রেল শহরে চাঞ্চল্য, CLW অফিসে ঢুকে মহিলা কর্মীকে বিষাক্ত তরল খাওয়ানোর অভিযোগ তিনজনের বিরুদ্ধে, তদন্তে পুলিশ
বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য ও রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ১৪ সেপ্টেম্বরঃ চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানার ওয়ার্কস ( CLW ) অফিসের ভেতরে এক মহিলা কর্মীকে জোর করে বিষাক্ত তরল খাওয়ানোর অভিযোগ উঠলো। সোমবার ঘটা এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে কারখানায়। ঘটনার কথা জানাজানি হওয়ার পরে তড়িঘড়ি ঐ মহিলা কর্মীকে চিত্তরঞ্জন কেজি হাসপাতালের আই সি ইউ ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়েছে।
জানা গেছে, চিত্তরঞ্জনের সিমজুড়ি এলাকার বাসিন্দা ৩২ বছরের মহিলা কর্মী কয়েক মাস আগে বিহারের ছাপড়া জেলার বেলা রেল হুইল এন এক্সেল প্লান্ট থেকে বদলি হয়ে চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানার ওয়ার্কস অফিসে আসে। কর্মীর বাবা এদিন বলেন, সোমবার বেলা বারোটা নাগাদ মেয়ের অফিসের লেডিস কমনরুমে হঠাৎই তাকে জোর করে ধরে নিয়ে গিয়ে তিন ব্যক্তি। সেখানে মেয়ের মুখে ঢেলে তরল বিষাক্ত কিছু খাইয়ে দেয় ঐ তিন ব্যক্তি বলে অভিযোগ। ঐ তিনজনের মুখ ঢাকা ছিল।
খবর পেয়ে আমিও কয়েক মিনিটের মধ্যে সেখানে পৌঁছে যাই। কারখানার ডেপুটি চীফ পার্সোনাল অফিসারকে বিষয়টি বলি। মুহূর্তের মধ্যে সেখানে উপস্থিত অন্যান্য কর্মীরা মেয়েকে উদ্ধার করে কেজি হাসপাতালে ভর্তি করান। নিরাপত্তার কারণে আরপিএফের ঘেরাটোপে মেয়ের চিকিৎসা চলছে। এই ঘটনার অভিযোগ সোমবার সন্ধ্যার পরে চিত্তরঞ্জন থানায় মৌখিকভাবে জানানো হয়। পরে মঙ্গলবার দুপুরে লিখিতভাবে ওই মহিলা কর্মীর অভিযোগ তার বাবা চিত্তরঞ্জন থানায় পৌঁছে দেন। তার আগে সোমবার রাতেই চিত্তরঞ্জন থানার পুলিশ বাড়িতে গিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলেছে বলে, এদিন মহিলা কর্মীর বাবা জানিয়েছেন।
জানা আক্রান্ত ঐ মহিলা কর্মীর বাবা, নিজেও চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানার একজন কর্মী। তিনি আরো বলেন, ২০০৯ সালে বিহারের ছাপড়া জেলার বেলাতে রেলের কারখানায় পিয়ন পদে যোগ দেয় আমার মেয়ে। কিন্তু ঐ কারখানার মেয়ের অফিস সুপারিনটেনডেন্ট মেয়ের সঙ্গে অত্যন্ত দুর্ব্যবহার শুরু করে। তাতে মেয়ে বাধা দেওয়ায়, এমনকি তার যৌন নির্যাতন করতে শুরু করেন। ঐ ব্যক্তি যথেষ্ট প্রভাবশালী ও বয়সেও অনেক বড়। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে গোটা ঘটনার কথা জানিয়ে বিহারের ছাপড়া জেলার মহিলা থানায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি আমরা লিখিত অভিযোগ জানাই।
গত এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে ঐ মহিলা কর্মী ও তার বাবা প্রধানমন্ত্রী, রেলমন্ত্রী ও মহিলা নিরাপত্তা দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জানান। একইসঙ্গে জাতীয় মহিলা কমিশনে তারা দেখা করে গোটা ঘটনার কথা জানিয়ে অভিযোগ করেন। তবে তার বাবা বলেন, এরপর রেল বোর্ড ও রেলের একাধিক আধিকারিক গুরুত্ব দিয়ে আমাদের অভিযোগ শোনেন। মেয়ের বদলির আবেদন মঞ্জুর করে, তাকে চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানার পাঠানো হয়। একই সঙ্গে জাতীয় মহিলা কমিশনের চাপে অভিযুক্তকে গত ২৫ জুলাই গ্রেপ্তার করা হয়। ১৩ আগস্ট তাকে আদালত জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয়।
মহিলা কর্মীর বাবা এদিন আরো বলেন, চিত্তরঞ্জনে বদলি হয়ে আসার পর এই কারখানার ডি অ্যন্ড ডি বিভাগের এক কর্মী মেয়ের কাছে বার বার আসতো ও ওখানকার অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য বলতো। হুমকিও দিত। আমার কাছে তার যাবতীয় অডিও রেকর্ডিং আছে। সব পুলিশকে দিয়েছি ও বলেছি। সেই রাগেই শেষ পর্যন্ত হয়তো তার মেয়েকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল বলে বিষাক্ত কিছু খাইয়ে মারার চেষ্টা হয়েছে বলে তার অভিযোগ। তবে নিরাপত্তায় মোড়া শহরে কিভাবে দিনের বেলায় অফিসের ভেতরে বাইরের লোক ঢুকে এমন কাজ করলো তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় আইএনটিইউসি ও সিটু নেতারাও। তারা চান, এর উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হোক। পাশাপাশি যারা দায়ী তাদের গ্রেফতার করে কঠিন শাস্তি দেওয়া হোক।
এই প্রসঙ্গে চিত্তরঞ্জন থানার ইন্সপেক্টর ইনচার্জ অতীন্দ্রনাথ দত্ত বলেন, আমাদের কাছে অভিযোগ আসার পর মহিলা কর্মীর বাড়িতে পুলিশ গিয়েছিলো। অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ঐ মহিলা এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার শারীরিক অবস্থা কথা বলার মতো হলে, তার সঙ্গে কথা বলা হবে।