চাওয়া হয়েছিল। পুলিশ জিতু প্যাটেলকে মহারাষ্ট্রের রত্নগিরি এলাকা থেকে উদ্ধার করে। এই ঘটনায় গুজরাট পুলিশ বিহারের গোপালপুর গ্রাম থেকে পাপ্পু চৌধুরী সহ ছয়জনকে গ্রেফতার করেছিলো । তেজপালের ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে আসানসোল জেলে থাকা চন্দন সোনার কে গুজরাট পুলিশ প্রোডাকশন ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে ঐ রাজ্যে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলো। তারপর গুজরাট পুলিশ জানতে পারে, পাপ্পু চৌধুরী গুজরাটের শুধু আবাসন ব্যবসায়ী নয়, ছত্রিশগড়ের শিল্পপতি প্রবীণ সৌম্যানিকেও ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি অপহরণ করা হয়েছিল । ১৫ দিন পরে তাকে ছেড়ে দিয়েছিল। এখন সেই পাপ্পু চৌধুরীকে গুজরাটের জেল থেকে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট দিয়ে আসানসোলে আনা হয়েছে তেজপালের অপহরণের ঘটনা কিনারা করার জন্য। আরো অনেক নতুন তথ্য আগামী ১৪ দিনে তার কাছ থেকে তারা উদ্ধার করতে পারবে বলে সিআইডির অফিসারদের ধারণা ।