ASANSOLBengali NewsRANIGANJ-JAMURIA

সরকারি উদ্যোগে ফিরলো উত্তরারখন্ডে মৃত্যু হওয়া পর্যটকদের দেহ, কান্নায় ভেঙে পড়লেন আত্মীয় স্বজনরা, সঙ্গে এলেন মন্ত্রী মলয় ঘটক

বেঙ্গল মিরর,রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত, আসানসোল, ৩০ অক্টোবরঃ কেউ যেন বিশ্বাসই করতে পারছেন না। সবার সঙ্গে হাসি মুখে কথা বলে বেড়াতে গেলেন। বলেছিলেন, ফিরে এসে বলবো কেমন বেড়ালাম। কিন্তু সেটা আর হলো না। ফিরে অবশ্যই এলেন। সাদা কাপড়ে মোড়া কফিন বন্দী হয়ে। আর শনিবার দুপুরে তা দেখতে প্রতিবেশীদের ভিড় জমলো এলাকায়। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন আত্মীয় স্বজনরা। এদিন এমনই ছবি দেখা গেলো আসানসোলের মহিশীলা কলোনি ও রানিগঞ্জের সিয়ারশোল ও টিডিবি কলেজ ক্যাম্পাসে।

পর্যটকদের দেহ


এদিন দুপুরে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে ফিরলো উত্তরাখন্ডে বেড়াতে গিয়ে খাদে গাড়ি পড়ে মৃত্যু হওয়া তিন বাঙালি পর্যটক শ্রাবণী চক্রবর্তী, কিশোর ঘটক ও চন্দনা খান ভট্টাচার্য। কলকাতা বিমানবন্দর থেকে এ্যাম্বুলেন্সে মৃতদেহ নিয়ে আসেন রাজ্যের আইন ও পূর্ত দপ্তরের মন্ত্রী মলয় ঘটক। এদিন সকালে দিল্লি বিমানবন্দর থেকে পর পর দুটি বিমানে ৫ টি মৃতদেহ ( দূর্গাপুরের বাসিন্দা এক দম্পতির মৃত্যু হয় এই দূর্ঘটনায়) কলকাতা বিমানবন্দরে এসে নামে। সেখানে সেই মৃতদেহগুলি রিসিভ করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী অরুপ বিশ্বাস ও মলয় ঘটক। রানিগঞ্জে দুই পর্যটকের বাড়িতে ছিলেন রানিগঞ্জের বিধায়ক তথা আসানসোল দূর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ বা আড্ডার চেয়ারম্যান তাপস বন্দোপাধ্যায়। আসানসোলে ছিলেন আসানসোল পুরনিগমের পুর প্রশাসক অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় ও পুর প্রশাসক বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান মানস দাস।

পর্যটকদের দেহ


আসানসোলে মলয় ঘটক বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দূর্ঘটনার খবর পাওয়ার পরেই পর্যটকদের পাশে রয়েছেন। মুলতঃ তারই উদ্যোগে উত্তরাখন্ড থেকে মৃতদেহ নিয়ে আসা হলো। খুবই দুঃখজনক ঘটনা। রাজ্য সরকার এই পরিবারগুলোর পাশে রয়েছে।
এদিকে, আসানসোল জেলা বিজেপির উপদেষ্টা মিঠু ওরফে সুব্রত ঘাঁটি এদিন বলেন, খুবই খারাপ ঘটনা। আমি মৃত ৫ জনের পরিবারকে সমবেদনা জানাচ্ছি। আর যারা আহত হয়েছেন, তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।


লক্ষী পুজোর পরের দিন এক ট্যুর অপারেটরের সঙ্গে ৩০ জনের একটি দলের সঙ্গে উত্তরাখন্ডে বেড়াতে গেছিলেন শ্রাবণী চক্রবর্তী, কিশোর ঘটক ও চন্দনা খান ভট্টাচার্য। শ্রাবনীদেবীর সঙ্গী ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ইসিএল কর্মী স্বামী যদুনাথ চক্রবর্তী। তিনি এই দূর্ঘটনায় আহত হন। এদিন যদুনাথবাবুর সঙ্গে দিল্লি থেকে আসেন ছেলে বাচ্চু ওরফে শুভজিৎ চক্রবর্তী। বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে মায়ের মৃতদেহ দেখেই নিজের চোখের আর ধরে রাখতে পারেননি শ্রাবণীদেবীর মেয়ে সুমনা চক্রবর্তী। আত্মীয় স্বজনরা বলেন, বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর নেশা ছিলো চক্রবর্তী দম্পতির।


একইভাবে, রানিগঞ্জের সিটু নেতা অকৃতদার কিশোর ঘটক এবার উত্তরাখন্ডে গেছিলেন বেড়ানোর সঙ্গী বোন দীপান্বিতা ঘটককে নিয়ে। বোন ফিরলেন দাদার কফিন বন্দী দেহ নিয়ে। কিশোরবাবু বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও এলাকায় একজন মিশুকে ও সমাজসেবী হিসাবে পরিচিত ছিলেন। অন্যদিকে, শ্রাবণী চক্রবর্তীর মতো রানিগঞ্জের টিডিবি কলেজের জুওলজি বিভাগের ল্যাব টেকনিশিয়ান চন্দনা খান ভট্টাচার্য এবার উত্তরাখন্ডে গেছিলেন স্বামী টিপু খান ভট্টাচার্যের সঙ্গে। যদুনাথবাবুর মতো একাই গাড়িতে থাকায় দীপান্বিতাদেবী ও টিপুবাবুও আহত হয়েছিলেন।


বেড়ানো শেষ করে আসানসোলের ফিরে আসার জন্য শনিবার বিকালে উত্তরাখন্ডের লালকুয়া স্টেশন থেকে ট্রেন ধরার কথা ছিলো। কিন্তু বেড়ানোর মাঝপথে গত মঙ্গলবার দুপুরের উত্তরাখন্ডের কাপকোট থানার শ্যামা গ্রামের রাস্তায় ঘটে সেই দূর্ঘটনাা। এই দলের সঙ্গে যাওয়া আসানসোল জেলা হাসপাতালের সহকারী সুপার কঙ্কন রায়ের কথায় জানা গেছিলো, সেদিন তারা তিনটি গাড়িতে কৌসানি যাচ্ছিলেন। শ্রাবণী চক্রবর্তীরা যে গাড়িতে ছিলেন, সেই গাড়িটি পেছন দিক থেকে কঙ্কনবাবুদের গাড়িতে ধাক্কা মেরে রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই ৫ জন মারা যান। আহত হন বাকি ৭ জন। কঙ্কনবাবুরাই, গাড়ি থেকে খাদে নেমে প্রথমে উদ্ধার কাজ শুরু করেন। পরে খবর পেয়ে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন আসে।
জানা গেছে, কঙ্কনবাবুরা এদিন বিকেলে লালকুয়া থেকে আসানসোল ফেরার জন্য ট্রেনে চেপেছেন। এখানে তাদের পরিবারের সদস্যরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন, তারা কখন বাড়ি ফেরেন ।

আসানসোলে গ্রেফতার ভুয়ো ডিএসপি, উদ্ধার ইসিএলের পরিচয়পত্র, রাজ্য পুলিশের লোগো লাগানো টুপি ও দুটি বাইক

উত্তরাখন্ডে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়লো গাড়ি, আসানসোলের পর্যটকদের দল, ৫ জনের মৃত্যু

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *